বাবা-মা হারা তিন প্রতিবন্ধী বোনের করুণ জীবন
কালকিনি-ডাসার (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:৪৮ পিএম
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পূর্ব দর্শনা গ্রামের তিন বোন উম্মি বেগম (৬২), আকিতন (৫৫) ও নুননাহার (৩৯)। তারা তিন বোনই প্রতিবন্ধী। আর-দশটা শিশুর মতো তারাও স্বাভাবিকভাবেই জন্মগ্রহণ করেন; কিন্তু জন্মের কয়েক বছর পরই অজানা এক রোগে আক্রান্ত হয়ে তারা সবাই শারীরিক প্রতিবন্ধীতে পরিণতি হয়।
গত এক যুগ আগে পিতা সুলতান হাওলাদার ও মাতা জাহেরা বেগমের মৃত্যুর পর অসহায় হয়ে পরে তারা। এলাকাবাসী তাদের সাহায্য সহযোগিতা করলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় তাদের বেঁচে থাকা এখন দুরূহ হয়ে পড়েছে।
পরিবারের উপার্জনক্ষম কোনো পুরুষ না থাকায় পাড়া প্রতিবেশীদের কাছ থেকে সামান্য সাহায্য-সহযোগিতার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।
নানা রোগে আক্রান্ত আকিতন নেছা শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়া আগের মতো মানুষের কাছে সাহায্যের জন্য যেতেও পারে না।
আকিতন নেছা প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও পরিবারের অন্য দুজন সদস্যের ভাগ্যে জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতাসহ সরকারি কোনো সহায়তা। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এ সময়ে অর্থকষ্টে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের।
উম্মি বেগম মুখ জড়তা নিয়ে বলেন, আমাগো কিচ্ছুই নাই। আমরা তিনডা বুইন এমুনই, আমাগো সাহায্য করেন।
আরেক বোন নুননাহার বলেন, আমাগো কিছু নাই, কেউ কিছু দিলে খাই না দিলে না খাইয়া থাকি। আপনেরা আমাগো কিছু দিয়া যান।
প্রতিবেশী ইউনুস হাওলাদার জানান, আমার ছোটকাল থেকে দেখতেছি এরা তিনটা প্রতিবন্ধী বোন অসহায়। মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় তারা কোনোরকম বেঁচে আছে। আমরাও তাদের যথাসাধ্য সাহায্য সহযোগিতা করি। তারা তিনটা বোনই যদি প্রতিবন্ধী ভাতা পেত তাহলে তাদের বাঁচার একটা অবলম্বন হতো।
উম্মি বেগমের ছোট চাচা মো. তৌয়ব হাওলাদার বলেন, আমার বড় ভাইয়ের মৃত্যুর পর প্রতিবন্ধী তিনটি বোন অনেক অসহায় হয়ে পড়েছে। মানুষের সাহায্য সহযোগিতায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতিবন্ধী এ পরিবারটিকে সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি সমাজের বিত্তবানদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে আহবান জানান তিনি।
ডাসার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম সিকদার জানান, আমার ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী এই পরিবারটির আমি নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি। ওএমএসের চালের একটা নাম দিয়েছি। সরকারি যত সহযোগিতা দেওয়ার পাশাপাশি আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের পাশে থাকব।
ভুক্তভোগী তিন প্রতিবন্ধী বোন আকুতি করে বলেন, আমরা টাকার অভাবে চিকিৎসা করতে পারতেছি না। আমরা সুচিকিৎসা পেলে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠা সম্ভব ছিল। আমরা সুস্থ হয়ে কাজ করে খেয়ে বাঁচতে চাই।
ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, আমি দেখলাম প্রতিবন্ধী পরিবারটি আসলেই অসহায়। প্রশাসন অবশ্যই তাদের পাশে দাঁড়াবে। আমি শুনেছি তাদের একজন মাত্র প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। বাকি দুজনকে অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনা হবে। সাময়িকভাবে পরিবারের জন্য যথাসম্ভব তাদের সহযোগিতা করা হবে। এছাড়াও তাদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে তারা যদি সেটা চালিয়ে নিতে পারে তাহলে আমরা সেই ব্যবস্থাও করব।