গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে দুদকের অভিযান
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৫ এএম
গোপালগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে হাসপাতালে রোগীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়, চিকিৎসকরা অনুপস্থিত, সেবায় অব্যবস্থাপনাসহ নানা অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত হাসপাতালের প্রতিটি বিভাগে দুদক অভিযান চালায়। প্রথমে দুদকের কর্মকর্তারা রোগী সেজে হাসপাতালে বিভিন্ন শাখার ভিডিও ধারণ করে। পরে তারা এসব বিষয়ে প্রকাশ্যে অভিযান পরিচালনা করে।
দুদকের গোপালগঞ্জের সমন্বিত জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সদর হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলোতে চরম অব্যবস্থাপনা রয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট বিভাগে চিকিৎসক অনুপস্থিত, এমআরই, সিটি স্ক্যান মেশিন আট বছর অকেজো পড়ে থাকা, স্টোর রেজিস্ট্রার আপ টু ডেট না রাখা, হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারি সার্টিফিকেট বাণিজ্যে জড়িত থাকার বিষয়ে প্রমাণ পেয়েছে।
এর পরিপ্রেক্ষিতে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মশিউর রহমানের নেতৃত্বে পাঁচজন ওই হাসপাতালে অভিযান চালায়। এ সময় বিভিন্ন ধরনের নথি যাচাই, কয়েকজন চিকিৎসকসহ, সেবাপ্রত্যাশী রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন দুদকের কর্মকর্তারা।
সরকারি নির্ধারিত টাকার অতিরিক্ত টাকা আদায়, এক্স-রে মেশিনের ফ্লিম না থাকার অজুহাতে দীর্ঘ সময় এক্সরে করতে না পারায় সাধারণ মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিতসহ অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পায় দুদক।
অভিযানের বিষয়ে গোপালগঞ্জ দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মশিউর রহমান বলেন, তাদের একটি দল হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড, মেডিসিন স্টোর ও ওষুধ সরবরাহ কেন্দ্র, শারীরিক পরিক্ষা কক্ষগুলোতে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় সেবাপ্রত্যাশী রোগী উপস্থিত থাকলেও আউটডোরে অধিকাংশ চিকিৎসক ও কর্মচারী বিনা অনুমতিতে কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন। এতে অনেক চিকিৎসাসেবা নিতে আসা রোগী সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
মশিউর রহমান বলেন, হাসপাতালের এমআরই, সিটি স্ক্যান মেশিন আট বছর ধরে অচল রয়েছে। কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি সিন্ডেকেট ইচ্ছাকৃত মেরামত না করে রোগীদের উচ্চ মূল্যে স্থানীয় ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে সেবা নিতে বাধ্য করে। ওই সব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে তাদের গোপন লেনদেন রয়েছে বলে অভিযোগে জানা গেছে।
তিনি বলেন, কম্বল থাকলেও বিতরণ করে স্টোরে রেখে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ইসিজি করিয়ে ৪শ’-৫শ’ টাকা নিচ্ছে। ট্রলিম্যানরা রোগীদের জিম্মি করে টাকা আদায়ের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে প্রধান কার্যালয়ে লিখিত পাঠানো হবে। পরে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাগেরহাটের মোল্লাহাট থেকে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা মরিয়ম আক্তার ( ৪০) বলেন, আমি গতকাল এসে ফিরে গেছি। আজ আবার আলট্রাসনো করাতে এসেছি করাতে পারিনি। এখানে লোকদের যারা টাকা দিতে পারে তাদের সিরিয়াল দেয়। আমাদের বলে আজ আর হবে না, সিরিয়াল শেষ।
গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বলেন, হাসপাতালের টিকিট কাউন্টারে রোগীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায়, দীর্ঘদিন এমআরআই, সিটি স্ক্যান, ডিজিটাল এক্স-রে মেশিন অকেজোসহ কয়েকটি অভিযোগ নিয়ে দুদকের একটি দল এসেছিল। তারা প্রতিটি শাখায় পর্যবেক্ষণ করেছেন।