স্বপ্ন পূরণের প্রত্যাশায় বাংলাদেশ
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে স্টার্টআপের জন্য চলছে পরীক্ষা-নিরীক্ষা
আখতারুজ্জামান আখতার, পাবনা
প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৫৪ পিএম
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিটের নির্মাণসহ সবকাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে স্টার্টআপের প্রস্তুতি হিসেবে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কর্তৃপক্ষ আশা করছেন- সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে, ২০২৫ সালেই প্রথম ইউনিট থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে।
এদিকে এই প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ ও স্থাপনের কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে রাশিয়ার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান রসাটম জানিয়েছে।
রাশিয়ার আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার পদ্মাপারের রূপপুরে মনোরম পরিবেশে নির্মিত হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রকল্পটির দুটি ইউনিটের প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। দুটি ইউনিটেই সর্বাধুনিক ৩য় প্রজন্মের রুশ ভিভিইআর রিয়্যাক্টর স্থাপন করা হয়েছে। এই রিয়্যাক্টরগুলো সব আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চাহিদা পূরণে সক্ষম।
প্রকল্পটি চালু হলে বাংলাদেশে মোট বিদ্যুৎ চাহিদার দশ শতাংশ পূরণ হবে এখান থেকে। এই বিদ্যুৎ হবে পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশ বান্ধব। প্রকল্পটির জেনারেল ডিজাইনার ও কন্ট্রাক্টর রসাটমের প্রকৌশল শাখা।
এদিকে রাশিয়ার নির্মাণ প্রতিষ্ঠান রসাটম বিদায়ী ২০২৪ সালকে রসাটমের সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ছিল সফল একটি বছর হিসেবে মনে করছে।
রসাটমের প্রথম উপ-মহাপরিচালক এবং এএসই প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেই পেত্রভ বলেন, রূপপুর প্রকল্পে প্রথম ইউনিটটি স্টার্টআপের জন্য আমরা চূড়ান্ত প্রস্তুতি পর্বে প্রবেশ করেছি। ইউনিটের পরিচালন সক্ষমতা এবং সব অপারেশন মোডে বিভিন্ন প্রসেস সিস্টেমের কার্যকারিতা যাচাইয়ের জন্য নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানোর পাশাপাশি বেশ কিছু শেষ মুহূর্তের কাজও সম্পন্ন করা হচ্ছে।
বিদায়ী বছরের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম ইউনিটের রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেলে ডামি নিউক্লিয়ার ফুয়েল লোডিং সম্পন্ন করা হয়। আসল ফুয়েল লোডের পূর্বে ডামি ফুয়েলের সাহায্যে প্রেসার ভেসেলটিকে চূড়ান্তভাবে পরীক্ষা করা হয়। একই মাসে স্ট্যান্ডবাই ডিজেল জেনারেটরগুলোর কোল্ডরান পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। বিশেষ কোনো কারণে যদি ইউনিটের কাজ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হয়, তখন এই বিভিন্ন ইকুইপমেন্ট এই জেনারেটরগুলো থেকে প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ পেয়ে থেকে। নভেম্বরে স্টার্টআপ বয়লার রুমে প্রথম ইগনিশনের মাধ্যমে প্রযুক্তিগত বাষ্প সরবরাহ শুরু হয়।
ইউনিটটিকে ন্যুনতম প্যারামিটারে পারমাণবিক জ্বালানি ছাড়াই পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু হয় ১৮ ডিসেম্বর। বর্তমানে সব অপারেশন মুডে এর প্রসেস সিস্টেমের কার্যকারিতা নিশ্চিতের কাজ চলছে।রূপপুর প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণ ও স্থাপনের শেষ পর্যায়ের অধিকাংশ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। কমিশনিং ও স্টার্টআপের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য নির্মাণ ও স্থাপনে কাজ এগিয়ে চলছে।
রসাটম জানায়, বিদায়ী ২০২৪ সালকে রসাটমের সহায়তায় বাস্তবায়নাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য ছিল সফল একটি বছর হিসেবে মনে করছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য রাশিয়ার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ শিক্ষা সহায়তা এবং রাশিয়া রসাটম টেকনিক্যাল একাডেমিতে বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণের কাজ পুরো বছর ধরেই চলমান ছিল।
বাংলাদেশে নবনিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্সান্ডার খোজিন তার মন্তব্যে বলেন, প্রকল্পের সূচনা থেকেই রসাটম বাংলাদেশে রুশ দূতাবাসের সহায়তায় স্থানীয় জনগণের মধ্যে রূপপুর প্রকল্পের ব্যাপারে সচেতনতামূলক অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছে। জনগণ এখন এই প্রকল্পের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারছে।