Logo
Logo
×

সারাদেশ

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন

আ.লীগ নেতাদের সঙ্গে আসামি বিএনপি নেতারাও

Icon

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৭ পিএম

আ.লীগ নেতাদের সঙ্গে আসামি বিএনপি নেতারাও

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত এক যুবকের মামলায় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফের সঙ্গে আসামি করা হয়েছে বিএনপি নেতাদেরও।

গত ২৬ ডিসেম্বর কুষ্টিয়া মডেল থানায় ৬৭ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেন ৪ আগস্ট গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত যুবক ইয়ামিন আলী। তিনি কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হাটস হরিপুর ইউনিয়নের ওমর মালিথার ছেলে। পেশায় রাজমিস্ত্রি।

ওই মামলায় আসামি হয়েছেন কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আতিয়ার রহমান ও ১৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলী।

বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে একটি পক্ষ নামগুলো মামলার বাদীর কাছে সরবরাহ করেছে।

তবে মামলার বাদী ইয়ামিন আলী বলেন, ভুল করে কয়েকটি নাম মামলার এজাহারে ঢুকে গেছে। অনেকেই নাম দিয়েছিলেন। সেখান থেকেই ওই নামগুলো এসেছিল।

বর্তমানে অনেক চাপের মধ্যে আছেন জানিয়ে ইয়ামিন আলী বলেন, কোনো মামলাই রাখব না, দ্রুত মামলাটি তুলে নেব।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন এলাকায় তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে ছাত্র-জনতা। ওই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর আওয়ামী লীগ ও পুলিশের গুলিতে অসংখ্য ছাত্র-জনতা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ও আহত হন।

গত ৪ আগস্ট দুপুর আড়াইটার দিকে আন্দোলনকারীরা কুষ্টিয়া কোর্ট স্টেশন মসজিদের দক্ষিণ পাশের রাস্তার ওপর পৌঁছালে আসামিরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রণসাজে সজ্জিত অবস্থায় ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে। আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে আসামিরা শটগান থেকে মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ শুরু করে। এ সময় আন্দোলনের সম্মুখভাগে থাকা ইয়ামিনের ডান চোখে দুটি ও মুখের ডানদিকে পাঁচটি গুলিসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মোট ১৮টি গুলিবিদ্ধ হয়।

এ ঘটনার ৪ মাস ২২ দিন পর গত ২৬ ডিসেম্বর ইয়ামিন আলী বাদী হয়ে ৬৭ জনকে আসামি করে কুষ্টিয়া মডেল থানায় একটি হত্যা চেষ্টা মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফকে। দুই নম্বর আসামি তারই ভাই সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা, তিন নম্বর আসামি শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি তাইজাল আলী খান, চার নম্বর আসামি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী রবিউল ইসলাম, পাঁচ নম্বর আসামি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আজগার আলী।

একই মামলায় ৩৪নং আসামি করা হয়েছে কুষ্টিয়া পৌরসভার ১৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আতিয়ার রহমান ও ১৪নং ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলীকে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতের মামলায় আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের আসামি করায় দলের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বিএনপির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে একটি পক্ষ ওই মামলায় নামগুলো ঢুকিয়ে দিয়েছেন।

মামলার আসামি ১৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আতিয়ার রহমান বলেন, দলের মধ্যে প্রতিহিংসার কারণে আমাদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। এলাকায় আমাদের কোণঠাসা করতেই এমন নোংরামি করা হয়েছে। আমরা দলের শীর্ষ নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা আমাদের বলেছেন মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দেওয়া হবে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, গত নভেম্বর মাসে জেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটি ঘোষণার করলে দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রকাশ্যে রূপ নেয়। একাধিকভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েন দলের নেতাকর্মীরা। এরমধ্যে বর্তমানে দুইটি গ্রুপ শক্তিশালী অবস্থানে। যার একটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলার সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেন, অপর গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহরাব উদ্দিন। জেলার এই গ্রুপিংয়ের প্রভাব পড়েছে তৃণমুল বিএনপিতে। ওই মামলাতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল কাজ করেছে বলে জানান নেতাকর্মীরা। যার কারণে স্পর্শকারত মামলাতে এক পক্ষ বিএনপি নেতাদের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব জাকির হোসেন বলেন, নামের ভুলের কারণে এমনটি হয়েছে। আমি পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি। নাম ভুলের বিষয়টি সংশোধন হয়ে যাবে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ শিহাবুর রহমান শিহাব বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত ইয়ামিন নামে একজন মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলার আসামিদের প্রাথমিকভাবে চেনা সম্ভব না। মামলা দায়েরের পর শুনছি দুজন বিএনপি নেতার নাম আছে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে বা নিরাপরাধ ব্যক্তিদের আসামি করা হয় তবে তদন্তে তাদের নাম বাদ দেওয়া হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম