পরিবারের অনুরোধে যুবদল নেতা ফোরকানের লাশ তোলা হয়নি
বগুড়া ব্যুরো
প্রকাশ: ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৪৬ পিএম
বগুড়ার শাজাহানপুরে মৃত খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক ফোরকান আলীর মরদেহ কবর থেকে তোলা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই ইউনিয়নের ঘাসিড়া সুফিপাড়া গ্রামে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদমান আকিফ ও পুলিশ সদস্যরা গেলেও পরিবারের অনুরোধে তারা ফিরে এসেছেন।
পরিবার হৃদরোগে তার মৃত্যুর দাবি করলেও ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক ইউনুস আলী হলুদ আদালতে শেখ হাসিনাসহ ৪৬০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদমান আকিফ জানান, আদালতের নির্দেশে মরদেহ উত্তোলন করতে আসার পর স্বজনরা আদালতে মামলা প্রত্যাহার ও মৃত্যুর সঠিক কারণ অবহিত করবেন মর্মে সময় আবেদন করেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের সময় আবেদন আমলে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে এ কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ঘাসিড়া সুফিপাড়া গ্রামের আবদুল কুদ্দুস গত ৫ নভেম্বর পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেন, তার ছেলে খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের আহবায়ক ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করত। তিনি গত ২০২৩ সালের ৩ ডিসেম্বর স্বৈরাচারী সরকারের প্রহসনের নির্বাচন বাতিলের দাবিতে অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেন। পুলিশ ও বিজিপি সদস্যদের ধাওয়াতে রাস্তায় হৃদরোগে মারা যান। পরে তাকে ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করা হয়।
তিনি বলেন, খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক ইউনুস আলী হলুদ গত ৩০ অক্টোবর বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে ১৬০ জনের নাম উল্লেখ করে ৪৬০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন। পরে আদালত মামলাটি শাজাহানপুর থানায় প্রেরণ করেন। ইউনুস আলী হলুদ আমাদের না জানিয়ে, আর্থিকভাবে লাভবান হতে কু-উদ্দেশ্যে মামলাটি করেছেন।
আবদুল কুদ্দুস আরও বলেন, মামলার সাক্ষী শাজাহানপুর উপজেলা বিএনপির সদস্য শফিকুল ইসলাম শফিক ও উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জিল্লুর রহমান বাদী হলুদের সঙ্গে পরস্পর যোগসাজশে মামলা করে এলাকার বিভিন্ন লোকজনের কাছে অবৈধভাবে চাঁদা দাবিসহ টাকা আদায় করছেন। তিনি ওই মামলার তদন্ত ও ফোরকানের মরদেহ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্ত না করতে আবেদন জানিয়েছেন।
মৃত ফোরকানের ছোট ভাই ওমর ফারুক বলেন, তারা বিএনপি পরিবার; গত ২০১২ সাল থেকে নির্যাতিত হয়ে আসছেন। তার ভাই যুবদল নেতা ফোরকানের সঙ্গে একই সংগঠনের নেতা ইউনুস আলী হলুদের রাজনৈতিক মতবিরোধ ছিল। আর তাই তাদের না জানিয়ে ফায়দা লোটার জন্য তিনি (হলুদ) মামলাটি করেছেন। তারা বিষয়টি পুলিশ সুপারকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। শিগগিরই জেলা বিএনপি ও যুবদল নেতাদের অবহিত করবেন।
তিনি বলেন, আমরা চাই না এ মিথ্যা মামলায় কোনো নিরপরাধ মানুষ সাজা পাক।
অভিযোগ প্রসঙ্গে মামলার বাদী খোট্টাপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক ইউনুস আলী হলুদ জানান, একজন সাবেক এমপি ছাড়াও দলের শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে তিনি তার সংগঠনের আহবায়ক ফোরকান আলী হত্যা মামলা করেছেন। প্রথমদিকে তার পরিবার মামলা করার ব্যাপারে সহযোগিতাও করেছেন। কিন্তু মামলায় তাদের দুজন নিকটতম আত্মীয় থাকায় তারা মামলা না চালাতে এসপির কাছে আবেদন করেছেন। তিনি (হলুদ) দাবি করেন, এ মামলা করে তিনি আসামিদের কাছে কোনো ফায়দা নেননি।
শাজাহানপুর থানার ওসি ওয়াদুদ আলম জানান, হত্যা মামলা যে কেউ করতে পারে। আর ফৌজদারি মামলার মালিক রাষ্ট্র। মৃতের বাবা আবদুল কুদ্দুস মামলার তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ ও লাশ উত্তোলন না করতে আবেদন করেছেন। তাকে (ফোরকান) গুলি করে হত্যা করা হয়েছে কিনা? তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ছাড়া বলা সম্ভব নয়। তবে ফোরকান হৃদরোগে মারা গেলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আসামি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও তাকে ধাওয়া করেছিলেন, যা প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন। যে কারণে এখন পর্যন্ত পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার ও গাবতলী থানার মামলায় গ্রেফতার একজনকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদমান আকিফের নেতৃত্বে বৃহস্পতিবার দুপুরে শাজাহানপুর উপজেলার খোট্টাপাড়া ইউনিয়নের ঘাসিড়া সুফিপাড়া গ্রামে কবরস্থান থেকে ফোরকান আলীর মরদেহ তুলতে যান। তবে পরিবার মামলা প্রত্যাহারে আবেদন করবেন এ মর্মে সময় প্রার্থনা করায় তারা ফিরে এসেছেন। আদালত নতুন করে কোনো নির্দেশনা না দিলে লাশ উত্তোলন করা হবে।