Logo
Logo
×

সারাদেশ

বিজয় দিবসে বিএনপির দুগ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ১০

Icon

যুগান্তর প্রতিবেদন, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)

প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৯ পিএম

বিজয় দিবসে বিএনপির দুগ্রুপে সংঘর্ষ, আহত ১০

বিজয় দিবসে শহিদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির দুগ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদকসহ অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

সোনারগাঁও থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল বারীর নেতৃত্বে একটি পুলিশের দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় একাধিক মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজাহারুল ইসলাম মান্নান ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য ও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। দুগ্রুপের প্রকাশ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত এড়াতে সোনারগাঁ উপজেলা প্রশাসন বিজয় দিবসে উপজেলা পরিষদ চত্বরে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য আজহারুল ইসলাম মান্নান গ্রুপের লোকজনকে সকাল ১০টায় সময় বেঁধে দেন।

অপরদিকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক মো. রেজাউল করিমের লোকজনকে বেলা ১১টায় সময় নির্ধারণ করে দেন। সেই মোতাবেক দুগ্রুপের নেতাকর্মীরা পৃথক পৃথকভাবে তাদের নির্ধারিত সময় অনুযায়ী উপজেলা পরিষদ চত্বরে শহিদ বেদীতে উপস্থিত হন ও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দুগ্রুপের সমর্থিত কিছু নেতাকর্মী উপজেলা পরিষদ চত্বরেই অবস্থান করছিলেন। এ সময় রেজাউল করিম গ্রুপের কয়েকজন সমর্থিত নেতাকর্মীর স্লোগান দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুগ্রুপের তর্ক-বিতর্ক ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দুগ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে।

সংঘর্ষে ইটের আঘাতে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক নুর এ ইয়াসিন নোবেল, বিএনপি নেতা মামুন, আব্দুল আলী, সোলায়মান, কবির হোসেন, মাসুদ মিয়াসহ উভয় গ্রুপের কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। এ ঘটনার আধা ঘণ্টা পর উপজেলার পার্শ্ববর্তী উদ্ধবগঞ্জ ব্রিজ এলাকায় আজাহারুল ইসলাম মান্নান সমর্থিত বারদী ইউনিয়ন যুবদল নেতা রতনকে কুপিয়ে আহত করা হয়। আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।

সংঘর্ষে আহত সোনারগাঁ উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক নুর এ ইয়াসিন নোবেল বলেন, শান্তিপূর্নভাবে সাবেক প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক মো রেজাউল করিমের নেতৃত্বে তার সমর্থিত নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদ চত্বরে বিজয় দিবসের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে উপস্থিত হন। উপজেলা প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সময় অনুযায়ী বেলা ১১টায় নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন। মান্নানপন্থি নেতাকর্মীরা সংঘর্ষে জড়ানোর জন্য আগে থেকেই সেখানে অবস্থান নিয়ে ছিলেন। স্লোগান দেওয়ার এক পর্যায়ে তারা আমাদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়।

আজাহারুল ইসলাম মান্নান সমর্থিত আহত বারদী ইউনিয়ন যুবদল নেতা রতন জানান, দুগ্রুপের সংঘর্ষের প্রায় আধঘণ্টা পরে উদ্ধবগঞ্জ ব্রিজ এলাকায় অধ্যাপক মো. রেজাউল করিম গ্রুপের সমর্থিত লোকজন আমাকে পরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করেছে।

সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার আবু জাফর বলেন, বিজয় দিবসে ন্যক্কারজনক ঘটনার সূত্রপাত ঘটিয়েছে আজাহারুল ইসলাম মান্নানপন্থি নেতাকর্মীরা। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এ বিষয়ে অবশ্যই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মান্নানের বিরুদ্ধে নালিশ দেব।

কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সোনারগাঁ উপজেলা বিএনপির সভাপতি আজহারুল ইসলাম মান্নান বলেন, রেজাউল করিমের লোকজন শহিদ মিনারে ফুল দিতে এসে উস্কানিমূলক কথা বলার কারণে নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করার কারণে আমাদের অনেক লোকজন আহত হয়েছেন।

তিনি বলেন, সংস্কারপন্থী নেতা রেজাউল করিম বিগত ১৭ বছর রাজনীতি থেকে দূরে সরে নিজেকে আত্মগোপন করে রেখেছিলেন। দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে থাকায় ও জেল জুলুম, মামলা-হামলার শিকার হওয়ায় বর্তমানে আমার নেতৃত্বে সোনারগাঁও উপজেলা বিএনপি আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সুসংগঠিত। আমার জনসমর্থন দেখে ঈর্ষান্বিত হয়ে রেজাউল করিম গ্রুপের লোকজন আমার লোকজনদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে।

সোনারগাঁ থানার ওসি মোহাম্মদ আব্দুল বারী বলেন, বিএনপির দুগ্রুপের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ তাৎক্ষণিক কাজ করার বড় ধরনের সংঘাত এড়ানো সম্ভব হয়েছে। তবে লাঠি ও ইটের আঘাতে কয়েকজন আহত হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় এখনো পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা রহমান জানান, উপজেলা পরিষদ চত্বরে সংঘাত ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। যে ঘটনা ঘটেছে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ বিষয়ে কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত অভিযোগ দায়ের করেনি।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম