১২৪ বছরের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একচালা ভাঙা ঘরে পাঠদান
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১০:০৯ পিএম
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ১২৪ বছরের প্রাচীন চর চন্দনবাইশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। চারবার নদী ভাঙনের শিকার ওই স্কুলে আজও পাঠদান চলে একচালা ঝুপড়ি ঘরে। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা সেখানে লেখাপড়া করে আসছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা অবিলম্বে ভবন নির্মাণ এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৯০১ সালে এলাকার শিক্ষানুরাগীরা পূর্ব বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার চর চন্দনবাইশা প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠানটি সরকারি হয়। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫০ জন। প্রতিষ্ঠার জন্মলগ্ন থেকেই প্রতিষ্ঠানটি উপজেলার একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান।
এ বিদ্যালয়ে প্রাক্তন শিক্ষার্থী রেজাউল করিম মিলন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে ঢাকায় কর্মরত রয়েছেন।
গত ২০০৮, ২০১২, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে মোট চারবার চর চন্দনবাইশা গ্রামেই প্রতিষ্ঠানটি যমুনা নদীর ভাঙনের শিকার হয়। এরপর থেকেই বিদ্যালয়টির জায়গা হয় চন্দনবাইশা গ্রামের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে। এখানে প্রায় ২০টি টিন দিয়ে একটি একচালা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। কয়েকটি পুরাতন টিন দিয়ে এর বেড়া দেওয়া হয়েছে। টিনগুলোর বয়স বেশি হওয়ার কারণে ঘরটিকে একটি জীর্ণশীর্ণ কুটির বা ঝুপড়ি ঘর বলা হয়ে থাকে।
কুটিরটির মাঝখানে বেড়া দিয়ে এটিকে দুই রুমে বিভক্ত করা হয়েছে। যেখানে দুই শিফটে নেওয়া হচ্ছে ক্লাশ। সেখানে ছোট ছোট কক্ষে শিক্ষার্থীরা অসহায়ের মতো পাঠ গ্রহণ করে। বিদ্যালয়টির নেই কোনো বাথরুম। কোথাও নেই বিন্দুমাত্র আধুনিকতার ছোঁয়া। বৃষ্টির দিনে চাল দিয়ে পানি পড়ে। এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের কিনারায় হওয়ায় বন্যার সময় স্কুলের মেঝে চুয়ে পানি আসে। ফলে বর্ষার সময় স্কুলের ক্লাসরুম প্রায়ই কর্দমাক্ত হয়ে যায়।
স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী আলো আক্তার জানায়, বর্ষার সময় আমরা খুবই কষ্ট করে পড়াশোনা করি। বৃষ্টি ও বন্যার পানিতে স্কুলের মেঝে সবসময় স্যাঁতসেঁতে থাকে।
অভিভাবক বাবু আকন্দ বলেন, আধুনিক যুগে এ ধরনের জরাজীর্ণ ভাঙা স্কুল দেশের কোথাও আছে কিনা তা আমার জানা নেই। দ্রুত প্রতিষ্ঠানটির পাকা ভবন ও উন্নত ওয়াশ ব্লক নির্মাণের জন্য সরকারের প্রতি জোর আবেদন জানাচ্ছি।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাসুমা আক্তার জানান, গত ২০০৮ সাল থেকেই তিনি এ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মোকছেদুল ইসলাম বদলিজনিত কারণে অন্য স্কুলে চলে গেছেন। মাত্র চার মাস আগে মাসুমা আক্তার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন। তাই এখনো প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নের জন্য কোথাও কোনো আবেদন করেননি।
সারিয়াকান্দি উপজেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা প্রভাত চন্দ্র সরকার বলেন, প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নের জন্য পাকা ভবন নির্মাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে; কিন্তু এখনো কোনো অনুদান পাওয়া যায়নি। তবে আমার জানামতে প্রতিষ্ঠানটির নিজস্ব কোনো জমি নেই।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহরিয়ার রহমান বলেন, আমি এ উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। স্কুলটি সরেজমিন পরিদর্শন করে নতুন ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।