চর কুকরি-মুকরিতে প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড়
চিত্রা হরিণের ছুটে চলার সঙ্গে অতিথি পাখির কলতান
শিপুফরাজী, চরফ্যাশন (ভোলা)
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৫৬ পিএম
ছবি: যুগান্তর
গহীন সবুজ বন আর সাগরের নির্মল হিমেল হাওয়ায় চিত্রা হরিণের ছুটে চলার সঙ্গে অতিথি পাখির কলকাকলি। এমন এক অপরূপ নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখতে কে না চায়। এমন নির্মল প্রকৃতির ছোঁয়া পেতে ভোলার চর কুকরি-মুকরিও তাড়ুয়ার দ্বীপে প্রতিদিন ভিড় করছে হাজার হাজার প্রকৃতিপ্রেমী।
ইটপাথরের ব্যস্ত জীবন ছেড়ে ক্ষণিকের জন্য হলেও প্রকৃতির সঙ্গে সখ্য গড়ে তোলে প্রশান্তির খোঁজে আসা এসব মানুষ এখানকার অপরূপ সৌন্দর্যে মুগ্ধ। পর্যটকদের নিজের বুকে আপন করে নেয় কুকরি-মুকরিও তাড়ুয়ার দ্বীপ প্রকৃতি। তবে প্রতি বছরই নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটক আসার সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি কাঙ্ক্ষিত সুযোগ-সুবিধা। বিশেষ করে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ নানা সমস্যার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েন তারা।
তবে এ বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন ও বন বিভাগ।
জেলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দক্ষিণে সাগরের কোল ঘেঁষে রয়েছে ৮০০ বছরের পুরনো দ্বীপ কুকরি-মুকরিও ঢালচর।
দূর থেকে দেখে মনে হয়, সাগরের মাঝে এ যেন এক সবুজের টিপ। ঘন বনের মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া সরু খালের দুপাশে চিত্রাহরিণ ও বন মোরগসহ বেশকিছু বন্যপ্রাণী দৃষ্টি কাড়ে। আর সবুজের বুক চিরে একটু এগিয়ে গেলেই প্রায় ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ তাড়ুয়া সৈকত তীর। দিগন্ত বিস্তৃত আকাশের সঙ্গে এই সময়ে এখানে দেখা মিলবে অতিথি পাখির কলকাকলি। তাই কর্মব্যস্ত জীবন থেকে কিছুটা প্রশান্তির আশায় এখানে ছুটে আসেন পর্যটকরা।
প্রকৃতির রানিখ্যাত চর কুকরি-মুকরির দিগন্তজোড়া সবুজ দেখতে খুলনা থেকে সপরিবারে আসছেন এক ব্যবসায়ীর পরিবার। পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান নারিকেল বাগান নেমেই ম্যানগ্রোভ বনের সবুজে মুগ্ধ সবাই ব্যস্ত আনন্দ স্মৃতিটুকু ক্যামেরাবন্দি করতে। এ স্থানটি কুকরি-মুকরি ঘুরতে আসা পর্যটকদের কাছে বেশ আকর্ষণীয়। এখানে দাঁড়িয়ে সামনে তাকালেই মনে হয় সাগরের শুভ্র সাদা মেঘ আর দিগন্ত বিস্তৃত আকাশ আলিঙ্গন করছে। এমন মনোরম দৃশ্য নাগরিক জীবনের সব ঝড়-ঝঞ্চা ভুলিয়ে প্রশান্তির ছোঁয়া এনে দেয় মনে।
সাগরের নোনা জলে গা ভেজানোর পাশাপাশি নানা খেলাধুলায় কেটে যায় পর্যটকদের আনন্দময় সময়। তাঁবু খাটিয়ে রাত্রি কাটানো পর্যটকদের সকালের ঘুম ভাঙে পাখির কিচির-মিচির ডাকে। সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের মোহনীয় দৃশ্য থেকে রাতের বন বনানীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে সাগর তীরেই তাঁবু খাটিয়ে রাত কাটাচ্ছেন শত শত পর্যটক। এখানে ওপর থেকে পাখির চোখে গভীর বন ও নদীর দৃশ্য দেখতে রয়েছে ৭তলা উঁচু ওয়াচ টাওয়ার। আর নির্জন বনের সরু খালের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেলে মন হারিয়ে যায় সবুজের মাঝে। নারিকেল বাগানের মতোই দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের মুগ্ধ করছে কালিরচর, তারুয়া ও ঢালচরের নৈসর্গিক সৌন্দর্যও। তবে প্রতিবছরই পর্যটকের সংখ্যা বাড়লেও বাড়েনি কাঙ্ক্ষিত সুযোগ-সুবিধা।
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা চাকরিজীবী সোহেল চৌধুরী বলেন, অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে কৃত্রিম অনেক কিছু দিয়ে সাজানো। কিন্তু কুকরি-মুকরির সবই প্রাকৃতিক। তাই এখানের ভালোলাগাটা অন্য রকম। তবে যাতায়াতসহ পর্যটকদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে। তাহলেই পর্যটকরা আরও বেশি আসবে। এরইমধ্যে এ জনপদে পর্যটন নির্ভর কর্মসংস্থান গড়ে তুলতে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি কুকরি-মুকরিতে ইকোপার্কেও স্থাপন করা হয়েছে। ইকোপার্কের উদ্বোধন সাগরপাড়ের পর্যটনক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনার কথা উল্লেখ করে পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা জানিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসন।
তারা বলেছেন, সরকারি-বেসরকারিভাবে সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়ানো হচ্ছে।
সাগরতীরে সবুজে ঘেরা চর কুকরি-মুকরি জেলা সদর থেকে ১২০কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লক্ষাধিক পর্যটক যান। চলতি ডিসেম্বর মাসের প্রথম দুই সপ্তাহে প্রায় ৪০ হাজার পর্যটক সেখানে গেছেন।