Logo
Logo
×

সারাদেশ

স্ত্রীকে দিয়ে দেহব্যবসা করানোর অভিযোগ

ঘাতক স্বামীর দেখানো স্থানে মেলেনি লাশ

Icon

শ্রীপুর (গাজীপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫২ পিএম

ঘাতক স্বামীর দেখানো স্থানে মেলেনি লাশ

গাজীপুরের শ্রীপুরে নারী পোশাক শ্রমিককে হত্যার পর মরদেহ তিনতলা ভবনের নিচে আরসিসি ঢালাই করে পুঁতে রাখা হয়েছে- ঘাতক স্বামীর এমন তথ্যে ব্যর্থ অভিযান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

মঙ্গলবার সকাল ১০টায় র‌্যাব-১ ও শ্রীপুর থানা পুলিশ পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়াইদেরচালা এলাকায় আব্দুল লতিফের নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের নিচতলার পেছনের অংশে আরসিসি ঢালাই ভাঙার পর ঘাতক স্বামী এবং বাড়ির মালিকের যোগসাজশে পুঁতে রাখা স্থানে মেলেনি নিখোঁজ নারীর মরদেহ। এ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয়দের মধ্যে ধূম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে।

নিহত পোশাক কারখানার শ্রমিক সুমাইয়া (১৯) কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার আমিনগঞ্জ গ্রামের মো. সেলিম মিয়ার কন্যা। মা বাবার সঙ্গে শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া গ্রামের জনৈক গিয়াস উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় আউটস্পেস নামক কারখানায় চাকরি করতেন।

র‌্যাব জানায়, গত ২৭ ডিসেম্বর গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় মোছা. তাছলিমা আক্তার বাদী হয়ে তার নিখোঁজ মেয়ে মোছা. সুমাইয়া আক্তারের স্বামী উপজেলার কাওরাইদ গ্রামের হানিফ (৪০) ও শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ি উপজেলার কাকরকান্দি গ্রামের জহির উদ্দিনের ছেলে মো. জয়নাল আবেদীনের (৩৮) নাম উল্লেখ করে ৩-৪ জনের নামে অজ্ঞাত হিসেবে মামলা করেন।

থানায় মামলা দায়েরের পর পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব-১ পোড়াবাড়ি ক্যাম্প মামলার তদন্ত শুরু করে। তদন্তের একপর্যায়ে আসামি জয়নাল আবেদীনকে গ্রেফতারের পর একপর্যায়ে সুমাইয়ার স্বামী মো. হানিফকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করে র‌্যাব-১ পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের সদস্যরা।

র‌্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে ঘাতক স্বামী তার ভাড়াবাড়ির মালিক  বেড়াইদেরচালা এলাকায় আব্দুল লতিফ ও অপর বন্ধু আনিসকে সঙ্গে নিয়ে সুমাইয়াকে হত্যার পর ওই বাড়ির তিনতলা ভবনের পেছনে একটি স্টোর রুমের নিচে দুই স্তরের আরসিসি ঢালাই করে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে বলে জানান। পরে র‌্যাব বাড়ির মালিক লতিফ ও আনিসকেও গ্রেফতার করে।

ঘাতক স্বামী এবং বাড়ির মালিকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব ও শ্রীপুর থানা পুলিশের প্রায় তিন ঘণ্টা নিষ্ফল অভিযানে লাশের সন্ধান না পাওয়াই হতাশ নিখোঁজ সুমাইয়ার পরিবার। ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে খুব শীঘ্রই লাশের সন্ধান পাবেন বলে জানান র‌্যাব সদস্যরা।

পুলিশ জানায়, ধৃত আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে বিকালে স্বীকারোক্তি দেয় যে উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বররামা ব্রিজ থেকে শীতলক্ষ্যা নদীতে সুমাইয়ার লাশ ফেলা হয়েছে। মুহূর্তেই পুলিশ এবং সংবাদকর্মীরা ওই ব্রিজের নিচে গেলে লাশের কোনো সন্ধান মেলেনি।

নিহতের ভাতিজা হৃদয় জানান, প্রায় দুই বছর পর্বে সুমাইয়ার বিয়ে হয় হানিফের সঙ্গে। বিয়ের পর সুমাইয়া ও তার পরিবার জানতে পারে হানিফ গার্মেন্টস কর্মী ও সুন্দরী মেয়েদের ফুসলিয়ে প্রেম কিংবা বিয়ে করে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করতেন। তার আত্মীয় সুমাইয়াকেও একই ফাঁদে ফেলে বিয়ে করে দেহ ব্যবসায় বাধ্য করতে গিয়ে অনেক ঝগড়া বিবাদের সৃষ্টি হয়। তারা এর প্রতিবাদ করলে সুমাইয়ার ওপর চালাত নানা ধরনের নির্যাতন। এভাবেই কেটেছে প্রায় দেড় বছর। পাঁচ মাস পূর্বে সুমাইয়া নিখোঁজ হবার পর স্বামী হানিফকে সন্দেহ হলেও সে থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এক সংবাদ কর্মীর মাধ্যমে অনুসন্ধানের পর অবশেষে তারা মামলা করে র‌্যাবের সহায়তায় সুমাইয়াকে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হতে পেরেছে। তবে লাশের সন্ধান না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ পরিবার।

মরদেহ মাটিচাপা দেওয়ার খবরে আশপাশে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেক উৎসুক জনতা ভিড় করছেন। এমন অমানবিক নিষ্ঠুরতার খবরে বিস্মিত ও হতবাক হয়েছেন।

এ বিষয়ে পোড়াবাড়ি র‌্যাবের কোম্পানি কমান্ডার জুন্নুরাইন বিন আলম জানান, এ হত্যাকাণ্ডের মূল আসামিদের যেহেতু গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। লাশের সন্ধানও পাব আশা করছি।

তিনি আরও জানান, তদন্ত এবং অভিযান সফলতার স্বার্থে সব কিছু বলা যাচ্ছে না।

শ্রীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন মণ্ডল, আসামির দেখানো মতো দুটি স্থানে লাশ উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আমাদের এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম