প্রথমবার ট্রাভেল পাশ নিয়ে সেন্টমার্টিন গেল ৬৫৩ পর্যটক
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:২৪ পিএম
দেশের একমাত্র প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে ট্রাভেল পাশ ব্যবস্থা।
রোববার এই পাস নিয়ে ৬৫৩ জন পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যান এমভি বার আউলিয়া জাহাজে। সকাল ১০টায় কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়ার বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে জাহাজটি যাত্রা শুরু করে।
সেটি বিকেলে সেন্ট মার্টিনে পৌঁছালে পর্যটকদের ফুল দিয়ে বরণ করেন সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা। তবে সেন্টমার্টিনে পর্যটক নিয়ন্ত্রণের প্রতিবাদে স্থানীয়রা মাথায় কালো ব্যাজ ধারণ করেন।
এমভি বার আউলিয়া জাহাজের পরিচালক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, রোববার তিনটি জাহাজ ছাড়ার কথা থাকলেও পর্যটক সংকটের কারণে কেবল এমভি বার আউলিয়া ছেড়েছে। জাহাজটির ধারণক্ষমতা ৮৫০ জন হলেও ৬৫৩ জন যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার থেকে কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন নৌরুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেয় জেলা প্রশাসন। তবে সেদিন কেয়ারী সিন্দাবাদ জাহাজ পর্যটক সংকটের কারণে যাত্রা বাতিল করে।
পরিবেশ রক্ষায় ট্র্যাভেল পাসের উদ্যোগ: সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের নিয়ন্ত্রণ এবং পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় ১৯ নভেম্বর একটি যৌথ কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির আহবায়ক কক্সবাজার সদর ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। কমিটির সদস্যসচিব পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক জমির উদ্দিন।
কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, পর্যটকদের ট্র্যাভেল পাস নেওয়ার মাধ্যমে নিবন্ধিত হতে হচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী জানুয়ারি মাস পর্যন্ত দৈনিক সর্বোচ্চ দুই হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন।
তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের পরিবেশ সচেতন করতে ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার উদ্যোগ হিসেবে পলিথিন এবং প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। জাহাজে পর্যটকদের পাটের ব্যাগ সরবরাহ করা হয়েছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জাহাজে তদারকি করছেন। জাহাজে কোনোভাবেই প্লাস্টিক পণ্য যাতে না নেওয়া হয়, তা নিশ্চিত করা হচ্ছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে সপরিবারে সেন্ট মার্টিনে যাচ্ছেন আবু আহামদ।
তিনি বলেন, দুই দিনের পরিকল্পনা নিয়ে যাচ্ছি। পরিবেশ সচেতনতার কারণে কিছু নিয়ম মানতে হচ্ছে, তবে এটা ভালো উদ্যোগ।
পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নভেম্বর মাসে পর্যটকরা সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবেন, তবে তারা রাতে থাকতে পারবেন না। ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রতিদিন ২ হাজার পর্যটক যেতে পারবেন ও রাতেও থাকতে পারবেন। ফেব্র“য়ারিতে দ্বীপে কোনো পর্যটক যেতে পারবেন না, তখন পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চালানো হবে।
রোববার সকালে বিআইডব্লিউটিএ ঘাট পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কক্সবাজার শহর থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হয়েছে। যৌথ কমিটি এসব বিষয় তদারকি করছে।
সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে পর্যটক সংখ্যা সীমিত রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ বলে মন্তব্য করেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২৩ সালে মিয়ানমারের রাখাইনে সংঘাতের কারণে টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে ইনানী সৈকতে নৌ-জেটি স্থাপন করা হলেও ঘূর্ণিঝড় দানার প্রভাবে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এরপর কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়াস্থ বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকে জাহাজ চলাচলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ রক্ষায় নেওয়া এই উদ্যোগকে দেশের পর্যটন খাতের একটি টেকসই মডেল হিসেবে দেখা হচ্ছে।