Logo
Logo
×

সারাদেশ

নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, দাগনভূঞায় বিএনপির ঘরে চরম কলহ

Icon

মো. আবু তাহের, দাগনভূঞা (ফেনী)

প্রকাশ: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১১ পিএম

নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, দাগনভূঞায় বিএনপির ঘরে চরম কলহ

ফাইল ছবি

ফেনীর দাগনভূঞায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের মধ্যে চরম কলহ বিরাজ করছে। নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব, ত্যাগীদের অবমূল্যায়ন, অযোগ্য ও জনবিচ্ছিন্নদের পদে আসীনসহ নানা কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অতীতেও দলে দ্বন্দ্ব-গ্রুপিং ছিল, তবে আপদকালীন সময়ে সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই ঐক্যের সুরে কথা বলতেন।

কিন্তু এখন তার লেশমাত্র নেই। ইতোমধ্যে উপজেলা বিএনপির দুই গ্রুপ পালটাপালটি শোডাউন করেছে। ৭ নভেম্বর একপক্ষ বিশাল শোডাউনে জানান দেন তারাই দলের প্রকৃত কান্ডারি। এরপর ১০ নভেম্বর পালটা বিশাল শোডাউন করে আরেক পক্ষ। এরমধ্যেই গত ২২ ডিসেম্বর উপজেলা বিএনপির তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও পৌরসভার সাবেক মেয়র আকবর হোসেনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। এই কমিটি প্রত্যাখ্যান করে শহরে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিরোধী পক্ষ। এদিকে দল গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।

জানা গেছে, আগস্টে ভয়াবহ বন্যা শুরুর কয়েকদিন আগে বর্তমান আহ্বায়কের বিরুদ্ধে পদ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে উপজেলা চত্বরে সমাবেশ আহ্বান করেছিল বিরোধীপক্ষ। কিন্তু বন্যার কারণে সেই সমাবেশ হয়নি। বন্যায় কেন্দ্র থেকে দেওয়াসহ বিভিন্ন খাতের ত্রাণ বিরোধীপক্ষকে বঞ্চিত করে আহ্বায়ক তার লোকজনকে দিয়ে বণ্টন করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন উপজেলার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক পেয়ার আহমদ কবির। তিনি বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কাছে সাহায্য নিয়ে দাঁড়াতেও দেননি আকবর হোসেন। তার ইন্দনে আমার নামে মিথ্যা অপহরণের অভিযোগ করা হয় থানায়। কথিত অপহৃত ব্যক্তি ছাগলনাইয়ায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। তিনি বাড়ি ফিরে আসায় আমি বেঁচে যাই।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলার বর্তমান আহ্বায়ক আকবর হোসেন যুগান্তরকে বলেন, দলের দুঃসময়ে বারবার দলীয় আদর্শ ত্যাগ করে শুধু পদবির জন্য কতিপয় ব্যক্তি আমার বিরোধিতা করছেন। আমিতো উনাদের নিয়ে কাজ করতে চাই। উনাদেরকে আমন্ত্রণ জানালেও উনারা সাড়া না দিয়ে কোন সূতার টানে বিষোদ্গার করে যাচ্ছেন জানি না। আমারতো কমিটি দেওয়ার এখতিয়ার নেই। জেলা থেকে প্রস্তাবনায় কেন্দ্র কমিটি ঘোষণা দেয়। আমিতো জেল খেটেছি। মামলার খড়্গ আমার ওপর নেমে এসেছে। আমার বাড়িতে আক্রমণ হয়েছে, গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে।


তিনি বলেন, যারা পদপদবির লোভে দলের সুদিনে গর্ত থেকে বের হয়ে বিরোধিতা করছেন তা কতটুকু দলবান্ধব বিবেচনায় রাখছে তৃণমূলের কর্মীরা। আমাকে যখন আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্টরা মিছিল থেকে পুলিশে দিয়ে মিথ্যা মামলায় জেলে দিয়েছে তখন উপজেলার সাবেক সহসভাপতি শাহিনা আকবর দলের হাল ধরেছেন। দলের নেতৃত্বের কারণে আমার স্ত্রীসহ আমার মাছুম সন্তানের ওপরও বর্বরোচিত হামলা করেছে ফ্যাসিস্টরা। কেউতো দলের হালও ধরেনি পাশেও থাকেনি বা সহানুভূতিও জানাননি।

আকবর হোসেন আরও বলেন, যারা দলের ত্যাগী বলে এখন সুদিনে এসে নেতা সাজতে চাচ্ছেন তারা কয়টা মামলা খেয়ে জেলে গিয়েছে বা বাড়িতে হামলা হয়েছে প্রমাণ করুক।

এ বিষয়ে ফেনী জেলার সদস্য এবং উপজেলার সভাপতি প্রার্থী মাহবুবুল হক রিপন যুগান্তরকে বলেন, ব্যক্তি আকবর হোসেনের বিরুদ্ধে আমার কোনো মন্তব্য নেই। দীর্ঘ ১১ বছর দলের সাংগঠনিক কাঠামো লেজেগোবরে ছিল। উপজেলা বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি ও ত্যাগিনেতা দেলোয়ার হোসেনের ছোটভাই শাহাদাত হোসেনের মৃত্যুর পর সেক্রেটারিকে দলের নেতাকর্মীরা জানতেন না। প্রত্যেকটি ইউনিয়ন, পৌর ও উপজেলা কমিটিতে উনার আশীর্বাদপুষ্ট লোকেরা আছে। না আছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা না আছে দল পরিচালনায় অভিজ্ঞতা। তৃণমূল পর্যায়ে দলীয় কাউন্সিল ছাড়া উনার মনের মতো করে দলের পদবি দিয়েছেন। পদবিধারীদের গ্রহণযোগ্যতা শূন্যের কোঠায়। তাই দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের উনার মতের সঙ্গে দ্বিমত আছে। দ্বিধাহীনভাবে বলতে পারি জাতীয়তাবাদী সকল সংগঠনের নেতাকর্মীরা আমাদের সঙ্গে একমত পোষণ করছেন। ৭ নভেম্বরের শোডাউনে তা প্রমাণিত হয়েছে।

এদিকে উপজেলা জামায়াত মাঠ গোছাতে ব্যস্ত। ইতোমধ্যে তারা ৮টি ইউনিয়ন, পৌরসভা ও উপজেলায় কর্মিসমাবেশ করেছে। গত ১৬ বছর জামায়াতের বহু নেতাকর্মী আওয়ামী লীগের নির্যাতন, হামলা ও মামলার শিকার হয়েছে। ইতোমধ্যে তারা প্রত্যক্ষ ভোটে ইউনিয়ন, পৌর ও উপজেলা আমির নির্বাচিত করেছে। এ বিষয়ে জামায়াতের উপজেলা আমির গাজী সালাহ উদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, আমরা যা করেছি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করেছি। আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর যতটুকু জুলুম হয়েছে তা দেশবাসীকে হতবাক করেছে। জুলুমের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েও শহিদী এ কাফেলার সংগঠন হাল ছাড়েনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম