সংস্কারে নতুন রূপ পেল লোহাগড় মঠ
ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২২ পিএম
এক কালের প্রমত্তা ডাকাতিয়া নদীরপাড়ে ফরিদগঞ্জে জমিদারদের নির্মিত ৭০০ বছরের পুরোনো লোহাগড় মঠ কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘদিন পর এ মঠের সংস্কার করা হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি মঠের একটি মঠ পূর্ণাঙ্গ এবং অপর দুটির অংশবিশেষ সংস্কার হয়ে নুতন রূপ পেয়েছে মঠগুলো।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মতে, তাদের পরিকল্পনা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে মঠগুলোসহ পুরো এলাকা দৃষ্টিনন্দন হবে। এদিকে স্থানীয়দের দাবি, মঠ সংরক্ষণের পাশাপাশি ভ্রমণপ্রেমিদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার উত্তরে ঐতিহ্যবাহী জমিদার গ্রাম লোহাগড়। প্রতাপশালী জমিদার লোহ ও গড়। তাদের নামানুসারে গ্রামটির নামকরণ করা হয় লোহাগড়। লোহাগড় গ্রামে এককালের প্রমত্তা বর্তমানে মরা ডাকাতিয়া নদীর তীরে জমিদারবাড়ির নির্দেশিকা হিসেবে লোহ ও গড় নির্মাণ করেছিলেন এ তিনটি মঠ।
কথিত আছে, লোহাগড়ে সুউচ্চ মঠটি স্বর্ণখচিত। জমিদারদের প্রতাপ ও প্রতিপত্তির নিদর্শন স্বরূপ মঠের চূড়ায় স্বর্ণ দিয়ে অলংকৃত করা হয়েছিল। জমিদার প্রথা বিলুপ্তির পর ওই স্বর্ণের লোভে অনেকে মঠের চূড়ায় উঠতে গিয়ে আহত হয়েছেন। স্বর্ণ পরবর্তীকালে প্রাকৃতিক দুর্যোগে নদীতে পড়ে যায় বলে স্থানীয়রা জানান। অথবা রাতের আঁধারে দুষ্টুচক্রের মানুষরা নিয়ে গেছে।
জমিদারদের নির্মিত মঠ মনে করিয়ে দেয় জমিদার লোহ ও গড়ের কথা। ঐতিহ্যবাহী জমিদার এবং তাদের নির্মিত দর্শনীয় মঠগুলো দেখতে প্রতিদিন শত শত ভ্রমণপ্রেমী ভিড় জমান।
এলাকাবাসীর দাবি, মঠের সংরক্ষণের পাশাপাশি ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
এলাকাবাসী জানান, জনদাবির পরিপ্রেক্ষিতে লোহাগড় মঠের ঐতিহ্য এবং সংস্কারের কাজ শুরু হয়; কিন্তু একটি মঠ পূর্ণাঙ্গ সংস্কার এভং বাকিগুলো কিছুটা কাজ করে।
এদিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ এবং কুমিল্লা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) বিদ্যুৎ চন্দ্র দাস জানান, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক ২০ লাখ ৫০ টাকা ব্যয়ে লোহাগড়ের তিনটি মঠের মধ্যে একটির পূর্ণাঙ্গ সংস্কার এবং বাকি দুটি কিছুটা সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের ফেরুয়ারি থেকে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এর কাজ চলমান ছিল। চলতি অর্থবছরে নতুন বরাদ্দ পেলে বাকি দুটি মঠের পূর্ণাঙ্গ সংস্কার করা হবে। এছাড়া মঠ ঘিরে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। মঠের চারিপাশে বাউন্ডারি দেয়াল, ফুলের বাগানসহ নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে এটি দৃষ্টিনন্দন হবে এবং ভ্রমণপিপাসুদের তৃষ্ণা মিটবে।
লোহাগড়ের মাঠ পরিদর্শনে আসা ভ্রমণ পিপাসুরা জানান, এ মঠের ঐতিহ্য এবং ইতিহাস জেনে আমরা এখানে এসেছি। দেখতে ভালোই লাগছে, কিন্তু একেবারেই নির্জন এলাকা। এখানে কোনোরকম শৌচাগার ও পানির ব্যবস্থা না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। আশপাশের পরিবেশ নোংরা থাকার কারণে এবং সিকিউরিটি না থাকায় নিরাপত্তাহীন মনে করছি।
ফরিদগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা রাজিয়া জানান, লোহাগড় মঠ পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।