Logo
Logo
×

সারাদেশ

শিকল দিয়ে তালা ঝুলিয়েও রক্ষা নেই রসের হাঁড়ির

Icon

গোসাইরহাট (শরীয়তপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:০১ পিএম

শিকল দিয়ে তালা ঝুলিয়েও রক্ষা নেই রসের হাঁড়ির

মানুষ তার মূল্যবান সম্পত্তি চোরদের হাত থেকে রক্ষা করতে সচরাচর লোহার শিকল ও তালা ব্যবহার করেন এটাই স্বাভাবিক। তবে মাটির হাঁড়িতে তালা ব্যবহারের ঘটনা দেখলে কার না চোখ ছানাবড়া হবে? 

চোরদের হাত থেকে রসের হাঁড়ি বাঁচাতে এক অভিনব কৌশল বেছে নিয়েছেন শরীয়তপুরের গোসাইরহাটের এক গাছি। লোহার শিকল দিয়ে মাটির হাঁড়িতে তালা ঝুলিয়েও রক্ষা করতে পারছেন না খেজুর গাছের রসের হাঁড়ি।

এদিকে এ ঘটনা জানাজানি হলে তালাবদ্ধ রসের হাঁড়ি দেখতে ভিড় জমানো শুরু করছেন এলাকার উৎসুক জনতা। 

শরীয়তপুরে গোসাইরহাট পৌরসভার উত্তর হাটুরিয়া মহিষকান্দি এলাকার বাসিন্দা হারুন সরদার (৫০)। দীর্ঘ আড়াই যুগ ধরে শীত মৌসুমে খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করে তা দিয়ে গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। গত বছর তিনি ৭০ থেকে ৮০টি খেজুর গাছ কেটে রস সংগ্রহ করতেন। এ বছর তিনি ১৪০ টি গাছ কাটছেন।

তবে অবাক করা বিষয় যে ২০০০ সালের আগে কখনো তার গাছ থেকে রস চুরি হতো না। তার পরের থেকেই হারুন সরদারের গাছের রস চুরি করে হাড়ি ভেঙে রেখে যায় রস চোরেরা। এরপর থেকেই তিনি ছোট ছোট খেজুরের গাছ ও রাস্তার পারের খেজুরের গাছে লোহার শিকল দিয়ে তালা মারতে শুরু করেন।

তবে তালা দিয়েও যেন শেষ রক্ষা হচ্ছে না তার। গত বছর তার ৫০টি হাড়ি ভেঙে ফেলেছে তাই এবার খেজুর গাছ কাটতে রাজি নন তিনি। কিন্তু স্থানীয়দের অনুরোধে ৩ হাজার ২শ টাকা খরচ করে এবার বাজার থেকে আরও ৩০টি লোহার শিকল ও ৩০টি তালা কিনেছেন। কিন্তু তালা কিনতে কিনতে রোববার রাতেই তার ২টি হাড়ি ভেঙে কে বা কাহারা রস চুরি করেছে তা জানেন না হারুন। তবে গত বছর একজনকে চুরি করতে দেখেছিলেন হারুন।  

এ বছর মোট ৩০টি হাড়ি ভেঙে ছে রস চোরেরা। যার একেকটির মূল্য প্রায় ১১০ টাকা। তবে চলতি বছর প্রতি রাতেই এসব গাছ থেকে হাঁড়িসহ রস চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে চোরেরা। চোরদের হাত থেকে রসের হাঁড়ি বাঁচাতে গাছের গোড়ায় বিভিন্ন গাছের কাটা আর কয়েক দিন রাত জেগে পাহারা দেওয়ার পরেও সুরাহা না পাওয়ায় সিদ্ধান্ত নেন শিকল দিয়ে তালা লাগানোর বিষয়টি। যেমন ভাবা তেমন কাজ, পরে বাজার থেকে তালা আর শিকল কিনে গাছের সঙ্গে জুড়ে দেন তিনি।

ফাতেমা নামের একজন বলেন, প্রতিদিন গাছ কাটতে আসলে গাছি হারুন গালিগালাজ করতে শুনি রাতে খেঁজুরের রস খেয়ে হাঁড়ি ভেঙে ফেলে।

বায়েজিত নামে এক ব্যক্তি বলেন, এখন আর তেমন খেজুর গাছ দেখা যায় না। একটা সময় ছিল অল্প টাকায় খেজুর রস কিনে খাওয়া যেত। খেজুরের রসের দাম বেড়ে যাওয়ায় চোরেরা এখন রস চুরি করে নিয়ে যায়। তবে খেজুর গাছে হাঁড়ির সঙ্গে শিকল দিয়ে তালাবদ্ধ করতে এই প্রথম দেখলাম। ওনার বুদ্ধি দেখে বিষয়টি খুব ভালো লাগল।

গাছি হারুন সরদার বলেন, আমি ১৯৯৫ সাল থেকে খেজুর গাছ কাটি এ রকম চুরি কখনো হয়নি তবে গত কয়েক বছর যাবত রসের  হাড়িতে শিকল দিয়ে তালা দেয়া লাগেনি। এখন হাড়িতে শিকল দিয়ে তালা মেরে রাখি তাতেও রক্ষা করা যাচ্ছে না, এই মৌসুম এলে আমি রস বেঁচে সংসার চালাই; কিন্তু চোরেরা প্রতি রাতেই আমার হাঁড়িসহ রস চুরি করে নিয়ে যায়। এতে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলাম। প্রতিদিন গাছ কাটার পর গাছের গোড়ায় কাটা দিয়ে রাখলেও সেটা সরিয়ে ফেলে চোরেরা। পরে বাধ্য হয়ে চুরি ঠেকাতে বাজার থেকে শিকল আর তালা কিনে হাঁড়িতে দিয়ে রাখি।

তিনি বলেন, এবার গাছ কাটতে চাচ্ছিলাম না অনেকের অনুরোধে কাটা শুরু করেছি। কারণ আমি গাছ না কাটলে এই এলাকার মানুষ রস খেতে পারবে না।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম