Logo
Logo
×

সারাদেশ

অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না ছাত্র আন্দোলনে আহত রনি

Icon

ফরিদপুর ব্যুরো

প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৫ পিএম

অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না ছাত্র আন্দোলনে আহত রনি

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট দুপুরে ঢাকা থেকে গুলিবিদ্ধ হয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন রনি হোসেন। ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার ঘোষপুর ইউনিয়নের দৈত্যরকাঠি গ্রামের এনামুল হোসেনের ছেলে মো. রনি হোসেন (৩১)। শরীরে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকলেও অর্থের অভাবে চলছে না তার চিকিৎসা।

একদিকে মাথার ওপর এনজিওর ঋণের বোঝা; অন্যদিকে সংসারের অভাব-অনটন। দীর্ঘ চার মাসেও মেলেনি সরকারি কোনো সাহায্য-সহায়তা।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মো. রনি হোসেন এক সন্তানের জনক। তিনি রাজধানীর একটি কনস্ট্রাকশন সাইডে ম্যানেজারের কাজ করতেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শুরু থেকে ছাত্রদের সঙ্গে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। গত ৫ আগস্ট দুপুরের দিকে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্ক এলাকায় হেলিকপ্টার থেকে ছোড়া গুলিতে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। গুলিতে তার মুখগহ্বর ছেদ করে ঘাড়ে বিদ্ধ হয়। গুলিতে তার ঠোঁট, সামনের কয়েকটি দাঁত, জিহ্বা, মুখগহ্বরসহ মেরুদণ্ডের হাড়ের ডিস্ক মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

রনি হোসেন জানান, গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই জ্ঞান হারান তিনি। আন্দোলনকারীরা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যান। ওই হাসপাতালেই চলে প্রাথমিক চিকিৎসা। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী অস্ত্রোপচার করেও গুলি বের করতে ব্যর্থ হন চিকিৎসকরা। পরে খরচের কারণে ওই হাসপাতাল থেকে ধানমন্ডির পপুলার হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা হয়।

সেখানে ১৮ দিন চিকিৎসকদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে চিকিৎসাসেবা নেওয়ায় প্রায় ১২ লাখ টাকা ব্যয় মেটাতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়। এ সময় এক সমন্বয়কের মাধ্যমে শুধু ওষুধের বিল ৩ লাখ ১৮ হাজার টাকা পরিশোধ করে হাসপাতাল থেকে ছাড় পান তারা।

তিনি আরও জানান, সমন্বয়কদের মাধ্যমে সাভার সিআরপি হাসপাতাল ও ইবনেসিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। সর্বশেষ সিআরপিতে কয়েক ঘণ্টা ও ইবনেসিনায় ২ মাস ৭ দিন ডা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা চলে তার। 

রনির স্ত্রী মোসাম্মাৎ শান্তা ইসলাম বলেন, প্রায় চার মাস হতে চলল আমার স্বামী শরীরে গুলির যন্ত্রণা নিয়ে দিন-রাত ছটফট করে। তীব্র যন্ত্রণায় রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারে না। চোখের সামনে তার যন্ত্রণা সহ্য করতে পারি না। সরকারের কাছে দাবি আমার স্বামীর উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হোক।

রনি হোসেনের মা নাজমা বেগম বলেন, একদিকে এনজিওর কিস্তির চাপে রাতে ঘুম আসে না। ঘরে এক বছরের নাতির দুধ কেনা, পরিবারের সদস্যদের দুবেলা দুমুঠো ভাত কিভাবে জুটবে সারাক্ষণ এ চিন্তায় থাকি।

এ ব্যাপারে রনি ইসলামের বাবা মো. এনামুল হোসেন বলেন, খবর পেয়ে ঢাকা থেকে সমন্বয়করা দেখতে আসেন। নাম-ঠিকানা লিখে নেন। প্রতিশ্রুতি দেন চিকিৎসাসহ আর্থিক সাহায্য-সহায়তার। ছেলের চিকিৎসার জন্য ধার-দেনা করে মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা সাহায্য তুলে ৭ লাখ টাকার মতো খরচ করেছি। এখন আর চিকিৎসা চালাতে পারছি না। ঠিকমতো সংসারই চলছে না।

ঘোষপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইমরান হোসেন বলেন, রনির শারীরিক অবস্থা খারাপ। জানা মতে, সরকারি কোনো সহায়তা পাননি। চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করার ক্ষমতা নেই। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাধ্যমতো সাহায্য-সহায়তার চেষ্টা করা হবে।

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভির হাসান চৌধুরী বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তার বিষয়ে কেউ কিছু জানাননি। খোঁজখবর নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো সহায়তার চেষ্টা করা হবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম