জাল নিবন্ধন ও ভুয়া সনদে এক যুগ চাকরি শিক্ষকের
মো. খোরশেদ আলম, কাপাসিয়া (গাজীপুর)
প্রকাশ: ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৭ পিএম
গাজীপুর কাপাসিয়ায় এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে জাল নিবন্ধন ও ভুয়া সনদে এক যুগ চাকরি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা সিংহশ্রী ইউনিয়নের কপালেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষকের নাম আছমা আক্তার। তিনি প্রতিষ্ঠানটির আইসিটি শিক্ষক। গত ফেব্রুয়ারিতে কাপাসিয়া কপালেশ্বর বিদ্যালয়ে জাল সনদে চাকরি শিরোনামে যুগান্তরে সংবাদ প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসেছিল উপজেলা শিক্ষা বিভাগ। অবশেষে সেই শিক্ষক আছমা আক্তারের সনদ জাল প্রমাণিত হলো।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নিজের যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও কম্পিউটার সনদ ও জাল নিবন্ধনে নিজের নাম বসিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে স্কুলে চাকরি নেন আছমা আক্তার। জাল সনদ ও নিবন্ধন জালিয়াতির বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এলেও রহস্যজনক কারণে নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। ফলে গত এক যুগ ধরেই জাল সনদে চাকরি করে তুলে নিয়েছেন সরকারি বেতন ভাতা। শুধু তাই নয় ডিপ্লোমা কম্পিউটার সার্টিফিকেট কোর্স ভুয়া বলেও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসাইন বিষয়টি অবগত থাকা সত্ত্বেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেননি।
এ বিষয়ে কপালেশ্বর উচ্চ বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য হাবিবুর রহমান গত ১ ডিসেম্বর উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন। পরে নির্বাহী অফিসার ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসাইনকে নির্দেশ দেন আইসিটি শিক্ষক আছমা আক্তারের সনদ যাচাইয়ের পদক্ষেপ নিতে। তার পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লা জেলার গৌরীপুর উপজেলার দাউদকান্দি আকবর আলী খান কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজে সনদ যাচাইয়ের জন্য একটি লিখিত আবেদন দাখিল করেন প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসাইন।
পরে জানা যায়, আছমা আক্তার, পিতা- রিয়াজ উদ্দিন, মাতা- লিপি বেগম নামে কোন শিক্ষার্থী ওই কলেজ থেকে ১ অক্টোবর ২০১০ থেকে ৩১ মার্চ ২০১১ শিক্ষাবর্ষে কম্পিউটার সার্টিফিকেট কোর্সে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেননি, যার রেজি: নং ২০৭৯/২০২০, রোল ১৩। উক্ত সনদের কোন প্রকার তথ্য পাওয়া যায়নি এবং কম্পিউটার সনদটি এ কলেজ থেকে দেওয়া হয়নি বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ লিখিতভাবে নিশ্চিত করেছে।
এ ঘটনা জানাজানি হলে এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। জাল নিবন্ধন সনদধারী শিক্ষিকা আছমা আক্তারের বিরুদ্ধে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে আছমা আক্তার যুগান্তরকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন, তবে কোন কলেজ থেকে ডিপ্লোমা কম্পিউটার সার্টিফিকেট কোর্স সম্পন্ন করেছেন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি তিনি।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসাইন বলেন, আইসিসি শিক্ষক আছমা আক্তারের সনদ যাচাইয়ের পদক্ষেপ নিতে কুমিল্লা জেলার গৌরীপুর উপজেলার দাউদকান্দি আকবর আলী খান কারিগরি ও বাণিজ্য কলেজে সনদ যাচাইয়ের জন্য একটি লিখিত আবেদন দাখিল করেছি। আছমা আক্তার ওই কলেজের কম্পিউটার সার্টিফিকেট কোর্সে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এমন কোন প্রকার তথ্য পাওয়া যায়নি এবং কম্পিউটার সনদটি এ কলেজ থেকে প্রদান করা হয়নি বলে কলেজ কর্তৃপক্ষ এ মর্মে লিখিতভাবে নিশ্চিত করেছেন আমাকে। এতে বোঝা যায় সনদটি জাল ও ভুয়া।
এ বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এমএ আরিফ সরকার বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি তবে যাচাই-বাছাই করে সনদ জাল প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না তাসনীম যুগান্তরকে বলেন, তদন্তের দায়িত্ব মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে দেওয়া হয়েছে, সত্য প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।