Logo
Logo
×

সারাদেশ

‘ঘর চাইছনু, মোর কাছত ২৫ হাজার ট্যাকা নিছে ইউএনওর লোক রায়হান’

Icon

রংপুর ব্যুরো

প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:০৩ পিএম

‘ঘর চাইছনু, মোর কাছত ২৫ হাজার ট্যাকা নিছে ইউএনওর লোক রায়হান’

রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের অফিস সহকারী রায়হান মিয়ার বিরুদ্ধে উৎকোচ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেওয়ার নামে তিনি প্রতিটি পরিবারের কাছে মোটা অংকের টাকা উৎকোচ (ঘুস) নিয়েছেন বলে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। 

যাদের কাছে উৎকোচ গ্রহণ করেছেন ঘর বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদের মধ্যে লতিবপুর ইউনিয়নের বাতাসন লতিবপুর গ্রামের বিধাব কহিনুর বেওয়া বলেন, ‘বাবা মুই গরিব মানুষ। আশ্রয়ণের ঘর চাইছনু। এজন্যে মোর কাছত ইউএনও সারের অফিসের লোক রায়হান মিয়া মোর কাছত ২৫ হাজার ট্যাকা নিছে। মোক ঘরও দেয় নাই। পরে মুই টাক ফেরত চাইছনু ১৩ হাজার ট্যাকা ফেরত দিছে। বাকি ট্যাকা দিব্যার পাবার নয় কইছে। এ্যালা মুই কি করিম সুদের ওপর টাকা নিছং...’।  

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, অনুসন্ধানে আরও তথ্য মিলেছে উপজেলার বাতাসন লতিবপুর গ্রামের মৃত রজব উদ্দিনের স্ত্রী কহিনুর বেগম (৭০) ও তার ছেলের স্ত্রী বানেছা বেগম (৪০) গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ চেয়ে গত ২০২৩ সালে ১০ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর দুটি আবেদন করেন। দীর্ঘদিন পর একদিন মিঠাপুকুর ইউএনও অফিস সহকারী রায়হান আবেদন কপি থেকে ভুক্তভোগী বিধবা মহিলা কহিনুরের নাম্বার নিয়ে আবেদন খরছের কথা বলে দুই দফায় ৫০০০ টাকা ঘুষ গ্রহণ করেন। এরপর কহিনুর ও বানেছা বেগম ঘর বরাদ্দ পেয়েছে এই কথা জানিয়ে দুটি ঘরের কথা বলে দুই দফায় আরও ২০ হাজার টাকা উৎকোচ ঘুস গ্রহণ করেন।

এদিকে দীর্ঘদিন পর উপজেলার রাণীপুকুর ইউনিয়নের ভক্তিপুর আশ্রয়ন প্রকল্পে  ঘর বরাদ্দ পায় বিধবা কহিনুর বেওয়া  (৭০)। কিন্তু ঘরে উঠার আগেই আশ্রয়নের প্রকল্পের আশেপাশের স্থানীয় ব্যক্তিরা ঘর দখল করে নেয়ায় ঘরে উঠা সম্ভব হয়নি এই বিধবার। একদিকে সুূদ কারবারির কাছে নেওয়া টাকার সুদের চাপ অন্যদিকে বরাদ্দ পাওয়া ঘরে উঠতে না পাওয়ায়  টাকা ফেরত পেতে চাপ দেয়ার পর স্থানীয় এক নেতার মধ্যস্থতায় ১৩ হাজার টাকা ফেরত পেলেও বাকি ১২ হাজার টাকা ফেরত পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন বিধবা এই বৃদ্ধা নারী।

মিঠাপুকুরের রাণীপুকুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তসিলদার মেহফুজ আল রেজা বলেন, এসিল্যান্ড স্যারের নির্দেশে রাণীপুকুর ইউনিয়নের ভক্তিপুর আশ্রয়ন প্রকল্পে বৃদ্ধা কহিনুরকে ঘরে উঠিয়ে দেওয়ার জন্য গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি যাওয়ার পর সেখানে বসবাসকারীরা ঘর তালাবদ্ধ করে চলে যাওয়ায় অবৈধ বসবাসকারী চিহ্নিত করে ঘর বরাদ্দ দেয়া সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত রায়হান মিয়া বলেন, ২৫ হাজার টাকা নেইনি। ঘর বরাদ্দ পাওয়ার পর অই মহিলা খুশি হয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়েছিল চা খাওয়ার জন্য। চেয়ারম্যান মেম্বারেরা তো একটা করি ঘরের জন্য ৩০-৪০ হাজার করি টাকা নিছে। অই মহিলা ঘরে উঠতে না পারায় স্থানীয় এক নেতার মধ্যস্ততায় ১৩ হাজার টাকা ফেরত দিয়েছি। তার সঙ্গে আমার আর কোন ঝামেলা নাই।

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিকাশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় মিঠাপুকুর উপজেলায় ১২ শতাধিক ভূমিহীনকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আরও ৩৪০ জন ভূমিহীনকে ঘর বরাদ্দ দেয়ার কাজ চলমান রয়েছে। আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দেয়ার নামে ঘুষ গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম