শেরপুরের আলোচিত এরশাদ আলী (৫৮) কবিরাজ হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। মাত্র সাড়ে তিন লাখ টাকা চুক্তি করে হত্যা করা হয় এরশাদ কবিরাজকে। এরশাদ কবিরাজের সমুন্ধী আব্দুল মোতালেব ভাড়াটিয়াদের দিয়ে তাকে গলা কেটে খুন করায়।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ৫ জনকে এ পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে আজ ৪ ডিসেম্বর ভোরে শেরপুর ও জামালপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ এ হত্যাকাণ্ডের মাস্টার মাইন্ড আব্দুল মোতালেব (৫৬), হানিফ মিয়া (২৭) ও শহিদুল ইসলামকে (৪৫) গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃত আব্দুল মোতালেব শেরপুর সদর উপজেলার চরমুচারিয়া মাঝপাড়ার মো. ওয়াহেদ আলীর ছেলে এবং এরশাদ কবিরাজের সমুন্ধী, হানিফ মিয়া একই উপজেলার ডাকপাড়ার লেবু মিয়ার ছেলে এবং শহিদুল ইসলাম পাশের জামালপুর জেলা সদরের শরিফপুর ইউনিয়নের রামপুর গ্রামের প্রয়াত লাল মাহমুদের ছেলে।
গ্রেফতারকৃত তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছেন বলে কোর্ট পরিদর্শক মো. জিয়াউর রহমান বুধবার সন্ধ্যায় জানিয়েছেন।
এর আগে গ্রেফতার হয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে আসামি আব্দুর রশিদ ও ছানোয়ার হোসেন।
মামলা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শেরপুর সদর উপজেলার লছমনপুর ইউনিয়নের কাজিরচর গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিমের ছেলে এরশাদ কবিরাজ বিভিন্ন স্থানে কবিরাজি চিকিৎসা করত ও ঝাড়ফুঁক দিত। বেশ কিছুদিন আগে তার সমুন্ধী আব্দুল মোতালেবের ছেলে শিমুল অসুস্থ হয়ে অসংলগ্ন আচরণ শুরু করে। এতে তার (মোতালেবের) সন্দেহ হয় এরশাদ কবিরাজ জাদু করে তার ছেলেকে পাগল বানিয়েছে। সম্প্রতি ঝড়ে মোতালেবের মেয়ের ঘর ভেঙে যায়। এতেও এরশাদ কবিরাজের জাদুকেই দায়ী করে মোতালেব। এই জেদের বশবর্তী হয়েই এরশাদ কবিরাজকে খুন করার পরিকল্পনা করে আব্দুল মোতালেব। সে হানিফ ও শহিদুলের মধ্যস্থতায় স্থানীয় ময়নাল সাধুর সঙ্গে এরশাদ কবিরাজকে খুন করার জন্য সাড়ে তিন লাখ টাকার চুক্তি করে।
চুক্তি মোতাবেক ময়নাল সাধু এরশাদ কবিরাজকে গত ১৭ অক্টোবর নিজ বাড়ি থেকে কৌশলে ডেকে নিয়ে যায়। ডেকে নিয়ে আব্দুর রশিদ, হানিফ ও ছানোয়ারের সহযোগিতায় এরশাদ কবিরাজকে শেরপুর ব্রহ্মপুত্র সেতুর নিচে বালুচরে হাত-পা বেঁধে জবাই করে খুন করার পর সেখানেই বালুচাপা দিয়ে রাখে। এর পাঁচ দিনের মাথায় ঘটনাস্থল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এরশাদ আলী কবিরাজ পরিবারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল জমিজমা নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়েও তিনি খুন হতে পারেন। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে অজ্ঞাতদের আসামি করে শেরপুর সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। এরপর থেকেই পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
তদন্তের একপর্যায়ে সন্দেহভাজন আব্দুর রশিদ ও ছানোয়ার হোসেনকে সম্প্রতি গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের কাছ থেকেই বেরিয়ে আসে মূল রহস্য। পুলিশ বিষয়টি গোপন রেখে গ্রেফতার অভিযান চালিয়ে আজ ৪ ডিসেম্বর ভোরে মোতালেব, হানিফ মিয়া ও শহিদুল ইসলামকে গ্রেফতার করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে।
এ ব্যাপারে শেরপুর সদর থানার ওসি মো. জুবাইদুল আলম বলেন, শুরু থেকেই পুলিশ শতভাগ পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়ে সতর্কতার সঙ্গে মামলাটি তদন্ত শুরু করে। ইতোমধ্যে রহস্য উদঘাটন করা হয়েছে এবং বেশিরভাগ আসামি গ্রেফতার হয়েছে। তারা পুলিশের কাছে ও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।