১০ বছরেও স্থায়ী ক্যাম্পাস হয়নি রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে
সুশীল প্রসাদ চাকমা, রাঙামাটি
প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৭ পিএম
প্রতিষ্ঠার ১০ বছরেও হয়নি রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের (রামেক) স্থায়ী ক্যাম্পাস। ফলে এতটা বছর ধরে নানা সংকটের মধ্যে পরিচালনা করতে হচ্ছে কলেজটির একাডেমিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম।
রাঙামাটি সদর জেনারেল হাসপাতালের করনারি ভবনে ২০১৪ সালে স্থাপিত এই মেডিকেল কলেজটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি; কিন্তু দীর্ঘ প্রায় দশটি বছর পেরিয়ে গেলেও নির্মাণ করা হয়নি স্থায়ী ক্যাম্পাস, ইতোমধ্যে ডিজিটাল সার্ভে ও জমি অধিগ্রহণ শেষ করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা)। তবে প্রকল্পটি বর্তমানে অনুমোদনের অপেক্ষায় বলে জানিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নানা প্রতিকূলতার মধ্যে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। নেই পর্যাপ্ত আসন, নেই পর্যাপ্ত শ্রেণিকক্ষ। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য নেই আবাসন ব্যবস্থা। দীর্ঘদিন ধরে রাঙামাটি সদর জেনারেল হাসপাতালের করোনারি ভবনে জোড়াতালি দিয়ে চলছে মেডিকেল কলেজটির কার্যক্রম। এছাড়া ফরেনসিভ বিভাগে নেই শিক্ষক। নেই প্র্যাক্টিকেল ল্যাব এবং যন্ত্রপাতি। তার ওপর শুরুর দিকে প্রতি ব্যাচে ৫০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হলেও বর্তমানে তার স্থলে ভর্তি করাতে হচ্ছে ৭৫ জন। অথচ বিদ্যমান জনবল সংকট।
জানা যায়, রামেক স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে রাঙামাটি শহরের রাঙাপানি হ্যাচারিপাড়া এলাকায় অধিগ্রহণ করা হয়েছে প্রায় ২৬ একর জমি। এর অধিগ্রহণ মূল্য পরিশোধ করা হয় ৯৩ কোটি টাকা। এরপর অধিগ্রহণ করা জমির ডিজিটাল সার্ভে শেষে নকশাসহ ডিপিপি পাঠানো হয়; কিন্তু একনেকে তা এখনো অনুমোদন না হওয়ায় স্থায়ী ক্যাম্পাসের ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অর্ণব চাকমা বলেন, আমাদের বড় সমস্যা হচ্ছে স্থায়ী ক্যাম্পাস। স্থায়ী ক্যাম্পাস নিয়ে আমরা অনেক আন্দোলন করেছি। আমি একাডেমিক ভবন নির্মাণ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পর্যন্ত গিয়েছিলাম। কিন্তু এ পর্যন্ত আশার বাণী ছাড়া কিছুই হয়নি। আমাদের শ্রেণিকক্ষ মাত্র ৫টি। এগুলোর প্রত্যেক শ্রেণিকক্ষে আগে ৫০ শিক্ষার্থীর শ্রেণি কার্যক্রম চলত। এখন সেখানে গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে ৭৫ জনকে। ফলে কনফারেন্স রুমেও ক্লাস নিতে হচ্ছে আমাদের। এখন স্থায়ী ক্যাম্পাস হবে শুনছি। বাস্তবায়ন হলে তো ভালো। আর না হলে স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণে আবার আন্দোলনে নামতে হবে আমাদের।
অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী তাসনিয়া আহমেদ যুতিকা বলেন, লাইব্রেরিতে আমাদের যেসব বই থাকার প্রয়োজন সেগুলো নেই। লাইব্রেরি আরও বড় হলে সবাই পড়ালেখার সুযোগ সুবিধা পেত।
একই ব্যাচের আফিফা আক্তার তৃতীয়া বলেন, পর্যাপ্ত পরিমাণ ল্যাবরেটরি আমাদের নেই। ল্যাব হলো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অথচ প্র্যাক্টিকেল সরঞ্জাম পর্যাপ্ত নেই। টেকনিশিয়ান নেই। নেই প্র্যাক্টিকেল কক্ষ।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানায়, বর্তমানে রাঙামাটি মেডিকেল কলেজে ৫টি ব্যাচে ২৭৮ শিক্ষার্থী রয়েছেন। এছাড়াও রয়েছেন ৩১ জন ইন্টার্নি ডাক্তার। শিক্ষক রয়েছেন ৭৭ জন এবং কর্মচারী রয়েছেন ৩১ জন। রেজিস্ট্রার, সহকারী রেজিস্ট্রার, ফরেনসিক ডাক্তার ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পদ শূন্য। সব মিলে নানা সমস্যায় জর্জরিত রাঙামাটি মেডিকেল কলেজটি।
রাঙামাটি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. প্রীতি প্রসূন বড়ুয়া বলেন, রাঙামাটি মেডিকেল কলেজ ও রাঙামাটি নার্সিং কলেজের স্থাপন প্রকল্পের প্রস্তাবনা স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের কাজ শেষে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেছে। সেখান থেকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিভাগের সচিবের স্বাক্ষরের পরে যাবে অর্থ মন্ত্রণালয়। এরপর প্রকল্প একনেকে পাশ হলেই এ মেডিকেল কলেজের স্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন প্রকল্পের কাজ শুরু করা যাবে। এখন ভবন নির্মাণে তেমন কোনো জটিলতা নেই। অস্থায়ী ভবনে আমরা শ্রেণী কার্যক্রম চালাচ্ছি, তাই অনেক সমস্যা বিদ্যমান। আমাদের প্রধান সমস্যা হলো শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারছে না। শিক্ষকদের বসার জায়গা নেই। শিক্ষকদের আবাসিক ব্যবস্থা নেই। ছাত্রছাত্রীদের ছাত্রাবাস নেই।