চাঁদাবাজি করে কোটিপতি আ.লীগ নেতা
আনোয়ার হোসেন রনি, ছাতক (সুনামগঞ্জ)
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫১ এএম
ছিলেন জাতীয় পার্টির অঙ্গ সংগঠন জাতীয় যুবসংহতির ছাতক উপজেলার সাধারণ সম্পাদক। বিয়ে করেন একই উপজেলার যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল আহমদের বোনকে। বিল্লাল সাবেক এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের চাচাতো ভাই। বিয়ের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা শুরু হয়। একপর্যায়ে যুবসংহতির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ভাগিয়ে নেন আওয়ামী লীগের কালারুকা ইউনিয়ন শাখার সাধারণ সম্পাদকের পদ। এরপর দলীয় পদ-পদবির প্রভাব দেখিয়ে বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি। নিজস্ব ক্যাডারদের দিয়ে ‘আফতাব বাহিনী’ গঠন করে নিয়ন্ত্রণে নেন পুরো উপজেলা। দালালি দখল চাঁদাবাজি আর অর্থ আত্মসাতের মধ্য দিয়ে বনে যান কোটিপতি। রাজাপুর গ্রামের ফখর উদ্দিনের ছেলে আফতার উদ্দিনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগের পদ ভাগিয়ে আফতার উদ্দিন পিআইও অফিসসহ থানায় দালালি, এলাকায় চাঁদাবাজি, গ্রাম্য সালিশের নামে জামানতে টাকা আত্মসাৎ, নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড, অত্যাচার নির্যাতন চালিয়ে মহল্লাবাসীকে জিম্মি করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে প্রতি মাসে উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের রাজাপুর, হাসনাবাদ, খাইরগাঁও, আকুপুরসহ ২০টি গ্রামের বিএনপির কর্মীদের পুলিশের ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করেন। জঙ্গিবাদ দোহাই দিয়ে স্থানীয় আলেমদের করতেন হয়রানি-নির্যাতন।
তার এ অবৈধ আয়ের ভাগ পেতেন সাবেক এমপি মুহিবুর রহমান মানিক, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল আহমদ ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারাও। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও আফতার উদ্দিনের দাপট কমেনি। কালারুকা ইউনিয়নের রাজাপুরে (মাঝপাড়া) ৩ ডিসেম্বর সকালে আফতাব বাহিনীর ক্যাডার আরফাত আলীর নেতৃত্বে কৃষক আব্দুল হকের কাছে চাঁদা দাবি করা হয়। এ সময় তাদের কথামতো চাঁদায় না দেওয়ায় প্রথমে কথা-কাটাকাটি এবং পরে এ নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পালটাধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় আব্দুল হক বাদী হয়ে আওয়ামী লীগ নেতা আফতাব উদ্দিনকে প্রধান আসামি করে ১৫ জনের নাম উল্লেখ্য করে ৯ ডিসেম্বর থানায় মামলা করেন। মামলা পর আওয়ামী লীগ নেতা আফতাব উদ্দিন এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছে। এসব হামলা ভাঙচুর লুটপাটের ঘটনা বিভিন্ন খাতে নিতে আফতাব উদ্দিনের ভাতিজা সেলিম আহমদ বাদী হয়ে গ্রামের সালিশ ব্যক্তি নুরউদ্দিনকে প্রধান আসামি করে ২৯জনের নামে ১৫ ডিসেম্বর আদালতে পিটিশন মামলা করেন। এ মামলা নিয়ে গ্রামবাসীদের মধ্যে বর্তমানে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এছাড়াও আফতার উদ্দিনের বিরুদ্ধে ওমর ফারুক চান মিয়া নামে এক সাংবাদিকের প্রায় কোটি টাকা মূল্যের গোবিন্দগঞ্জ-ছাতক সড়কের রাজাপুর বাজারস্থল শংকরপুর মৌজার ২৩ শতক জমি ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে দখলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় প্রতিবাদ করতে গিয়ে তিনি হামলা মামলার শিকারও হয়েছেন। শতাধিক গরিব ব্যক্তিকে সরকারি নলকূল পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ২৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতা আফতার উদ্দিনের মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় এ ব্যাপারে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আশরাফুল আলম চৌধুরী বলেন, আসামিরা পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা যাচ্ছে না। তবে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।