বৃদ্ধের গরু বিক্রির টাকা মেম্বারের পকেটে!
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৪ পিএম
লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে আমানত রাখার নামে আব্দুল বারী নামের এক বৃদ্ধ কৃষকের প্রায় ৪ লাখ টাকা মূল্যের ৪টি গরু বিক্রির সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত মো. জসিম উদ্দিন উপজেলার চর কাদিরা ইউপির ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য ও চরবসু এলাকার মকবুল আহম্মদের ছেলে।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ২০১৮ সালের ২২ রমজান রাতে বৃদ্ধ আব্দুল বারীর পত্রবধূ শাবানা আক্তার (১৮) ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। পুত্রবধূর আত্মহত্যার ঘটনার পর ভয়ে পরিবারের সদস্য ও পালের ৯টি গরু সঙ্গে নিয়ে পার্শ্ববর্তী চরকলাকোপা গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয়ের জন্য রওনার পথিমধ্যে জসিম উদ্দিনের মুখোমুখি হন।
জসিম বৃদ্ধের সঙ্গে থাকা ৪টি গরু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া পর্যন্ত তার জিম্মায় রাখার প্রস্তাব দেয়। সরল বিশ্বাসে বৃদ্ধ ৪টি গরু জসিম উদ্দিনের জিম্মায় রেখে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেন। কিছুদিন আত্মীয়ের বাড়িতে থাকার পর তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হলে সেখান থেকে ঢাকার নরসিংদীতে আত্মগোপনে থাকেন। এরই মধ্যে দীর্ঘ দুই বছর পর আত্মহত্যার ওই ঘটনায় বৃদ্ধ আব্দুল বারীর (৭৫) কোনো ধরনের সংশ্লিষ্ট পাওয়া যায়নি মর্মে আদালত তাকে মামলা হতে অব্যাহতি প্রদান করেন।
পরে মামলার তদন্তকারী সংস্থা নোয়াখালী পিবিআই সদস্যদের সহায়তায় পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে নিজ বাড়িতে ওঠেন তিনি। বাড়িতে ফিরে এসে জসিমের কাছে জিম্মায় থাকা ৪টি গরু ফেরত চাইলে গরুগুলো ফেরত দিতে অস্বীকার করেন জসিম। এলাকার লোকজন থেকে জানতে পারেন জসিম গরুগুলো প্রায় ৪ লাখ টাকা মূল্যে বিক্রি করে দিয়েছেন।
ভুক্তভোগী বৃদ্ধ আব্দুল বারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে যুগান্তরকে বলেন, আমি একজন গরিব অসহায় মানুষ। বিপদ মুহূর্তে সরল বিশ্বাসে মেম্বার জসিমের কথায় তার কাছে ৪টি গরু জিম্মায় রেখেছিলাম। কথা ছিল বিপদ কেটে গেলে আমার গরুগুলো সে ফেরত দিবে। এলাকার মানুষের মাধ্যমে জানতে পেরেছি গরুগুলো সে ৪ লাখ টাকা বিক্রি করেছে। এখন টাকাও দেয় না, গরুও দেয় না। উল্টো বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছে। আমি এখন কার কাছে গেলে আমার গরু ফেরত পাব।
স্থানীয় আবুল কাশেম ও মো. হেলাল জানান, আব্দুল বারীর পুত্রবধূর আত্মহত্যার দিন জসিম মেম্বারের জিম্মায় ৪টি গরু রাখার বিষয়টি তারা শুনেছেন। গরু ফেরত পেতে তিনি সামাজিকভাবে অনেকের কাছে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি। তাছাড়া জসিম ওই ওয়ার্ডের যুবলীগের সভাপতি থাকায় ওই সময়ে তার দাপটে সবাই তটস্থ থাকতেন বলেও জানান তারা।
ওই এলাকার বাসিন্দা ও চরকাদিরা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক বোরহান পাটোয়ারী বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা সামাজিকভাবে বসার উদ্যোগ নিলেও মেম্বার জসিম বৈঠকে আসেনি। যে কারণে বিষয়টি সমাধান করা সম্ভব হয়নি।
অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য মো. জসিম উদ্দিন বলেন, আব্দুল বারীর ছেলের কাছে আমি ১০ হাজার টাকা পাব। টাকাগুলো দেই দিচ্ছি বলে টালবাহানা করছে। আমার কাছে গরু জিম্মায় রাখার বিষয়টি সত্য নয়। এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
চরকাদিরা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. হারুন বলেন, ঘটনাটি আমাকে এখন পর্যন্ত কেউ জানায়নি। জানালে জসিমকে ডেকে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করব।
কমলনগর থানার ওসি তহিদুল ইসলাম বলেন, ওই বৃদ্ধকে বলেন লিখিতভাবে থানায় অভিযোগ দিতে। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।