Logo
Logo
×

সারাদেশ

৪৪টির মধ্যে লাইসেন্স নেই ১৬টির

সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে চলছে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রমরমা ব্যবসা

Icon

মো. আসাদুজ্জামান রিপন, গৌরনদী (বরিশাল) প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৪:১৯ পিএম

সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে চলছে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রমরমা ব্যবসা

ফাইল ছবি

সরকারি নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বরিশালের গৌরনদীতে ১৬টিরও বেশি বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রমরমা ব্যবসা চালিয়ে আসছে চালিয়ে যাচ্ছে। এতে চিকিৎসা সেবার নামে প্রতিনিয়তই প্রতারিত হচ্ছেন রোগীরা। 

অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি বেজগাতি সুইজ হাসপাতালে কথিত ২ নার্সের বিরুদ্ধে নরমাল ডেলিভারি করার সময় নবজাতক মারা যায়। এ ঘটনার ১৩দিন পর ওই প্রসূতি মা-ও মারা যান বলে অভিযোগ উঠেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গৌরনদীতে ৪৪টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইসেন্স নেই ১৬টির। 

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি ক্লিনিকের নিবন্ধন পেতে প্রয়োজনীয় ভৌত সুবিধা, সার্বক্ষণিক ডাক্তার, ডিপ্লোমা নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া, ক্লিনারসহ প্রয়োজনীয় জনবল, যন্ত্রপাতি, স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ থাকা আবশ্যক।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১০ বেডের একটি ক্লিনিকের অনুমোদনের ক্ষেত্রে শুধু রোগীর ওয়ার্ডের জন্য প্রতি বেডে ৮০ বর্গফুট করে মোট ৮০০ বর্গফুট জায়গা লাগবে। সেই সঙ্গে ওটি রুম, পোস্ট অপারেটিভ রুম, ওয়াশ রুম, ইনস্ট্রুমেন্ট রুম, লেবার রুম, ডক্টরস ডিউটি রুম, নার্সেস ডিউটি রুম, অপেক্ষমাণ রুম, অভ্যর্থনা কক্ষ, অফিস রুম, চেইনঞ্জিং রুম, স্টেরিলাইজার রুম, ভাণ্ডার রুমসহ সামঞ্জস্যপূর্ণ অন্তত ১৩টি রুম থাকতে হবে। 

এছাড়া পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা প্রয়োজনীয় সংখ্যক টয়লেট, প্রশস্ত সিঁড়ি, জেনারেটরসহ প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে (বিল্ডিং তিনতলার অধিক হলে) লিফটের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ওটি রুমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা, ওটি টেবিল, পর্যাপ্ত ওটি লাইট, সাকার মেশিন, অ্যানেসথেসিয়া মেশিন, ডায়াথারমি মেশিন, জরুরি ওষুধ সমূহের ট্রে, রানিং ওয়াটার, অক্সিজেন, আইপিএসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। 

একইসঙ্গে সাধারণ বর্জ্য, ধারালো বর্জ্য, জীবাণুযুক্ত বর্জ্য, তরল বর্জ্যসহ সব ধরনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও থাকা অত্যাবশ্যকীয়। এছাড়া জনবল কাঠামোতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, তিন জন ডিউটি ডাক্তার, ছয় জন ডিপ্লোমা নার্স, ওয়ার্ডবয়, আয়া, ক্লিনারসহ প্রয়োজনীয় অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকতে হবে। 

স্থানীয় ও কয়েকজন আগত রোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চারপাশে আধা কিলোমিটারের মধ্যেই ১০-১৫টি ও গৌরনদী বন্দর রোড, টিএনটি মোড়, বেজগাতি, বাটাজোর হাট, সুন্দরদী, বাকাই হাট ও হোসনাবাদ লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন এলাকায় ছোট বড় ৪৪টি বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। 

বিশেষ করে সরকারি হাসপাতালের উত্তর ও পশ্চিম প্রান্তের প্রাচীর ঘেঁষেই  ১০টির মতো ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে উঠেছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের দুই-তৃতীয়াংশে প্রয়োজনীয় ভৌত (কক্ষ) সুবিধা ও প্যাথলজিক্যাল স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশও নেই। দুই তৃতীয়াংশের ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরিবেশ, ফায়ার সার্ভিস ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লাইসেন্স নেই। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও নেই। শুধু তাই নয়-এসব প্রতিষ্ঠানগুলোতে নেই পোস্ট অপারেটিভ রুম, ডিউটি ডাক্তার, ডিপ্লোমা নার্স, টেকনোলজিস্ট,  ফার্মাসিস্ট, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ প্রয়োজনীয় জনবল। 

এছাড়া এসব প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্য বিভাগ বা সরকারি নিয়মনীতির কোনো তোয়াক্কা না করে ছোট ছোট তিন-চার রুমের বাসাবাড়িতে ক্লিনিক গড়ে তুলে চিকিৎসার নামে প্রতারণা চলছে হরদম। স্বাস্থ্য বিভাগের মদতে গড়ে ওঠা মানহীন এসব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে সরকারি হাসপাতাল, বাস স্ট্যান্ডসহ গ্রামাঞ্চল থেকে দালালের মাধ্যমে রোগী ধরে এনে চিকিৎসাসেবার নামে প্রতারণা করছে প্রতিনিয়ত।

গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, সুইজ হাসপাতালে নর্মাল ডেলিভারি করার সময় নবজাতক মারা যাওয়ার ১৩দিন পর প্রসূতি মায়ের (রোগীর) মৃত্যুর ঘটনায় ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। এছাড়া পরিদর্শনে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অসংগতি পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। লাইসেন্স বিহীন হাসপাতাল ও ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। 

এ বিষয়ে গৌরনদী ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মাহামুদ হোসেন শরীফ মুহিত বলেন, গৌরনদীতে বেসরকারি ২০টি হাসপাতাল ও ২৪টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। এরমধ্যে ১৩টি হাসপাতাল ও ১৫টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য। সরকারি বিধি মোতাবেক যেসব হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাগজপত্র সঠিক ও লাইসেন্স আছে তাদেরকেই আমাদের অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য করা হয়েছে। আমাদের সদস্যের বাইরে বাকি ১৬টির লাইসেন্স নেই। লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করে দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তিনি। 

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম