Logo
Logo
×

সারাদেশ

স্কুল পরিদর্শনের নামে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের ঘুস বাণিজ্য

Icon

দাগনভূঞা (ফেনী) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:১৬ পিএম

স্কুল পরিদর্শনের নামে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের ঘুস বাণিজ্য

দাগনভূঞা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শফিউল আজম ঘুস বাণিজ্য করে আখের গুছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। তাকে সহযোগিতা করছেন ওই অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার মিজানুর রহমান।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের প্রাত্যাহিক কর্মকাণ্ডে তাকে ও সুপারভাইজারকে অফিসে পাওয়া যায় না। প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারীরা শিক্ষা অফিসে গিয়ে ফেরত আসতে হচ্ছে। একদিকে সময় যেমন অপচয় হচ্ছে অপরদিকে আর্থিক গচ্চাও দিতে হচ্ছে। পরিদর্শনে গিয়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ আপ্যায়নের নামে ঘুসের টাকা দেওয়ার জন্য চক্ষু লজ্জাহীনভাবে দাবি করেন। 

তিনি উপজেলায় অবস্থান না করে চট্রগ্রাম থেকে আসতে ১২টা বেজে যায়। এসেই পরিকল্পনা মোতাবেক একাডেমিক সুপারভাইজারকে নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিদর্শনের নামে ঘুসের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ফন্দি-ফিকির করেন।

যুগান্তর প্রতিনিধির কাছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানরা অভিযোগ করেছেন। বিগত ১৬ বছরের দু:শাসনের অবসান ঘটিয়ে জুলাই বিপ্লবের ফসল যখন জাতি উপভোগ করবে প্রস্তুতি নিচ্ছে- তখনই দেখা যাচ্ছে দাগনভূঞা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের নির্লজ্জ ঘুস গ্রহণ উপজেলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে হতবাক করছে। 

উপজেলার সুজাতপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ,বিদ্যালয়ের কাছে প্রাপ্য টাকা না দিয়ে বিগত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট সরকারের ছত্রছায়ায় থেকে ধরাকে সরাজ্ঞান করছেন।

দীর্ঘ ১৪ বছর ভোটহীন পরিচালনা কমিটি মনোনীত করে শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যসহ সব অপকর্ম বাধাহীনভাবে করেছেন। এমনকি ওই স্কুলের সাবেক সিনিয়র শিক্ষক মো. আবু তাহেরের শিক্ষক প্রতিনিধি নির্বাচনে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র ছুড়ে ফেলে দিয়ে মনোনীত কমিটি বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঘোষণা করে রামরাজত্ব সৃষ্টি করেছেন। 

অভিযোগকারী ওই শিক্ষক বিদ্যালয়ের সাইক্লোন সেন্টার, ফ্যাসেলেটিজ দ্বিতল ভবন, ৩৯ শতাংশ জমিন ক্রয়সহ বিদ্যালয়ের স্থায়ী আয়ের জন্য ১৬টি দোকান নির্মাণ করে দিয়েছেন। দোকান নির্মাণে ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৯৬ টাকা। বারবার প্রধান শিক্ষকের কাছে ঋণের টাকার জন্য লিখিত ও মৌখিক আবেদন করেও কোনো জবাব না পাওয়ায় তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ১৫ বছর পর জুলাই বিপ্লবে জগদ্দল পাথরের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মসনদে বসে অনিয়মকে নিয়মে পরিণত করে নিয়োগ বাণিজ্যসহ সব অপকর্ম করেছেন। 

গত ৫ আগস্ট ক্যাডাররা গা-ঢাকা দিলে নির্যাতিত শিক্ষক বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিবেদিতা চাকমা ২১ অক্টোবর উনার দপ্তরে শুনানি করে মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে বিদ্যালয়ে পরিদর্শন করে সঠিক তথ্য-উপাত্তভিত্তিক প্রতিবেদন জমা প্রদানসাপেক্ষে পরবর্তী শুনানি হবে বলে শুনানি স্থগিত করেন। 

মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ও অপকর্মের নাটের গুরু একাডেমিক সুপারভাইজার মিজানকে নিয়ে তদন্ত করেন। অভিযোগকারী সব দালিলিক প্রমাণপত্র শিক্ষা অফিসারের কাছে সরবরাহ করলে তিনি আমলে না নিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এক তরফা প্রধান শিক্ষকের পক্ষে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। 

নির্বাহী কর্মকর্তা বিগত ২৭ নভেম্বর পুন:শুনানিতে দাখিলকৃত প্রতিবেদন অভিযোগকারী তীব্র প্রতিবাদসহ চ্যালেঞ্চ করলে তিনি শিক্ষা অফিসারের ওপর অসন্তোস প্রকাশ করে পরদিন পুনরায় সঠিক প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে শুনানি স্থগিত করেন; কিন্তু নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা উপেক্ষা করে তার বদলি হওয়ায় শিক্ষা অফিসার বিভিন্ন টালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করছেন। যে কারণে এখনো বিষয়টি সুরাহা হয়নি। 

ক্ষতিগ্রস্ত অভিযোগকারী শিক্ষক মোহাম্মদ আবু তাহের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা স ম আজহারুল ইসলাম বরাবর শিক্ষা অফিসার ও তার সহকর্মীর বিরুদ্ধে শাস্তি দাবি করে অভিযোগ দাখিল করেছেন। অভিযোগকারী নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে শুনানিতে জেলা উপজেলার গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।  

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ শফিউল আজম ঘুস গ্রহণের বিষয়টি অস্বীকার করেন। সব দালিলিক প্রমাণ দিয়েও মার্কেটের প্রাপ্যতার দালিলিক প্রমাণ নেই কেন- প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হলে তিনি সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি একাডেমিক সুপারভাইজার মিজানুর রহমান জানেন বলে প্রতিবেদককে জানান।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম