Logo
Logo
×

সারাদেশ

চাঁদপুরে জাহাজে খুন নড়াইলের আমিনুল-সালাউদ্দিন, এলাকায় শোকের ছায়া

Icon

মো. শাহীদুল ইসলাম শাহী, নড়াইল

প্রকাশ: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৬ পিএম

চাঁদপুরে জাহাজে খুন নড়াইলের আমিনুল-সালাউদ্দিন, এলাকায় শোকের ছায়া

ছবি: সংগৃহীত

চাঁদপুরের মেঘনা নদীর হাইমচর উপজেলার ইশানবালা এলাকায় এমভি আল-বাকেরা নামে সারবাহী একটি জাহাজে দুর্বৃত্তরা আক্রমণ চালিয়ে ৭ জনকে গলাকেটে ও মাথা থেতলে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে দুইজনের বাড়ি নড়াইলে। তাদের বাড়িতে এখন চলছে শোকের মাতম। নিহতদের পরিবারের সদস্যদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পরিবেশ।

নিহতদের মধ্যে রয়েছেন নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের উত্তর পাংখারচর গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব রহমান মুন্সির ছেলে জাহাজের সুকানি আমিনুল মুন্সী (৪১) ও ইঞ্জিনচালক লাহুড়িয়া ইউনিয়নের কালিগঞ্জ এলাকার এগারনলী গ্রামের আবেদ মোল্যার ছেলে মো. সালাউদ্দিন মোল্যা (৪০)। 

প্রতিবারের মতো এবারও জীবিকার তাগিদে জাহাজে গিয়ে তারা ফিরে এসেছেন লাশ হয়ে। তাদের এ মৃত্যুতে নড়াইলে তাদের পরিবারসহ এলাকাবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

তারা প্রত্যেকেই ছিলেন আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল এবং পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। হঠাৎ করে পরিবারের কান্ডারিকে হারানোর খবরে ভবিষ্যতের চিন্তায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নিহতদের পরিবারগুলো।

মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সরেজমিনে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের উত্তর পাংখারচর ও লাহুড়িয়া ইউনিয়নের কালিগঞ্জ এলাকার এগারনলী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রিয়জনদের মরদেহ ফিরে পেতে অপেক্ষায় থাকা পরিবারগুলোর সদস্যরা কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। দুর্বৃত্তদের আক্রমণে হত্যাকান্ডের শিকার উভয় পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্বজন হারানোর বেদনায় মূর্ছা যাচ্ছেন পরিবারের লোকজন। এ সময় তাদের আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন সমবেদনা জানাতে। 

নিহতদের মধ্যে একজন মো. সালাউদ্দিন মোল্যা (৪০)। তার বাড়ি লাহুড়িয়া ইউনিয়নের কালিগঞ্জ এলাকার এগারনলী গ্রামে। স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়ে সন্তান রেখে মারা গেছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন সালাউদ্দিন মোল্যা।  

নিহত সালাউদ্দিন মোল্যার ছেলে নাইম মোল্যা (১৮) জানান, ‘আমরা জানিনা কিভাবে এ হত্যাকান্ড ঘটেছে। আমার মায়ের সঙ্গে বাবার শেষ কথা হয়। সেসময় আমার মাকে জানিয়েছিলেন চাঁদপুর যাচ্ছেন তিনি। এরপর (সোমবার) দুপুরে খবর পাই আমাদের বাবা মারা গেছেন।’ তার এক চাচা লাশের খোঁজ নিতে চাঁদপুরে গেছেন বলে জানান তিনি। 

নিহত সালাউদ্দিন মোল্যার চাচাতো ভাই আরেক জাহাজের মাস্টার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা গতকাল (সোমবার) দুপুরে ফেসবুকের মাধ্যমে জানতে পারি আল-বাকেরা জাহাজে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এটা কোনো ডাকাতি ছিল না। কারণ দুর্বৃত্তরা হত্যার সময় কোনো কিছু নেয়নি। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। আমরা চাই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে দ্রুত গ্রেফতার করে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।’

জাহাঙ্গীর আলম আরও অভিযোগ করে বলেন, ‘চাঁদপুরের ওই নৌ রুটে ব্যাপক চাঁদাবাজি চলে। বিশেষ করে যেখানে এই ঘটনা ঘটেছে, সেই মাঝের চরে সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হয়। চাঁদা না দিলে মারধর করা হয়। বিষয়টি প্রশাসনও জানে, কিন্তু ব্যবস্থা নেয় না। এজন্য নিরুপায় হয়ে সবাই চাঁদা দিতে বাধ্য হয়।’ হয়তো সেই চাঁদাবাজরাই এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে পারে বলে তার ধারণা।

অপরদিকে, একই উপজেলার ইতনা ইউনিয়নের উত্তর পাংখারচর গ্রামের নিহত আমিনুল মুন্সীর স্বজন আকবর মুন্সী বলেন, কাজের উদ্দেশ্যে জাহাজে গিয়েছিলেন আমিনুল মুন্সী। সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) বিকেলে শোনেন তার স্বজন আমিনুল আর নেই।

প্রসঙ্গত, চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে এমভি আল-বাকেরা জাহাজে দুর্বৃত্তরা আক্রমণ চালিয়ে ৭ জনকে গলাকেটে হত্যা করেছে। সোমবার বেলা তিনটার পরে পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করে কোস্ট গার্ড ও পুলিশ। আর রক্তাক্ত অবস্থায় ৩ জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানোর পর তাদের মধ্যে দুজনের মৃত্যু হয়। জাহাজে খুন হওয়া ৭ জনই তাদের নিজ নিজ কেবিনে ছিলেন এবং সেখানে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। একমাত্র জীবিত থাকা আহত ব্যক্তির নাম সুকানি জুয়েল (২৮)। তাকে ঘটনাস্থল থেকে প্রথমে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে এবং পরে জরুরিভিত্তিতে ঢাকায় পাঠানো হয়।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম