চরম বিপর্যয়ের মুখে রাজধানীর পরিবেশ
প্রকাশ্যে বিক্রি ও ব্যবহার হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ
মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া, ডেমরা (ঢাকা)
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:৪২ পিএম
ফাইল ছবি
নজরদারি না থাকায় নিষিদ্ধ সত্ত্বেও রাজধানীর সব বাজারে পলিথিন বিক্রি ও ব্যবহার হচ্ছে। ফলে চরম হুমকির মুখে পড়েছে পরিবেশ। ব্যবহৃত ওইসব পলিথিনের আশ্রয়স্থল হচ্ছে ময়লার ভাগাড় ও জলাশয়। এসব পলিথিন শেষ পর্যন্ত মাটি ও পানির সঙ্গে মিশে পরিবেশের জন্য মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে। এছাড়া যত্রতত্র পলিথিন পুড়িয়ে ফেলার কারণেও পানি, বায়ু ও মাটি দূষিত হচ্ছে।
সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, মুদি দোকান, কাঁচাবাজার, মাছের বাজারসহ সর্বত্রই নিষিদ্ধ ছোট, বড়, মাঝারি পলিথিন ব্যাগের ছড়াছড়ি। এর মধ্যে রয়েছে হাতলসহ ও হাতল ছাড়া পলিথিন ব্যাগ। প্রকাশ্যেই আইন ভঙ্গ করে ব্যবসায়ী ও ব্যবহারকারীরা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছেন। বিভিন্ন অভিজাত শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাত ও বিপণিবিতাণগুলোতেও প্রচলিত আইনকে তোয়াক্কা না করে প্রকাশ্যে পলিথিন ব্যবহার করে চলেছেন সংশ্লিষ্টরা। অথচ দেখার যেন কেউ নেই।
সরেজমিন আরও দেখা গেছে, ডেমরা, রামপুরা, খিলগাঁও, সবুজবাগ, পল্টন, মিরপুরসহ রাজধানীর বাজারগুলোতে পলিথিন বিক্রি বহাল রয়েছে। বেশির ভাগ ক্রেতা বাজারে যান ব্যাগ ছাড়াই। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই পলিথিন রাখতে হয় সব মাছ ও সবজির দোকানগুলোতে। পাশাপাশি মুদি দোকান থেকে শুরু করে আলু-পেঁয়াজ, মাছ-মাংস, ভূসি-কুড়া, সবজি, হার্ডওয়্যার, পোশাকের দোকানসহ প্রায় সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, যেখানে ব্যাগের প্রয়োজন সেখানেই নিষিদ্ধ পলিথিনে সয়লাব। ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও বিভিন্ন হাসপাতালসহ সর্বত্রই পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার হচ্ছে।
বাজারগুলো ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আশা প্যাকেজিং, রিপন প্যাকেজিং, রাব্বি প্যাকেজিং, নিশিতা প্যাকেজিং ও মানিক প্যাকেজিং নামে কয়েকটি কোম্পানি গোপনে বাজারে পলিথিন দিয়ে যায়। বড় বড় মার্কেটগুলোর দোকানিরা এসব কোম্পানিকে বিভিন্ন ডিজাইনের পলিথিন ব্যাগ তৈরির অর্ডার দেন।
রাজধানীর মেরাদিয়া বাজারে আসা ক্রেতা হাবিবুল্লাহ বলেন, পলিথিন হলে ফ্রিজে সবজি, মাছ-মাংস ভালোভাবে রাখা যায়। তাই বাজার করার সময় বাজারের সাথে পলিথিন নিয়ে যাই। পরিবেশের ক্ষতির বিষয়ে তিনি বলেন, বিকল্প ব্যবস্থা বের হলে আমরা সেটাই ব্যবহার করব।
এদিকে পরিবেশ অধিদফতরের দাবি, রাজধানীসহ আশপাশের সব এলাকায় পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বিক্রয়, প্রদর্শন, মজুত, বিতরণ এবং বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার বন্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। এর ফলে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার অনেকটা কমে আসবে। পলিথিনের ব্যবহার শূন্যে নামিয়ে আনতে জনসচেতনতা ও বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণেও কাজ চলছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে।
কিন্তু বাস্তবের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। অভিযান হলেও মোটেও থেমে নেই নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার। শুক্রবার রামপুরা বাজারে গিয়ে দেখা যায় প্রায় সব দোকানেই বিক্রেতারা পলিথিনে ভরেই পণ্য বিক্রি করছেন। ক্রেতারাও পলিথিনে করেই নিচ্ছেন। মূলত, পলিথিনের সহজলভ্যতার কারণেই দিন দিন এটি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
ঢাকা ওয়াসার মতে, শুধু ঢাকায় ১০০ কোটি পলিথিন ব্যাগ ভূপৃষ্ঠের নিচে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। ফলে মাটির নিচেও সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন স্তর, যা ভূপৃষ্ঠে স্বাভাবিক পানি ও অক্সিজেন প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে। জমির শস্য উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস করছে। পলিথিন পোড়ালে বায়ু ও মাটি দূষিত হয়। পলিথিন ব্যাগ মাটিতে সূর্যালোক, পানি ও অন্যান্য উপাদান প্রবেশের অন্তরায় হিসেবে কাজ করে। আর রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠকে ক্রমাগত উত্তপ্ত করে তুলে।
ইউনেস্কোর তথ্য মতে, প্রতি বছর ১০ লাখ সামুদ্রিক পাখি প্লাস্টিক দূষণের কারণে মারা যায়। এক লাখ সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী প্রাণী প্লাস্টিক বর্জ্যরে কারণে মারা যায়। পরিবেশবিদদের মতে, পলিথিন তৈরিতে ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহৃত হয়। পলিথিন এমন একটি পণ্য, যা মাটির সঙ্গে মিশতে আনুমানিক দেড় হাজার বছর সময় লাগে।
এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (উপসচিব) মুহা. শওকাত আলী (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) বলেন, পলিথিন বন্ধে গত মাসেও রাজধানীতে ১৩টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। তবে কিছুটা সময় লাগবে। পরিবর্তন আসবে। সারাদেশেই পর্যায়ক্রমে পলিথিন বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।