পেয়ারা বাগানে প্রস্রাবের ভিডিও ফেসবুকে দেওয়ায় দুই কিশোরকে হত্যা
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ পিএম
পেয়ারা বাগানে প্রস্রাব করার ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার জের ধরে হত্যা করা হয়েছে কিশোর মাসুদ ও রায়হানকে। এ ঘটনায় আজিজুল হক (৫২) ও তাসিম (৩২) নামে দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।
বুধবার দুপুরে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এমন তথ্য জানিয়েছে পুলিশ।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল কালাম সাহিদ সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে জানা গেছে ১২ থেকে ১৫ দিন পূর্বে নাচোল উপজেলার মল্লিকপুরে আব্দুল খালেকের পেয়ারা বাগানে পলিথিন (পিপি) লাগানোর কাজ করছিল শ্রমিক সরদার আব্দুস সালাম ও সাধারণ শ্রমিক শাহীন। এক পর্যায়ে শাহীন শ্রমিক সরদার সালামের প্রস্রাব করার ভিডিও ধারণ করে এবং তা ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়। ১০ দিন আগে স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়; কিন্তু তারপরও শাহীনের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল।
মঙ্গলবার দিবাগত রাত পৌনে ১১টার দিকে মল্লিকপুর গুরুহাটে শহিদ জিয়া স্মৃতি সংঘের উদ্যোগে বিজয় দিবসের পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছিল। এ সময় কিশোর গ্যাং নেতা সালাম তার দলবল নিয়ে অনুষ্ঠান দেখতে আসে।
সালামের দলে নিহত মাসুদ ও রায়হান এবং আহত অপর চারজন ছিল। সেখানে ওতপেতে থাকা অপর কিশোর গ্যাং নেতা শাহীন তার সঙ্গী-সাথী নিয়ে অতর্কিতভাবে সালাম ও তার দলবলের ওপর হামলা চালায়। এইঅবস্থায় উপস্থিত মানুষ দুই দলকে নিবৃত্ত করেন।
একপর্যায়ে তারা পার্শ্ববর্তী মাছ বাজার টিনশেডের মধ্যে গিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পরেন। এ সময় ৬ জন ছুরিকাঘাতে আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পথে কিশোর মাসুদ ও রায়হান নিহত হন। গুরুতর আহত সুমনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। অন্য তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান লেখাকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাহিদ জানান, এই ঘটনায় আমরা রাজনৈতিক কোনো সংশ্লিষ্টতা পাইনি। জয় বাংলা লেখাকে কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেনি বলে জানান তিনি। যারা ফেসবুকে এগুলো ছাড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি জানান, এই ঘটনায় আমরা দুইজনকে আটক করেছি। আরও ৭ থেকে ৮ জন এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত বলে আমরা তথ্য পেয়েছি। তাদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান চলমান আছে।
প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল উপজেলার মল্লিকপুর বিজয় দিবসের পুরস্কার বিতরণী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলাকালে ছুরিকাঘাতে মাসুদ ও রায়হান নামে দুই কিশোর নিহত ও ৪ কিশোর আহত হন। নিহত মাসুদ নাচোল উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ছিলেন। রায়হান ছাত্রলীগের কর্মী দাবি করা হলেও সত্যতা নিশ্চিত করা যায়নি। অন্যদের সরাসরি রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।
তবে শ্রমিক সরদার সালাম বিএনপি এবং কিশোর গ্যাং নেতা শাহীন জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছেন ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ইসমাইল হক অপু। তিনি জানান, শীতের রাত হওয়ায় আমি মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বাসায় চলে আসি। পরে গভীর রাতে মল্লিকপুর বাজারে মাসুদ ও রায়হানের ছুরিকাঘাতে নিহত হওয়া ঘটনা শুনতে পাই। নিহত মাসুদের পরিবার আওয়ামী লীগের সমর্থক হলেও তারা সরাসরি জড়িত নয়। আর রায়হান আমার সমর্থক ছিল। তবে তার বড় ভাই আওয়ামী লীগ ও অপর ভাই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান লেখাকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড কিনা এমন প্রশ্নে জবাবে চেয়ারম্যান অপু জানান, এ ধরনের কথা শুনতে পাচ্ছি। তবে দেয়ালে ‘জয় বাংলা’ লেখা কেন্দ্র করে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে আমার জানা নেই বা আমি শুনিনি।