Logo
Logo
×

সারাদেশ

ছয় ভাই-বোনের মধ্যে ৫ জনই প্রতিবন্ধী, সবাই সংগ্রামী

Icon

ফজলুল হক জোয়ারদার আলমগীর, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)

প্রকাশ: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:৩০ পিএম

ছয় ভাই-বোনের মধ্যে ৫ জনই প্রতিবন্ধী, সবাই সংগ্রামী

এক পরিবারে ৬ ভাই-বোনের মাঝে পাঁচজনই প্রতিবন্ধী। শারীরিক প্রতিবন্ধকতার দেয়াল ডিঙ্গিয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে সবাই করছেন লেখাপড়া। তারা অত্যন্ত মেধাবী, পরিশ্রমী, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। দরিদ্র হলেও তারা কারো কাছে কোনো করুণা বা দয়া প্রত্যাশা করেন না।

তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় প্রটোকল ও আইন মোতাবেক চাকরিসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রত্যাশা করেন।

পাঁচ প্রতিবন্ধীর মাঝে একমাত্র ভাই মো. সুজন মিয়া (৩০) কিশোরগঞ্জ গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। বোনদের মাঝে মার্জিয়া আক্তার (২৮) বাজিতপুর সরকারি কলেজ থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে অনার্স করেছেন, জহুরা খাতুন (১৯) কটিয়াদী ডা. আব্দুল মান্নান মহিলা কলেজ থেকে ২০২৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন, মুক্তা আক্তার (১৬) উত্তর পিরিজপুর বিএম কলেজে একাদশ শ্রেণিতে এবং পান্না আক্তার (১৪) ডুয়াইগাঁও সুলতানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত।

ব্যক্তিত্ববান আচরণের জন্য এলাকার লোকজনের কাছে পরিচিত প্রতিবন্ধী পাঁচ ভাই-বোন। তারা কারো কাছে আর্থিক সহযোগিতা চান না, সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায়ে চাকরি করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে সংসারের হাল ধরে সমাজে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চান পাঁচ-ভাই বোন।

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের বিলপাড়-গজারিয়া গ্রামের মৃত মহরম আলী ও ফুলবানু দম্পতির এক ছেলে পাঁচ মেয়ে। তাদের পাঁচজনই শারীরিক প্রতিবন্ধী। 

মৃত মহরম আলী ও ফুলবানুর সন্তানদের জন্মের সময় কোনো সমস্যা না থাকলেও, তাদের ২-৩ বছর বয়সে শুরু হয় কোমরের নিচে অবশ হওয়া, হাত-পা ও আঙুল বাঁকা হয়ে যাওয়া। তার কিছু দিনের মধ্যেই স্বাভাবিক চলাচলের ক্ষমতা হারান সবাই। পাঁচজনেরই হাত-পা চিকন ও বাঁকা হয়ে গেছে। ফলে তারা কেউই স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। বড় ভাই সুজন একটি ইলেকট্রনিক হুইলচেয়ার ও চার বোন সাধারণ হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন। চার বোনের জন্য তিনটি হুইলচেয়ার থাকলেও দুটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

খাওয়া, গোসল, স্কুলে আসা-যাওয়াসহ সব কাজে সহযোগিতা করেন চাচা ইসরাইল, মা ফুলবানু আর বড় ছেলে সুজনের স্ত্রী।

প্রতিবন্ধী সুজন যুগান্তরকে জানান, আমরা কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাই না; কাজ করে খেতে চাই। পাশাপাশি পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে সংসারের হালও ধরতে চাই। এজন্য সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন। সরকার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিলে আমার পক্ষে সব বাধা পেরিয়ে সংসারের সব প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব হবে।

প্রতিবন্ধীদের চাচা মো. ইসরাইল জানান, আমি তাদের চাচা হলেও তারা আমাকে আব্বা বলে ডাকে। আমার স্ত্রীর কোনো সন্তান নেই। তারাই আমার সন্তান। তাদের বাবা আমার ছোট ভাই মহরম আলী ৮ বছর পূর্বে মারা গেছেন। আমার অবর্তমানে তাদের কে দেখবে? সুজন ও মার্জিয়া অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেছে, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হলে সংসারের হাল ধরতে পারবে। ছোট তিন বোন কলেজ ও স্কুলে পড়ালেখা করছে। তাদের জন্য মুখে হাসি ফোটাতে সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার জন্য আকুল আবেদন করছি।

বাজিতপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা বাবুল মিয়া জানান, তাদের যোগ্যতা বলে একদিন সরকারি বেসরকারি চাকরি করে মায়ের মুখে হাসি ফুটাবে। সমাজের বোঝা না হয়ে সমাজের অপরিহার্য মানুষ হয়ে উঠবেন- এমনটাই তাদের আশা।

বাজিতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারাশিদ বিন এনাম জানান, এক পরিবারের পাঁচজন প্রতিবন্ধী; সবাই ভালোভাবে পড়াশোনা করছেন। শত বাধা অতিক্রম করে তাদের সম্মানের সঙ্গে এগিয়ে চলার উদাহরণ সারা দেশে অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা জোগাবে। সদস্যদের কর্মসংস্থান গড়ার লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হবে। উপজেলা প্রশাসন সব সময় তাদের পাশে থাকবে।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : আবদুল হাই শিকদার

প্রকাশক : সালমা ইসলাম