রাজশাহীর দুর্গাপুরে সংখ্যালঘু ঋষি সম্প্রদায়ের একটি মন্দির সংস্কার কাজ বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। কাজ বন্ধকারী বিএনপি নেতার নাম আহমেদ রেজাউল করিম স্বপন। তিনি দুর্গাপুর পৌর বিএনপির সদস্য সচিব।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন মঙ্গলবার বিষয়টি পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও প্রকৌশল শাখাকে জানিয়েছেন। এ ঘটনায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, লোকাল গভর্নমেন্ট সাপোর্ট প্রোগ্রাম (এলজিএসপি) খাতের আওতায় সম্প্রতি দুর্গাপুর পৌরসভা থেকে স্থানীয় আটটি মন্দির সংস্কারের জন্য ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। টেন্ডারের মাধ্যমে ঋষিপাড়া দুর্গা মন্দির সংস্কারের কাজটি পান রফিকুল ইসলাম নামের একজন ঠিকাদার।

এদিকে গত ২৬ ডিসেম্বর ঠিকাদার পৌর এলাকার জয়কৃষ্ণপুর ঋষিপাড়া দুর্গা মন্দিরের সংস্কার কাজ শুরু করার সময় বিএনপি নেতা রেজাউল করিম স্বপন লোকজন পাঠিয়ে ও পৌরসভায় ফোন করে কাজ বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেন। বিএনপি নেতার নির্দেশের পর ঠিকাদার সংস্কার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের কাজ বন্ধ রেখে চলে যেতে বলেন। শ্রমিকরা নির্মাণ উপকরণ নিয়ে চলে যান। এরপর থেকে কাজটি বন্ধ রয়েছে।

ঋষিপাড়ার বাসিন্দা রিনা রানী দাসী ও বিমন দাস বলেন, গত ২৬ ডিসেম্বর মন্দিরটির সংস্কার কাজ শুরুর সময়ে এই ঘটনা ঘটেছে। বিএনপি নেতা স্বপন কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন বলে শুনেছি। কেন বন্ধ করেছেন আমরা কিছুই জানি না। আমরা বিষয়টি পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

ঋষিপাড়া দুর্গা মন্দির কমিটির অর্থ সম্পাদক রতন দাস বলেন, মন্দিরের সংস্কার কাজ বন্ধ আছে গত ৫ দিন ধরে। বিএনপি নেতা স্বপন কাজ বন্ধ করে রেখেছেন বলে পৌরসভার লোকজন আমাদের বলেছেন। আমরা এটুকুই জানি।

মন্দির কমিটির সভাপতি মিলন কুমার দাস বলেন, আমি শুনেছি যে মন্দির সংস্কার কাজ বন্ধ আছে। কেন বন্ধ আছে বিস্তারিত জেনে বলতে পারব।

দুর্গাপুর পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নুর হোসেন বলেন, ঋষিপাড়ার মন্দিরটি আমার বাড়ির কাছে। শুনেছি বিএনপি নেতা স্বপন কাজটি বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন।

ঠিকাদার রফিকুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, মন্দির সংস্কারের কাজটি আমার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানে পায়। ঋষিপাড়া দুর্গা মন্দিরের কাজটি করতে গেলে বিএনপি নেতা স্বপন কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। কী কারণে বিএনপি নেতা কাজটি বন্ধ রাখতে বলেছেন সে বিষয়ে রফিকুল ইসলাম কিছু বলতে রাজি হননি।

অন্যদিকে মন্দির সংস্কারের কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্গাপুর পৌর বিএনপির সদস্য সচিব আহমেদ রেজাউল করিম স্বপন বলেন, আমি কাজ বন্ধ রাখতে বলিনি। আমি ঠিকাদারকে ফোন করে বলেছি কাজটি এখন করা যাবে না। পরে করতে হবে। কারণ টেন্ডারে অনিয়ম হয়েছে।

কী অনিয়ম হলো এবং আপনি কোথাও অভিযোগ করেছেন কিনা-জানতে চাইলে বিএনপি নেতা স্বপন বলেন, অনিয়মের বিষয়টি আমি শুনেছি।

মন্দিরের সংস্কার কাজ বন্ধ রাখার বিষয়ে দুর্গাপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী সাহাবুল ইসলাম বলেন, মন্দিরটি সংস্কারের জন্য গত ২৬ ডিসেম্বর ঠিকাদার শ্রমিক নিয়ে গিয়েছিলেন। ঠিকাদার আমাদের জানিয়েছেন বিএনপি নেতা স্বপন কাজটি করতে মানা করেছেন। ফলে কাজটি বন্ধ রাখা হয়েছে।

মন্দির সংস্কারের কাজ বন্ধ রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্গাপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) ও পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তার সুমন চৌধুরী বলেন, মন্দির সংস্কার কাজ নিয়ে স্থানীয়ভাবে কিছু সমস্যা হয়েছে। এ কারণে সাময়িকভাবে কাজটি বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেউ কাজ করতে বাধা দিয়ে থাকতে পারেন বলে শুনেছি। আমরা সমস্যা মিটিয়ে দিয়ে কাজটি সম্পন্ন করতে পারব বলে আশা করছি।