ধর্ষণের শিকার প্রতিবন্ধী তরুণীর সন্তান প্রসব, আতঙ্কে ভুক্তভোগী পরিবার
ব্রাহ্মণপাড়া (কুমিল্লা) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০০ পিএম
কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া স্থানীয় মাতবর ও প্রতিবেশীর ধর্ষণের শিকার হতদরিদ্র মানসিক প্রতিবন্ধী তরুণী কন্যা সন্তান প্রসব করেছেন। নবজাতকের প্রাণ বাঁচাতে দত্তক দিয়েও অভিযুক্তদের হুমকি ধমকিতে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ভুক্তভোগী অসহায় পরিবার।
ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার চান্দলা ইউপির খলিফাপাড়া এলাকায়।
জানা যায়, হতদরিদ্র প্রতিবন্ধী কন্যাকে বিভিন্ন সময় ধর্ষণের অভিযোগ প্রতিবেশী মাতবর কালন মিয়া (৫৫) ও মিজান (৩০) নামে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ধর্ষণের শিকার তরুণী গর্ভবতী হওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হলে- ধামাচাপা দিতে অভিযুক্তরা দীর্ঘদিন ধরে মীমাংসার নামে প্রহসন ও নানাভাবে হয়রানি করেছে বলে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ।
এদিকে ধর্ষণে অন্তঃসত্ত্বা প্রতিবন্ধী ওই তরুণী গত কিছুদিন আগে কন্যা সন্তান প্রসব করে।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেন, নির্যাতিত নবজাতকের মাসহ পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে অভিযুক্তরা। এতে আতঙ্কে রয়েছে ভুক্তভোগী বৃদ্ধ মুক্তিযোদ্ধা ও তার পরিবারের সদস্যরা। ধর্ষিতা ও তার নবজাতক কন্যার জীবন নিয়ে শঙ্কিত পরিবার নবজাতককে পার্শ্ববর্তী কসবা উপজেলায় নিঃসন্তান দম্পতির কাছে দত্তক দিয়েছেন বলে নির্যাতিতার পরিবারের বরাতে জানা গেছে।
এ ঘটনায় গত ১১ নভেম্বর নির্যাতিতার ভাই বাদী হয়ে চন্দলা দক্ষিণপাড়া এলাকার জাবেদ মিয়ার ছেলে কালন ও এরশাদ মিয়ার ছেলে মিজানের বিরুদ্ধে কুমিল্লার আদালতে মামলা দায়ের করেন। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে অভিযোগটি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
মামলার পর থেকেই ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের হুমকি ধমকি ও হামলার ভয়ে আতঙ্কে রয়েছেন তারা।
তাদের অভিযোগ, এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় অভিযুক্তরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে বাড়ি ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেবে এবং পিটিয়ে এলাকা ছাড়া করবে বলে নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে। আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার ও সুবিচারের নিশ্চিতের দাবি জানিয়ে জেলা পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সহায়তা কামনা করছেন ভুক্তভোগী হতদরিদ্র মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ও তার পরিবারের সদস্যরা।
এ বিষয়ে স্থানীয় ৫ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জাবেদ মিয়া বলেন, গুরুতর অপরাধের এ ঘটনা সামজিকভাবে মীমাংসার যোগ্য নয়। তবুও ভবিষ্যৎ বিবেচনায় স্থানীয় এলাকার গণ্যমান্যরা একাধিকবার সালিশের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেছে। তবে সমাধান করা সম্ভব হয়নি। প্রতিবন্ধী নির্যাতিতা তরুণী মানসিকভাবে অসুস্থ এবং সরকারিভাবে ভাতাপ্রাপ্ত।
এ বিষয়ে ব্রাহ্মণপাড়া থানার ওসি মো. দেলোয়ার হোসেন জানান, আসামিরা এলাকায় নেই। পলাতক থাকায় এখনো গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। ভিকটিমের পরিবারের মাধ্যমে নবজাতকের ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছে।
তিনি জানান, ভিকটিম মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় আপাতত নবজাতককে নিঃসন্তান সেই দম্পতির জিম্মায় রাখা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আশা করি তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই আসামিদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হব।