ন্যায্যমূল্যের দোকানে স্বস্তি স্বল্প আয়ের মানুষের
নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৫ পিএম
নওগাঁয় জেলা প্রশাসনের চালু করা ন্যায্যমূল্যের দোকানে স্বল্প আয়ের মানুষদের স্বস্তি মিলছে। আগামীতে দোকানে আরও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যুক্ত করে এমন উদ্যোগের দীর্ঘ পথচলা দেখতে চান ভোক্তারা।
নওগাঁ জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় ও সদর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে সদর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন বাজারে ন্যায্যমূল্যের এই দোকান চালু করা হয়েছে। এতে দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির বাজারে স্বল্প আয়ের খেটে-খাওয়া ও মধ্যম আয়ের মানুষদের মাঝে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
গত শনিবার প্রধান অতিথি হিসেবে দোকানের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল। এ সময় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এসএম রবিন শীষ, অন্যান্য কর্মকর্তা, ছাত্র সমাজের প্রতিনিধিসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
দোকানটি উদ্বোধনের পর থেকেই কমদামে পণ্য কিনতে ভিড় করেন ক্রেতারা। বাজার মূল্য থেকে কিছুটা কমদামে পণ্য পেয়ে উপকৃত হচ্ছেন বলে জানান ভোক্তারা।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম রবিন শীষ বলেন, স্বল্প আয়ের মানুষদের কথা চিন্তা করে জেলা প্রশাসক স্যারের সার্বিক নির্দেশনায় ন্যায্যমূল্যের দোকান চালু করা হয়েছে। মাঠে উৎপাদিত কৃষকদের ফসল বিশেষ করে কাঁচা সবজি হাতবদল হলেই দাম বেড়ে যায়। যার কারণে কৃষকরা যেমন তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তেমনিভাবে সাধারণ ভোক্তাদের দ্বিগুণ মূল্য দিয়ে খোলাবাজার থেকে সেই পণ্যগুলো কিনতে হচ্ছে। ফলে উভয়পক্ষই প্রতারণার শিকার হচ্ছেন আর তৃতীয়পক্ষ লাভবান হচ্ছেন। আর বাজারে এসে প্রয়োজনীয় সবজি কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সব শ্রেণির ভোক্তাদের। এমন সমস্যা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যেই সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনে ন্যায্য মূল্যের এই দোকানে বিক্রি করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ভোক্তারা খোলাবাজারের চেয়ে ন্যায্যমূল্যের দোকানে ৫-১০ টাকা কম দামে পণ্য পাচ্ছেন। দোকানে আপাতত তিনটি পণ্য আলু ৬৫ টাকা ও পেঁয়াজ ১০৫ টাকা কেজি এবং ডিম ৪৫ টাকা হালিতে বিক্রি হচ্ছে। এই দোকান থেকে একজন ক্রেতা ২ হালি ডিম এবং ২ কেজি করে আলু ও পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।
প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এই দোকান চালু থাকবে। তবে ভোক্তাদের চাহিদার ওপর নির্ভর করে আগামীতে আরও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলো দোকানে যুক্ত করার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।
ন্যায্যমূল্যের দোকানে পণ্য কিনতে আসা শহরের বাঙ্গাবাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা ময়েজ উদ্দিন বলেন, প্রতিদিনই বাজারে নোটিশ ছাড়াই কোনো না কোনো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এতে করে আমরা স্বল্প আয়ের মানুষরা জীবন-যাপন করতে হিমশিম খাচ্ছি। বাজারের তালিকা আর ছোট করা যাচ্ছে না। এমন ঊর্ধ্বগতির বাজারে ন্যায্যমূল্যের দোকান আমাদের কিছুটা স্বস্তি দিচ্ছে। তবে শুধুমাত্র আলু, পেঁয়াজ আর ডিমই নয়- অতিদ্রুত আমরা তেল, ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় অধিকাংশ পণ্য কম দামে এই দোকান থেকে পেতে চাই। আমাদের এমন দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল বলেন, জেলায় উৎপাদিত কাঁচা সবজির ক্ষেত্রে স্থানীয় খোলাবাজারে একটি প্রতিযোগিতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই ন্যায্যমূল্যের এই দোকান চালু করা হয়েছে। সরাসরি মাঠপর্যায়ে কৃষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সবজি এনে এই দোকানে ন্যায্যমূল্যে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এতে কৃষক ও ভোক্তা উভয়ই উপকৃত হবেন। পরবর্তীতে ফলাফল ভালো হলে জেলার প্রতিটি উপজেলায় এই দোকান চালু করা হবে। এছাড়া প্রতিটি হাটে প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষকদের জন্য টোল ফ্রি সবজি বিক্রির কর্নার চালুর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আমি আশাবাদী এমন কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে জেলার কৃষক ও ভোক্তারা উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি লাভবানও হবেন।