পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির প্রধান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা বলেছেন, আজকে পাহাড়ে যে বাস্তবতা তা বিরাজ করছে সম্পূর্ণ অনিশ্চিত ও নিরাপত্তাহীন এক পরিস্থিতির মধ্যে। এখানকার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার কোনো নিশ্চয়তা নেই। নেই কোনো নিরাপত্তা। আজকে এখানে যে বাস্তবতা তাতে এখানকার মানুষ সব সময় নানাভাবে নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছে, যা সবক্ষেত্রে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করে চলেছে।

শুক্রবার পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অন্যতম শিশু সদন রাঙামাটির রাঙাপানি মোনঘর প্রতিষ্ঠার ৫০ বছরপূর্তির দুই দিনব্যাপী সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের চৌদ্দটি জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ব্রিটিশ আমল থেকে নিষ্পেষিত হয়ে আসছে। বর্তমানেও তাদের জীবন অতিবাহিত হচ্ছে লড়াই-সংগ্রামের মাধ্যমে। এ পরিস্থিতির মধ্যেও আজকে সাধারণ শিক্ষায় অনেকদূর এগিয়ে গেছে তারা। ভবিষ্যতে আরও অনেক এগিয়ে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। তবে কেবল একাডেমিক শিক্ষায় জীবন ও সমাজকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। এজন্য দরকার বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য-প্রযুক্তিগত শিক্ষা। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে পাহাড়ি জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল এখানকার অন্যতম শিক্ষানুরাগী চিত্ত কিশোর চাকমার। এরপর মোনঘর বিশাল অবদান রেখে চলেছে। মোনঘরের এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজন সবার আন্তরিক সহযোগিতা।

এ সময় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চাকমা সার্কেল চিফ রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায় বলেন, মোনঘরের উন্নয়নে আমার যথাসাধ্য সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। মোনঘরের সঙ্গে চাকমা রাজবাড়ীর যে একটা আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে তা চিরকাল থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

সকাল ১০টায় মোনঘর খেলার মাঠে শিশু সদনটির পরিচালনা কমিটির সভাপতি গৈরিকা চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালার প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধনীতে আরও উপস্থিত ছিলেন খাগড়াছড়ির মং সার্কেল চিফ সাচিং প্রু চৌধুরী, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক সদস্য নিরুপা দেওয়ানসহ অন্য অতিথিরা।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন উদযাপন কমিটির আহবায়ক কীর্তি নিশান চাকমা। এর আগে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও মুর‌্যাল উন্মোচন করা হয়। বিকালের অধিবেশনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সন্ধ্যায় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

দ্বিতীয় দিন শনিবার সকালের অধিবেশনে থাকবেন প্রধান অতিথি হিসেবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কাজল তালুকদার এবং সম্মানিত অতিথি হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান রিপন চাকমা উপস্থিত থাকবেন।

ওই দিন বিকালে সমাপনী অনুষ্ঠানে থাকবেন প্রধান অতিথি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে থাকার কথা রয়েছে রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শওকত ওসমান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ ও পুলিশ সুপার ড. এসএম ফরহাদ হোসেন।