
প্রিন্ট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:১৫ পিএম
ফুলকপিই এখন চাষিদের বোঝা, ফেলা হচ্ছে ড্রেনে

মাহবুব রহমান, রংপুর ব্যুরো
প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৯ পিএম

আরও পড়ুন
রংপুর মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ফুলকপি চাষ করে হতাশায় ভুগছেন চাষিরা। দাম না থাকায় মিলছে না ক্রেতাও। গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবেও অনেকেই চালিয়ে দিচ্ছেন। অনেকে বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দিচ্ছেন ড্রেনে।
এতে চাষিদের মাথায় দুশ্চিন্তার চাপ দেখা দিয়েছে। তাদের কাছে এখন যেন ফুলকপি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চাষিদের দাবি, বাজার সিন্ডিকেটের কারণে ফুলকপির দামে ধস নেমেছে। ক্রেতাও মিলছে না। দাম না পেয়ে তারা হতাশায় ভুগছেন। এমন পরিস্থিতিতে তারা লোকসানে পড়েছেন।
রোববার সরেজমিনে রংপুর নগরীর কেরানীরহাট, তামপাট, তপোধনসহ মিঠাপুকুর উপজেলার লতিবপুর, রানীপুকুর, কাফ্রিখাল, শুকুরেরহাট, ভক্তিপুর, পীরগঞ্জের চতরা, খালাশপীর, মাদারগঞ্জ ও সদরের পালিচড়া, জানকী ধাপেরহাট এবং পীরগাছার পারুল ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে ফুলকপির চাষ।
চাষিরা জানান, লাভের আশায় সবজি চাষ করে লোকসানের বোঝা টানতে হচ্ছে তাদের। জমিতে সবজি পচন ধরছে ক্রেতা নেই। বীজের টাকাও উঠছে না। অনেকেই গবাদিপশুর খাদ্য হিসাবে চালিয়ে নিচ্ছে ফুলকপি। এতে তারা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এদিকে পীরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর উপজেলা সবজি অঞ্চল হিসেবে পরিচিত হলেও এখানে চলতি মৌসুমে সবজির বাজার অনেকটাই মন্দা। লাভের মুখ দেখতে পারছেনা সবজি চাষিরা। সবজি চাষাবাদের লোকসানের বোঝা হালকা করতে অনেকটাই বেগ পেতে হচ্ছে চাষিদের।
পীরগাছা উপজেলার দেউতি এলাকার নুরুল আমিন ও শহিদুল ইসলামসহ কয়েকজন চাষি জানান, লাভের জন্য আবাদ করা হয়েছে, সেখানে লোকসানের বোঝা টানতে হচ্ছে। ফুলকপি হাটবাজারে নিয়ে গেলে মনে হয় এগুলো অচল মাল, সবজির সঙ্গে বস্তাও যায়। অনেক সময় ক্রেতা না পেয়ে বাজারে ড্রেনে ফেলে আসতে হচ্ছে ফুলকপি।
ফুলকপি চাষিরা জানান, দেড় থেকে দুই টাকা দিয়ে কিনতে হয়েছে প্রতিটি চারা। এরপর জমির হালচাষ সার কীটনাশক এবং শ্রমের বিষয়টি না হয় বাদ দিলাম। ফুলকপি চাষে বীজের টাকা তোলাই কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে এক মণি কপি বাজারে নিয়ে গেলে পাইকাররা মণ হিসাবে দাম বলে না, বস্তা হিসাবে দাম বলে। তাও আবার কপির সঙ্গে বস্তাও যায় ফ্রি। এতো কষ্টের আবাদ পানিতে পড়ে গেল।
পীরগঞ্জের ঘোনা চতরা গ্রামের ফুলকপি চাষি একরাম মিয়া বলেন, ধাপের হাটে ফুলকপি নিয়ে গিয়ে ৮০ টাকা মণ হিসাবে বিক্রি করেছি। কপি বিক্রি করে শুধু মাত্র ভ্যান ভাড়া এবং হাটের জমা দিতেই টাকা শেষ। নিজের শ্রমের কোনো মূল্য নেই। অনেক দিন থেকে সবজির চাষাবাদ করছি কিন্তু এবারের মতো সবজির বাজার কখনো দেখিনি।
একই উপজেলার জামালপুর গ্রামের নুরুন্নবী জানান, কপি বিক্রি করে বীজের টাকাও উঠছে, হালচাষ সার কীটনাশক এবং কিষান পাটের টাকা ঘর থেকে পূরণ করতে হচ্ছে। ফুলকপি চাষ করে লোকসান আর লোকসান।
ফুলকপি ব্যবসায়ীরা জানান, এখন ২০ হাজার টাকা দিয়ে এক ট্রাক ফুলকপি ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ২০ হাজার টাকার মাল বিক্রি করা হচ্ছে মাত্র ১৬ হাজার টাকা। কয়েক সপ্তাহ আগে এক গাড়ি মালের জন্য ১ লাখ টাকা ব্যয় পর্যন্ত খরচ হতো তারপরও লাভ হয়েছে লোকসান হয়নি। বর্তমানে সবজি কিনলেই ক্যাশ থাকে না। কৃষকদের জমি থেকে ২ টাকায় ফুলকপি কিনে মোকামে পৌঁছাতে ৮ টাকা পরে কিন্তু মোকামেই প্রতি পিস কপি দাম ৮ থেকে ১০ টাকা এরপর আবার নষ্ট মাল বেড় হয় গাড়ি থেকে। যে কারণে কাঁচামাল কিনতে ভয় হয়। তাছাড়া ফুলকপি এখন সারা দেশে আবাদ করা হচ্ছে। আমরা যেখানে মাল বিক্রি করি সেখানে টাটকা মাল মেলে, আমাদের গাড়ির বাসি মাল। ক্রেতারা সবসময় টাটকা মাল খোঁজে। বর্তমান ফুলকপি কিনলেই পাইকারদের ব্যবসায় পুঁজি বসিয়ে যাচ্ছে, যে কারণে বাজারে মিলছে না দূরের পাইকার। গত বছর যেখানে প্রতিদিন কয়েক গাড়ি মাল ঢাকায় যায় বর্তমানে এক গাড়ি মাল কিনতে ভয় লাগে।
রংপুর জেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্ষা মৌসুমের শেষ নাগাদ চাষিরা এক সঙ্গে সবজির চাষাবাদ করেছে এবং সেই সবজির আমদানি একসঙ্গে শুরু হয়েছে। কাঁচামাল উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় বাজারগুলোতে সবজির আমদানি বেড়েছে। তবে দুই এক সপ্তাহের মধ্যে সবজির বাজার টান ধরবে বলে তারা মনে করেন।