জমি রেজিস্ট্রি না করায় বৃদ্ধের লাশ দাফনে বাধা
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৬ এএম
লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে আবু তাহের নামের স্থানীয় এক জমি বিক্রেতার লাশ দাফনে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার দুপুরে উপজেলার চরবাদাম ইউনিয়নের পূর্ব চরসীতা গ্রামের আবদুল অদুদ ভোলারবাপের জামে মসজিদে এ ঘটনা ঘটে।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে বার্ধক্যজনিত কারণে মারা যান তিনি পরে পরিবারের সদস্যরা তার লাশ দাফন করতে গেলে এলাকার স্থানীয় সাকু মিয়ার স্ত্রী ভিক্ষুক মরিয়ম ও তার ছেলে জলিল মিয়া আবু তাহেরের জানাজায় উপস্থিত হন। উপস্থিত লোকজনের সামনে জমি রেজিস্ট্রি দিলেই তবে তাহেরের লাশ দাফন হবে এমন হুমকি দেন মা-ছেলে। এ সময় স্থানীয়দের আশ্বাসে মরহুমের লাশ দাফন করা হয়।
জানা যায়, ওই এলাকার আবু তাহের ও ছিদ্দিক উল্লা নামের দুই ভাইয়ের কাছ থেকে ভুক্তভোগী মরিয়ম বেগম ২৬ বছর আগে (১৯৯৮) চরসীতা মৌজার ২৯৭ নম্বর খতিয়ানভুক্ত ২০ শতক জমি ক্রয় করেন। দুই ভাই আবু তাহের ও ছিদ্দিক উল্লাহ জমিটি রেজিস্ট্রি দিতে গড়িমসি করার কারণে রেজিস্ট্রির আগেই মরিয়ম ওই জমিতে বসতবাড়ি নির্মাণ করে আজ পর্যন্ত বসবাস করে আসছেন। এরই মধ্যে ২০১৬ সালে ছিদ্দিক উল্লাহ মারা যান। ওই সময়ও ভুক্তভোগী মরিয়ম ছিদ্দিক উল্লার লাশ দাফনে বাধা দিলে আবু তাহের জমিটি রেজিস্ট্রি করে দেবে মর্মে ওয়াদা দিলে স্থানীয়রা ছিদ্দিক উল্লার লাশ দাফন করেন।
ভুক্তভোগী ভিক্ষুক মরিয়ম বেগম যুগান্তরকে জানান, দীর্ঘ ২৬ বছর আগে ছিদ্দিক উল্লাহ ও আবু তাহেরের কাছ থেকে ওই জমিটি কিনে বাড়ি তৈরি করেছেন তিনি। জমি বিক্রি করার টাকা নেওয়ার পর বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে আজও জমিটির রেজিস্ট্রি করে দেননি আবু তাহের। এরই মধ্যে ছিদ্দিক উল্লাহ মারা যাওয়ার পর তাহের রেজিস্ট্রি করে দেবে মর্মে সমাজের মানুষের কাছে ওয়াদা করেছিলেন। ১০ বছর পেরুলেও কথা রাখেননি তিনিও। আমার জমি রেজিস্ট্রি না দিয়ে এখন আবু তাহের মারা গেছেন। যে কারণে তার লাশ দাফনে বাঁধা দিয়েছি। পরে তার সন্তানরা ও সমাজের লোকজনের আশ্বাসে লাশ দাফন করতে দিয়েছি বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, স্বামী সাকু মিয়া গত ১৫ বছর ধরে শরীরে পক্ষপাতগ্রস্ত সমস্যায় আক্রান্ত। এক ছেলে থাকলেও ভবঘুরে। যে কারণে ভিক্ষা করে স্বামীকে নিয়ে চরম কষ্টে দিন কাটছে তাদের।
তিনি বলেন, আবু তাহের এলাকার প্রভাবশালী হওয়ার কারণে জমিটির রেজিস্ট্রি চাইতে গিয়ে অনেক হয়রানির শিকার হতে হয়েছে তাকে।
এ সময় অশ্রুসিক্ত চোখে মরিয়ম বলেন, আমার দুনিয়াতে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। আমি আমার জমির রেজিস্ট্রি চাই।
স্থানীয় ইসমাইল মাস্টার জানান, ছিদ্দিক উল্লাহ ও আবু তাহের মরিয়মের কাছে জমি বিক্রি করছে সত্য। কিন্তু কি কারণে রেজিস্ট্রি দিচ্ছে না তা আমার বোধগম্য নয়।
মৃত আবু তাহেরের ছেলে মো. হাসান জানান, আমার বাবা ও চাচা মরিয়মের কাছে জমিটি বিক্রি করেছেন সত্য; তবে কেন কি কারণে তারা জমি রেজিস্ট্রি দেননি বা দিচ্ছেন না তা আমার বুঝে আসে না। তবে আমার বাবা-চাচা মরিয়মের কাছ বিক্রিত জমির রেজিস্ট্রি করে না দিলেও এখন আমরা তা ব্যবস্থা করব।
রামগতি থানার ওসি কবির হোসেন জানান, এ বিষয়ে কেউ আমাকে জানায়নি। তবে এমন ধরনের কাজ করা মোটেই ঠিক হয়নি। তবুও খোঁজ নিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।