Logo
Logo
×

সারাদেশ

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরল দৃষ্টান্ত

দেওয়ালের এক পাশে মন্দির অপর পাশে মাদ্রাসা

Icon

বিরামপুর (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:২৩ পিএম

দেওয়ালের এক পাশে মন্দির অপর পাশে মাদ্রাসা

দিনাজপুরের বিরামপুরে ইটের দেওয়ালের এক পিঠে সনাতনী মন্দির ও অপর পিঠে ইসলামী মাদ্রাসা দুই ধর্মের মতবিরোধ ছাড়াই সম্প্রীতির বিরল মেল বন্ধন হিসাবে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। হিন্দু ধর্মের পুরোহিত ও মুসলিম ধর্মের মাদ্রাসা প্রধানের সমন্বয়ে চলে পূজা-অর্চনা এবং কুরআন তিলাওয়াত।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিরামপুর পৌর শহরের শালবাগান কালীবাড়িতে রয়েছে সর্বজনীন কালী মন্দির। সেই চত্বরে দুর্গাপূজাও উৎযাপন করা হয়। ইটের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা এই মন্দিরটির উত্তর দেওয়ালের অপর দিকে ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ছালেহিয়া দারুস সুন্নাহ এতিমখানা ও লিল্লাহ বোর্ডিং, হাফেজিয়া মাদ্রাসা। এ মাদ্রাসায় ৪৩ জন ছাত্র ইসলামী শিক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে।

সূচনা লগ্ন থেকে মন্দিরে পূজা অর্চনা এবং হাফেজিয়া মাদ্রাসায় কুরআন শিক্ষার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। দীর্ঘ তিন যুগ সহাবস্থানে থেকে ধর্মীয় কার্যক্রম চললেও সেখানে কখনো কোনো মতবিরোধের সৃষ্টি হয়নি। বরং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পূজা-পার্বণে মুসলিমদের সহযোগিতা স্থানীয় হিন্দুদের উজ্জীবিত করে রাখে।

বিরামপুর থানার ওসি মমতাজুল হক রোববার সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দুটি প্রতিষ্ঠান সরজমিনে পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তার উপস্থিতিতে দুই সম্প্রদায়ের ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ তাদের অভিব্যক্তি তুলে ধরেন।

হাফেজিয়া মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ওয়াজেদুল ইসলাম বলেন, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনো দিন তাদের লেখাপড়া ও কুরআন শিক্ষার কাজে কেউ ব্যাঘাত সৃষ্টি করেনি। দেওয়ালের অপর পিঠে অবস্থিত মন্দিরের পুরোহিত ও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কমিটির লোকজনের সঙ্গে সুমধুর সম্পর্ক বিরাজ করছে।

সার্বজনীন কালী মন্দিরের পুরোহিত জগদীশ সাধু (৯৫) বলেন, তিনি ৫০ বছর ধরে এই মন্দিরে পূজা অর্চনার কাজ করে আসছেন। কোনো দিন কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেনি। বরং এলাকার মুসলিমরা তাদের সহযোগিতা করে থাকেন। মন্দিরের পুরোহিত ও মাদ্রাসার শিক্ষকের সমন্বয়ের মাধ্যমে চলে হিন্দুদের পূজা-পার্বণ এবং মুসলিমদের ধর্মীয় কাজ।

মাদ্রাসার সহ-সভাপতি মশকুরুল হক বলেন, আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির মাঝে ধর্মীয় সহাবস্থানের মাধ্যমে উভয়ের ধর্মের কার্যাদি পালন করে যাচ্ছি।

বিরামপুর উপজেলা পূজা উৎযাপন কমিটির সভাপতি ও সার্বজনীন কালী মন্দিরের সভাপতি মহিলা কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ শিশির কুমার সরকার বলেন, এক দেওয়ালের এপিঠ ওপিঠ দুটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থাকলেও আমাদের মাঝে কোনো বিরোধ নেই। উভয়ে উভয়কে সহযোগিতার মাধ্যমে সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন করে থাকি। এছাড়া উপজেলার কোথাও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্ম পালনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়নি। আমরা হিন্দু-মুসলিম সামাজিক সহাবস্থানে বসবাস করে আসছি।

বিরামপুর থানার ওসি মমতাজুল হক বলেন, হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরল মেলবন্ধন দেখে তিনি অভিভূত। ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ ও প্রতিবেশীদের কথায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে ভবিষ্যতেও ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সামাজিক বন্ধনকে সুদৃঢ় করার আহবান জানান।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম