৬ মাসের শিশু সন্তানের আদর করে নাম রেখেছিলেন ইশা জান্নাত তানহা। কিন্তু বাবা ডাকশোনার আগেই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় হতে হলো তাকে। ৪ আগস্ট সিলেটের গোলাপগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবদ্ধি হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যান তাজউদ্দিন। সেই সঙ্গে সব স্বপ্ন তছনছ হয়ে যায় পরিবারের। ঘটনার দেড় মাসের মধ্যে স্ত্রী রুলি বেগম স্বামীর বাড়ি ছেড়ে চলে যান বাবার বাড়ি। সঙ্গে তার অবুঝ ২ সন্তান ইশা জান্নাত তানহা (৬ মাস) ও খাদিজা জান্নাতকে (৮) সঙ্গে নিয়ে যান। 

তাজউদ্দিনকে হারিয়ে এখন তার বৃদ্ধ মা সুফিয়া বেগম শুধু ঢুকরে ঢুকরে কাঁদছেন। ছেলেহারা মাকে কেউ সান্ত্বনা দিতে পারছেন না। ঘরে থাকা বোন হালিমা বেগম ভাইয়ের শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন। তারা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করছেন না। পরিবারের হাল ধরা তাজউদ্দিনকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে গেছে এখন গোটা পরিবার।

জানা যায়, ৪ আগস্ট উপজেলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল গোটা উপজেলা। উপজেলা সদর ও ঢাকা দক্ষিণ তখন অগ্নিগর্ভা রূপ ধারণ করে। ছাত্র-জনতা ঢাকা দক্ষিণ থেকে মিছিল নিয়ে যখন ধারাবহর এলাকায় পৌঁছে তখন তাদের মিছিলে যোগ দেয় তাজউদ্দিন। এসময় শত শত ছাত্র-জনতার মিছিল ছত্রভঙ্গ করতে গুলিবর্ষণ করা হয়। ঘটনাস্থলেই গুলিবদ্ধি হয়ে শহিদ হন তাজউদ্দিন। আরও অনেক লোকজন গুলিবদ্ধি হয়ে আহত হয়। এ ঘটনার পর এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে চরম উত্তেজনা। অনাকাঙ্ক্ষিত এই মৃত্যুর পর শহিদ তাজউদ্দিনের পরিবারসহ গোটা উপজেলায় নেমে আসে শোকের ছায়া। শহিদের লাশ নিয়ে মিছিল উপজেলা সদরে এসে পৌঁছেলে এলাকায় রুদ্রমূর্তি রূপ ধারণ করে। 

এসময় পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান দেয় বিক্ষোভকারীরা। ঘটনার পর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন শহিদ তাজউদ্দিনের স্ত্রী রুলি বেগম। মামলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের আসামি করা হয়। শহিদ তাজউদ্দিন হত্যাকাণ্ডের দেড় মাসের মাথায় রুলি বেগম তার দুই সন্তানকে নিয়ে পিত্রালয়ে চলে যায়। 

এদিকে শহিদ তাজউদ্দিনকে হারিয়ে তার বৃদ্ধ মা সুফিয়া বেগম এখন শুধু কাঁদছেন আর আহাজারি করছেন। তিনি কেঁদে কেঁদে বললেন, আমি আমার পুত্র হত্যার বিচার চাই। যারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের উপযুক্ত শাস্তি চাই। 

শহিদ তাজউদ্দিনের বোন হালিমা বেগম বলেন, আমরা আমার ভাই শহিদ তাজউদ্দিনের হত্যাকারীদের উপযুক্ত বিচার চাই।