সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন তৎকালীন পৌর কমিশনার ইব্রাহিম সরদার। দুই যুগ পর একই পরিণতি হলো ছেলে জিয়াউদ্দিন পলাশের। ছেলেকে এবার কুপিয়ে হত্যা করেছে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ।
স্বামীর মতো সন্তানকে হারিয়ে সামনে অন্ধকার দেখছেন ফরিদা বেগম (৬৫)। সন্তান হারানোর শোকে কাতর বৃদ্ধা মূর্ছা যাচ্ছেন বারবার।
একই অবস্থায় জিয়াউদ্দিন পলাশের স্ত্রী শারমিন নাহার রত্নার। তাকে ঘিরে আছে দুই ছেলে তাসিন সরদার (১০ বছর) ও তাইফ সরদার (৯ মাস) কাঁদছে। পুরো পরিবার যেন শোকের সাগরে ভাসছে।
যশোরের নওয়াপাড়ায় নৌ বন্দরের ঘাট দখলকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হামলায় নিহত সাবেক কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউদ্দীন পলাশের পরিবারের চিত্র এটি।
শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নওয়াপাড়া নৌবন্দর এলাকায় একটি পরিত্যক্ত ভবনের নিচতলায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। তিনি নওয়াপাড়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এ ছাড়া তিনি ওই ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ছিলেন।
জিয়াউদ্দিন পলাশের ছোট ভাই আব্দুল মান্নান বলেন, আমরা সহজ সরল জীবনযাপন করি। আমরা মানুষের কোনো ক্ষতি করি না। চাঁদার জন্য আমার ভাইকে মেরে ফেলা হয়েছে। বাবার মতো ভাইয়েরও একই পরিণতি হলো।
জানা যায়, প্রায় দুই দশক আগে নিহত পলাশের বাবা নওয়াপাড়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার (কাউন্সিলর) ও শ্রমিক নেতা ইব্রাহিম হাসান সরদার ঘাট দখলের পূর্ব বিরোধে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হন। বাবার মতো ছেলেরও একই পরিণত হওয়ায় এলাকায় তোলপাড় হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এলাকার লোকজন রইচ সিকদার (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রইচ সিকদার উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রামের ইব্রাহিম সরদারের ছেলে। তিনি নওয়াপাড়া পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির প্রচার সম্পাদক। এছাড়া তিনি নওয়াপাড়া পৌর যুবদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য।
রোববার যশোর জেনারেল হাসপাতাল থেকে ময়নাতদন্ত শেষে সন্ধ্যায় পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে। এই ঘটনায় সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মামলা হয়নি।
অভয়নগর থানার ওসি মো. এমাদুল করিম সাংবাদিকদের জানান, নিহত পলাশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। নওয়াপাড়া নৌ বন্দরের একটি ঘাট দখলকে কেন্দ্র করে রইচ সিকদার নামে স্থানীয় বিএনপি কর্মীর সঙ্গে পূর্ব বিরোধ ছিল। সেই বিরোধের জেরে রইচ রাতে পলাশকে তুলে এনে আয়কর অফিসের পিছনে একটি পরিত্যক্ত ভবনে তাকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ফেলে যায়। পরে রইচকে ধরে গণধোলাই দিয়ে পুলিশকে সোপর্দ করে। এই ঘটনায় রইচকে আটক দেখিয়ে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত চলছে।
পরিবারের সদস্য ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জিয়াউদ্দিন পলাশ বাড়ির কাছে তেঁতুলতলা মসজিদের পাশে একটি চায়ের দোকানে বসে চা পান করছিলেন। এ সময় রইচ শিকদারের নেতৃত্বে ১০-১২ জন চায়ের দোকান থেকে জিয়াউদ্দিন পলাশকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটের দিকে পলাশের বাড়িতে গিয়ে স্ত্রী রত্নার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেয় জিহাদ ও সাগর নামে দুই ব্যক্তি।
মোবাইল ফোনের অপর প্রান্ত থেকে পলাশ গুরুতর আহত অবস্থায় আছে উল্লেখ করে তার স্ত্রীকে বলেন, ওই দুই ব্যক্তিকে ২০ হাজার টাকা দাও। তারা টাকা নিয়ে চলে যাওয়ার পর পলাশকে নওয়াপাড়া বুড়িরঘাট এলাকায় আয়কর অফিসের পেছনে ভৈরব নদের তীরে বালুর স্তূপের ওপর নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তারা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে ফেলে রেখে যায়। এলাকার লোকজন তাকে খুঁজে পেয়ে সেখান থেকে উদ্ধার করে রাত ১০টা ১৫ মিনিটের দিকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। এ সময় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।