সীমান্ত সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
কক্সবাজার ও টেকনাফ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০০ পিএম
মিয়ানমার সীমান্তে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, সীমান্তে এখনো মাঝে-মধ্যে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। তবে সীমান্তবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি ও কোস্টগার্ড পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সীমান্ত সম্পূর্ণ আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সোমবার দুপুরে টেকনাফের দমদমিয়ার নাফ নদীর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন জেটি ঘাটে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, সীমান্তে বিজিবি ও কোস্টগার্ডের জনবল বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মোকাবিলায় সব বাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করছে।
তিনি বলেন, সীমান্ত এলাকায় যারা অবৈধ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে সহযোগিতা করছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে আমাদের স্বার্থ রক্ষার্থে মিয়ানমার সরকার এবং আরাকান আর্মির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।
নতুন করে অনুপ্রবেশ করা রোহিঙ্গাদের বিষয়ে এখনো নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ৬০ হাজার রোহিঙ্গা সীমান্ত বাহিনীর নজর এড়িয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর জন্য কিছু অসাধু দালাল দায়ী। তারা অর্থের বিনিময়ে এই অনুপ্রবেশে সহায়তা করছে। এই দালাল চক্রকে প্রতিহত করতে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। না হলে এরা আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ মানবিক কারণে আগেও রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। তবে নতুন করে যারা অনুপ্রবেশ করেছে, তাদের বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সীমান্ত পুরোপুরি বিজিবির নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধে সরকার কঠোর অবস্থানে আছে।
টেকনাফের মাদক সমস্যার কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, টেকনাফ এক সময় মাদকের জন্য কুখ্যাত ছিল। তবে মাদক রোধে আইন প্রয়োগের পাশাপাশি জনগণের সহযোগিতা অপরিহার্য। মাদক সমস্যা শুধু আইন দিয়ে সমাধান করা সম্ভব নয়। এর জন্য স্থানীয় জনগণকে সচেতন হতে হবে এবং প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে নাফ নদীতে মাছ ধরা পুনরায় শুরু করা যাবে এবং শাহপরীর দ্বীপের করিডোরও খুলে দেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
উপদেষ্টা জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস জাতিসংঘের সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরেছেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ সব সময় মানবিক আচরণ করেছে। কিন্তু এ সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের।
এর আগে দুপুরে হেলিকপ্টারে করে ঢাকা থেকে টেকনাফে পৌঁছান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি টেকনাফের বিভিন্ন সীমান্ত পয়েন্ট পরিদর্শন করেন এবং সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। এরপর ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বিশেষ বৈঠকে অংশ নেন।
বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান ছিদ্দিকীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে সীমান্ত নিরাপত্তা, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং মাদক সমস্যা মোকাবিলার বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
উপদেষ্টা তার বক্তব্যে সীমান্তবাসীদের আশ্বস্ত করে বলেন, সীমান্তের সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বিজিবি ও অন্যান্য বাহিনী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকার দেশের নিরাপত্তা ও স্বার্থ রক্ষায় সব সময় তৎপর।
সীমান্ত পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গা সমস্যার মতো জটিল ইস্যু মোকাবিলায় সরকারের কঠোর অবস্থান এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ দেশকে একটি স্থিতিশীল অবস্থানে রাখতে সহায়তা করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।