ছাত্র আন্দোলনে ছেলে নিহত, থামেনি মা-বাবার কান্না
আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩৬ পিএম
ছবি: সংগৃহীত
বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বাগধা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী নুরুল হক হাওলাদারের ছেলে সাগর হাওলাদারের স্বপ্ন ছিল সংসারে সচ্ছলতা ফিরবে। পরিবারের অর্থনৈতিক দৈন্য-দশার কারণে নিজে লেখাপড়া না করতে পারলেও ইচ্ছা ছিল ছোট বোনকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মতো মানুষ করবে। সেই স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল তার।
২৩ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান সাগর। ১৬ বছরের ছেলেকে হারিয়ে শোকে মূহ্যমান এখন পরিবারের লোকজন। তাদের পরিবারে শুধুই সন্তান হারানোর বেদনা। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন পরিবারের লোকজনসহ এলাকাবাসী।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন বাগধা গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ছবি হাতে ছেলের কবরের পাশে বসে বিলাপ করছেন সাগরের মা আম্বিয়া বেগম। ছেলেকে নিয়ে কতই না স্বপ্ন ছিল মায়ের। সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। আক্ষেপের যেন কোনো শেষ নেই। কাঁদতে কাঁদতে শুকিয়ে গেছে বাবা-মায়ের চোখের জল।
উপজেলার বাগধা গ্রামের নুরুল হক হাওলাদার ও আম্বিয়া বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে সাগর হাওলাদার। বাবা নুরুল হকের নৈশপ্রহরীর চাকরির সামান্য বেতনে ৬ জনের সংসার চালানো কষ্টদায়ক। এই কথা চিন্তা করে পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে ৬ মাস আগে কাউকে না জানিয়ে ঢাকায় যান সাগর। সেখানে ধানমন্ডি লেকপাড়ে একটি অস্থায়ী চায়ের দোকানে ৭ হাজার টাকা বেতনে কাজ শুরু করেন।
স্বপ্ন ছিল নিজে লেখাপড়া করতে না পারলেও ছোট বোন পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মরিয়ম খানমকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করানোর। সেই স্বপ্ন এখন স্বপ্নই রয়ে গেল সাগরের পরিবারের।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ২৩ জুলাই সন্ধ্যার পর দোকান থেকে বাসার উদ্দেশে রওনা হলে সংঘর্ষের মাঝে পড়ে দুই পায়ে গুলিবিদ্ধ হয় সাগর। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ জুলাই রাতে মৃত্যু হয় তার। একমাত্র ছেলেকে হারানোর ৪ মাস অতিবাহিত হলেও পরিবারে এখন শুধুই সন্তান হারানোর বেদনা। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবি তাদের।
সাগরের প্রতিবেশী ও বন্ধু হাসান মিয়া জানান, ছোট বোনকে লেখাপড়া করানো ও পরিবারে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতেই চাকরির খোঁজে ঢাকায় যায় সাগর। এলাকায় সে ছিল সবার খুব প্রিয়।
চাচা মাইনুল হক জানান, সাগরের মৃত্যুর ৪ মাস অতিবাহিত হলেও শুধু মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ৫০ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড ছাড়া সরকারিভাবে কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পায়নি পরিবার। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি সাগরের কবরটি সংরক্ষণের দাবি তাদের।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারিহা তানজিন বলেন, জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে নিহতের তালিকায় সাগরের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। সরকার ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।