আ.লীগের প্রভাব খাটিয়ে অর্ধকোটি টাকা আত্মসাত করেন প্রধান শিক্ষক
বাগেরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৭ পিএম
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মের বিরুদ্ধে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রায় অর্ধকোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর বিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষক লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
বিদ্যালয়ের টিচারস কাউন্সিলের সভায় গঠিত তিন সদস্যবিশিষ্ট আয়-ব্যয় নিরীক্ষা কমিটির মাসব্যাপী যাচাই-বাছাইয়ের পর প্রধান শিক্ষক বিধান ব্রহ্মের এ অর্থ আত্মসাতর ঘটনা ফাঁস হয়েছে।
দীর্ঘ নয় বছর ধরে তিনি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে বহু অনিয়ম-দুর্নীতি করেছেন। আয়-ব্যয় নিরীক্ষা কমিটির তিন সদস্য ওই বিদ্যলায়ের সহকারী শিক্ষক প্রভাত কুমার মজুমদার, সুশান্ত কুমার ব্রহ্ম ও স্মৃতি ঘরামী এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগপত্র ও শিক্ষকরা জানান, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ১৩ জন শিক্ষক, ৫ জন কর্মচারী ও ২৩০ জন শিক্ষার্থী রেয়েছে। বিধান চন্দ্র ব্রহ্ম ২০১৬ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের পর তিনি আওয়ামী লীগের চিতলমারী উপজেলা শাখার দপ্তর সম্পাদক পদে যোগ দেন। এরপর তিনি নয় বছর ধরে বিভিন্ন সরকারি বরাদ্দকৃত অর্থ, সংস্কার অনুদান এবং বিদ্যালয়ের সম্পদ থেকে অর্জিত বড় অংকের টাকা ও বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ আয় মিলিয়ে বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
টাকা আত্মাসাতের বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষকরা, কমিটির সদস্য, গণ্যমান্য ব্যক্তিরা ও অভিভাবক মহলে বহু আলোচনা-সমালোচনা হলেও তার ক্ষমতার প্রভাবের ভয়ে কেউই মুখ খুলতে সাহস পাননি।
গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর শিক্ষক ও অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তারা গত ২৬ অক্টোবর টিচারস কাউন্সিলের সভা ডাকেন। সভায় প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মের আমলে আয়-ব্যয়ের সকল হিসাব নিরীক্ষার জন্য রেজুলেশনের মাধ্যমে তিন সদস্যবিশিষ্ট অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটিতে সহকারী শিক্ষক প্রভাত কুমার মজুমদারকে প্রধান নিরীক্ষক, প্রশান্ত কুমার ব্রহ্ম ও স্মৃতি ঘরামীকে সহকারী নিরীক্ষকের দায়িত্ব প্রদান করা হয়। প্রধান শিক্ষকের দাখিলকৃত হিসাব সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র নিরীক্ষা করে এক মাস পর ২৬ নভেম্বর নিরীক্ষা কমিটি হিসাব দাখিল করেন।
নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্ম ৪৫ লাখ ৩৮ হাজার ২৭৬ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন উৎস হতে বড় অংকের টাকা অবৈধভাবে গ্রহণ করেছেন। এই টাকা ফেরত চাওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মের কয়েক দফা ঝগড়াঝাটি হয়েছে। তাই কোন উপায় না পেয়ে ওই বিদ্যালয়ের আটজন শিক্ষক প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মের বিরুদ্ধে চাকুরি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ১৯ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা কমিটির প্রধান নিরীক্ষক প্রভাত কুমার মজুমদার, সহকারী নিরীক্ষক সুশান্ত কুমার ব্রহ্ম, স্মৃতি ঘরামী ও অভিভাবক শংকর ব্রহ্ম বলেন, আমরা নিরপেক্ষ তদন্তসাপেক্ষে যাবতীয় টাকা ফেরতসহ প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্মের বিরুদ্ধে চাকুরি বিধি অনুযায়ী বিচার চাই।
কালশিরা রাজেন্দ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক তপন কুমার বিশ্বাস জানান, ওই প্রধান শিক্ষক আসার পর ২০১৬ সাল থেকে কোন আয়-ব্যয়ের হিসাব পাইনি। কমিটি করে প্রধান শিক্ষক হিসেবের দায়িত্ব দিয়েছেন। যাচাই-বাছাই শেষে কমিটি ওই অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে।
টাকা আত্মসাতের অভিযাগ অস্বীকার করে কালশিরা রাজেদ্র স্মৃতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিধান চন্দ্র ব্রহ্ম বলেন, ওরা নিজরাই নিরীক্ষা কমিটি করেছে। আমি কোন অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত নই।
চিতলমারী উপজলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা মোল্লাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হরেকৃষ্ণ অধিকারী বলেন, আসলে চিতলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস কুমার পাল ১০ দিনের একটি প্রশিক্ষণে ঢাকায় রয়েছেন। এখন আমি দায়িত্বে আছি। অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্ব মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাক দেওয়া হয়েছে।