চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদের মিছিলে হামলার অভিযোগে দায়ের করা মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত এক আসামিকে থানায় এসে আড্ডা, ঘোরাঘুরি এমনকি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার অভিযোগও পাওয়া গেছে।

অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম নুরুল আমিন (৫২)। তিনি উপজেলার আধুনগর ইউনিয়নের রশিদারঘোনা এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সালামের পুত্র ও আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৯নং ওয়ার্ড শাখার সভাপতি। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মিছিলে হামলায় গত ৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের সদরঘাট থানায় মোমেন হোসেন জয়ের দায়ের করা মামলার ১৬২নং তালিকাভুক্ত আসামি।

সম্প্রতি এক ছেলে পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির সুবাদে এলাকায় অন্যের জমি দখল করে অবৈধভাবে ঘর নির্মাণসহ নানাবিধ অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

জানা যায়, গত ১৬ ডিসেম্বর অভিযুক্ত নুরুল আমিন থানায় হাজির হয়ে একই এলাকার বাসিন্দা সোলতান আহামদের ছেলে জহির উদ্দীন, সাংবাদিক দেলোয়ার হোসেন রশিদীসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে একটি জিডি করেছেন।

অভিযুক্ত নুরুল আমিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, জিডি আমি করিনি, আমার ছেলে করেছে। তবে জিডিতে বাদী নুরুল আমিনের নাম ও স্বাক্ষর রয়েছে।

তার দুই ছেলে অরাফাত ও ফরহাদ নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মাস্টার হাফেজ শহিদুল্লাহ জানান, বিগত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের আমলে নুরুল আমিনের পরিবারটি এলাকার এক ভয়ঙ্কর আতঙ্কের নাম ছিল। বর্তমানে ও তারা পুলিশের ক্ষমতা দেখিয়ে নানা অপকর্ম করে যাচ্ছেন।

ভুক্তভোগী জহির উদ্দীন জানান, সন্ত্রাসী নুরুল আমিন গং বিগত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আমার পৈত্রিক জায়গা জবরদখল করে রেখেছে। ফ্যাসিবাদ সরকারের আমলে পুলিশে চাকরি পাওয়ার পর থেকে সে বেপরোয়া হয়ে উঠে। 

বিগত ৮ ডিসেম্বর তার ছেলে পুলিশ কনস্টেবল মাঈনুদ্দীন সন্ত্রাসী কায়দায় আমার বাড়ির আঙিনার জায়গা দখল করে পোল্ট্রি খামার তৈরি করেছিল। তাদের হুমকি-ধমকিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, লোহাগাড়া থানা ও সেনাবাহিনীর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি। তাতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমার পরিবারের ওপর নানারকম হুমকি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে, আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে লোহাগাড়ায় কর্মরত সাংবাদিকের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করি।

সাংবাদিক দেলোয়ার জানান, ভূমিদস্যু সন্ত্রাসী আমিন গংদের অনিয়মের কার্যকলাপের সচিত্র সংবাদ প্রকাশ করায় তিনি আমার বিরুদ্ধে পুলিশের প্রভাব খাটিয়ে লোহাগাড়া থানায় মিথ্যা জিডি করেছেন।

ভুক্তভোগীদের দাবি, তার ছেলে পুলিশ কনস্টেবল মাঈনুদ্দীন লোহাগাড়া থানার এএসআই ইকরামকে দিয়ে গোপনে আঁতাত করে এ ভুয়া জিডি নথিভুক্ত করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে এএসআই ইকরামের নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি জিডির বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন, তবে ওসির অনুমতি ছাড়া কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

বিষয়টি নিয়ে লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আরিফুর রহমানের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিয়ে এমন কি মেসেজ পাঠিয়েও কোনো বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।