চাঁপাইনবাবগঞ্জে মসজিদের ইমামকে অবসরকালীন রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা দিয়েছেন মুসল্লিরা। এ সময় তাকে এক লাখ টাকা হাদিয়াসহ ফুল ছিটিয়ে সম্মান জানানো হয়। 

সদর উপজেলার রানিহাটি ইউনিয়নের চকলামপুর বেলপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আশরাফ আলী (৭০) এ মসজিদে দীর্ঘ ৪১ বছর ইমামের দায়িত্ব পালন করেন।

শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে রাজকীয় এ সংবর্ধনার মাধ্যমে বিদায় দেওয়া হয়েছে এই ইমামকে।

নামাজ শেষে শেষবারের মতো তিনি উপস্থিত মুসল্লি ও এলাকাবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য দেন।  এ সময় তিনি সবার কাছে নিজের দীর্ঘসময় পথচলায় অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল-ত্রুটির জন্য ক্ষমা চান। পরে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রার মাধ্যমে মাইক্রোবাসে চড়িয়ে ইমামের নিজ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যান এলাকাবাসী।

এর আগে মসজিদের বিদায়ী ইমাম মাওলানা আশরাফ আলীকে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে নগদ ১ লাখ ৩ হাজার টাকা ও ব্যবহারযোগ্য কিছু সরঞ্জাম উপহার হিসেবে তুলে দেন মুসল্লিরা। এছাড়াও শত শত মুসল্লির উপস্থিতে মাইক্রোবাসে ওঠানো হয় ইমামকে। সামনে-পেছনে মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে ইসলামের বিভিন্ন স্লোগানে স্লোগানে ইমাম সাহেবকে তার নিজ বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসা হয়।

আশরাফ আলী সদর উপজেলার রানিহাটি ইউনিয়নের কৃষ্ণ গোবিন্দপুর ক্যাঠ্যাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ও চুনাখালি কলেজের সাবেক প্রভাষক।

স্থানীয় বাসিন্দা আলি হাসান বলেন, বেলপাড়া জামে মসজিদে ৪১ বছরের বেশি সময় ধরে ইমামতি করে আসছেন আশরাফ আলী। কোনোদিন কারও সঙ্গে খারাপ আচরণ করেননি। এমনকি কেউ কটু কথা বললেও উত্তর দেননি। এজন্য এলাকার মুসল্লিরা তাকে খুব ভালোবাসেন এবং শ্রদ্ধা করেন।

হাসিব আলি নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমার পিতাও তার কাছে কুরআন পড়া শিখেছেন। আমিও তার কাছে কুরআন এবং নামাজ আদায় করতে শিখেছি। তিনি এই এলাকার মানুষকে অনেক ইসলামী শিক্ষা দিয়েছেন।

সাবেক ইউপি সদস্য এমদাদুল ইসলাম বলেন, আমরা এই ইমাম সাহেবের কাছে অনেক সৎ আচরণ শিখেছি। তিনি কখনো রেগে কথা বলতেন না অথবা কারও সঙ্গে কখনো রূঢ় আচরণ করতেন না। এজন্য স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে সম্মান করতেন। তার চলে যাওয়া আমরা স্থানীয়রা মেনে নিতে পারছি না। 

বিদায়ী ইমাম মাওলানা আশরাফ আলী বলেন, বিগত ৪১ বছর এই মসজিদে ইমামতি করে আসছি। মানুষ আমাকে এমন গভীরভাবে ভালোবাসে তা আগে বুঝে উঠতে পারিনি। আমি তাদের ভালোবাসায় সত্যিই মুগ্ধ।

চকলামপুর বেলপাড়া জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন জুয়েল বলেন, ইমাম সাহেবের ওপর আমরা কৃতজ্ঞ। তিনি আমাদের অনেক কিছুই দিয়েছেন। অনেকভাবেই তার কাছে শিখেছি। আজ তাকে বিদায় দিতে হচ্ছে। এটি খুবই কষ্টের।