আ.লীগ নেতাদের পেটে লক্ষ্মীপুর চা বাগান
আজিজুল ইসলাম, কুলাউড়া মৌলভীবাজার
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:০৫ পিএম
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার উপজেলায় লক্ষ্মীপুর চা বাগান নামে একটি বাগান ছিল। ৯৫ একরের চা বাগানটি এখন অস্তিত্বহীন। ভূমিখেকো ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা গিলে খেয়েছে পুরো বাগানটি।
ভূমি দখলকারীদের কবল থেকে উদ্ধার
ও চা শ্রমিকদের পুনর্বাসনের দাবি জানিয়েছেন বাগানের সাবেক চা শ্রমিক ও শ্রমিক পরিবারের
শতাধিক সদস্য। প্রতিকার চেয়ে ২৯ নভেম্বর মেৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন।
বিলুপ্তপ্রায় চা বাগানে বসবাস করছে মুসলমান, খ্রষ্টিান, হিন্দু ধর্মাবলম্বী চা শ্রমিক
পরিবারের শতাধিক সদস্য।
আবেদন সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীপুর
চা বাগানের জায়গা ৪ ও ৫নং খতিয়ানভুক্ত জমি। প্রায় ৯৫ একর আয়তনবিশষ্টি চা বাগানের মালিক
ছিলেন পৃথিমপাশার জমিদার। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তের পর্চা বাগানটি ৪নং খতিয়ানভুক্ত এবং
লক্ষ্মীপুর টি গার্ডেন নামে রেকর্ডভুক্ত হয়। মূলত জেলা প্রশাসক চা বাগানের মালিক হন।
কিন্তু ৯৫ একরের চা বাগানটির মধ্যে কমপক্ষে ৪০ একর চা বাগানের জায়গা স্থানীয় কতিপয়
ভূমিখেকো চক্র জাল দলিল সৃষ্টি করে সবশেষ ভূমি জরিপে তাদের নামে রেকর্ড করে ফেলে।
ফলে চা বাগানের বাংলো, কোয়ার্টার, কুলি বসি্ত, রাস্তা ইত্যাদি রেকর্ডে থাকলেও কয়েকজন
ব্যক্তির দখলে রয়েছে বাগানের ৪০ একর জায়গা।
অথচ বাগান পরিচালনায় যারা অতীতে
দায়িত্বরত ছিলেন তাদের ভাগ্যে জুটেছে মাত্র ২৪ শতাংশ জায়গা।
বর্তমানে শ্রমিক পরিবারের শতাধিক
সদস্য বাগানের বিলুপ্ত প্রায় চা বাগানের কোয়ার্টারে বসবাস করলেও বাগানের রাস্তা দিয়ে
চলাচলে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বাগানের সাবেক স্টাফ আমজদ আলীর নাতনি রেহানা
বেগম।
তিনি জানান, বাগানের জায়গা
জবর-দখলকারী আকুল মিয়া ও নিরঞ্জন কালোয়ার রাস্তা ব্যবহারে জন্য মোটা অঙ্কের টাকা
দাবি করছেন। টাকা না দেওয়ায় আকুল মিয়া ও নিরঞ্জন কালোয়ার নানা টালবাহানা করে রেহানা
বেগমসহ ১৬টি পরিবারের সব ধর্মাবলম্বী শতাধিক নারী-পুরুষকে বাগানের জায়গা থেকে উচ্ছেদের
পঁায়তারা করছেন।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর চা বাগানের
শ্রমিক পরিবারের সদস্য রেহানা বেগম, চিনু মিয়া, রাবিয়া বেগম, শওকত মিয়া, রজনী কেচুয়া,
জষ্টিনা চমগ এন্ডভেন্ডেলসহ প্রায় দশ == জানান, এসএ খতিয়ান ৪ ও ৫, জেএল নং ১০২, অংশ
১, মালিকের নাম বিশেষ আবাদকারী মহাল লক্ষ্মীপুর টি গার্ডেনসহ বিভিন্ন দা= তাদের পূর্ব====
প্রায় ৯৫ একর চা বাগানের জমিতে তাদের পূর্বপুরুষ আমজাদ আলী স্টাফ ছিলেন। আমজাদ আলীর
স্ত্রী বাগানের শ্রমিক ছিলেন। আমজদ আলীসহ আমাদের বাবা, চাচারা এই বাগানে জন্মগ্রহণ
করে শ্রমিকের কাজ করেছেন। এবং লক্ষ্মীপুর চা বাগান একটি প্রতিষ্ঠিত চা বাগান ছিল। নব্বইর
দশকে কালিটি চা বাগানের সুরুলু কালোয়ার, নিরঞ্জন কালোয়ার, আকুল মিয়া জাল দলিল সৃষ্টি
করে চা বাগানের জমি দখল করে। এরপর আগের রোপিত চা গাছ কেটে আবাদ করেছেন। বাগানের সাবেক
এসএ দাগ নং ২৪ এর ১০ শতক এই রাস্তা দিয়ে আমরা যাতায়াত করে আসছি। কিন্তু নিরঞ্জন কালোয়ার
ও আকুল মিয়া আমাদের রাস্তা দিয়ে চলাচলে বাধা প্রদান করে। এলাকাবাসী চা বাগানের জায়গা
উদ্ধার করে এবং বাগানের জায়গা জবর-দখলকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের
জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত নিরঞ্জন কালোয়ার
জানান, তার বাবা সুরুলু কালোয়ার জমিগুলো ক্রয় সূত্রে মালিক। চলতি সেটেলমেন্ট জরিপে
তাদের নামে রেকর্ডভুক্তও আছে। জাল দলিল সৃষ্টি করে বাগানের জায়গা দখলের অভিযোগটি সত্য
নয়। তারা জমির বৈধ মালিক।
অপর অভিযুক্ত আকুল মিয়া জানান,
আবেদনকারীদের সঙ্গে তার কোনো বিরোধ নেই। তিনি তার বৈধ সম্পত্তিতে বসবাস করছেন।
কুলাউড়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি)
শাহ জহুরুল হোসেন জানান, জায়গাটি যদি সরকারি হয় ও সেটেলমেন্ট যদি কারও নামে রেকর্ড
হয়ে থাকে তাহলে তা বাতিল হবে। আমি উভয়পক্ষকে ডেকে কাগজপত্র দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
গ্রহণ করব।