Logo
Logo
×

সারাদেশ

হাসিনার বিরুদ্ধে যুবলীগ কর্মীর মামলা, কিন্তু কেন?

Icon

শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার

প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০২:০৯ পিএম

হাসিনার বিরুদ্ধে যুবলীগ কর্মীর মামলা, কিন্তু কেন?

সরকারের দৃঢ় অবস্থান এবং সুস্পষ্ট নির্দেশনার পরও চট্টগ্রামে মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনা থামছে না। এবার এক সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে ডবলমুরিং থানায় মামলা হয়েছে, যিনি ঘটনার সময় ভারতে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

আবার ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী বন্দর থানা এলাকার বাসিন্দা এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে কোতোয়ালি থানায়। এই দুটি মামলা দায়েরের ঘটনায় তারা বিস্মিত হয়েছেন। এমনকি এক যুবলীগ কর্মী বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এসব ঘটনায় চট্টগ্রামে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ভর করছে। গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন মিথ্যা মামলার আসামিরা।

জানা যায়, গত ২০ নভেম্বর নগরীর ডবলমুরিং থানায় একটি মামলা করেন (নম্বর: ১৪, তারিখ ২০/১১/২০২৪) মোহাম্মদ মানিক নামে এক ব্যক্তি। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক দুই সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ ১০৮ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়।

ঘটনার তারিখ ও সময় দেখানো হয় ৫ আগস্ট বিকাল ৫টা। ঘটনাস্থল দেখানো হয় ডবলমুরিং থানার এক কিলোমিটার দূরে মনসুরাবাদ মাজার এলাকা। আসামিরা অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবর্ষণ করে বলে অভিযোগ করা হয়। মামলায় ৩৫ নম্বর আসামি করা হয়েছে মোহাম্মদ এয়াকুব নামে এক ব্যক্তিকে।

তার বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলায়। বাবার নাম মৃত আবুল কাশেম। এয়াকুব রাষ্ট্রায়ত্ত যমুনা অয়েল কোম্পানির একজন কর্মচারী ও সিবিএ নেতা। এয়াকুবের পাসপোর্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী তিনি ১ আগস্ট চিকিৎসার উদ্দেশ্যে চেন্নাই যান। তার পাসপোর্টে চেন্নাই বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশনের সিল রয়েছে। তিনি চিকিৎসা শেষে স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ৭ আগস্ট ঢাকা ও ৯ আগস্ট চট্টগ্রামে ফিরে আসেন।

মামলার বাদী মানিকের বাবার নাম মৃত আবদুল জলীল। তার বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের মুরাদপুর এলাকায়। বর্তমান ঠিকানা দেখানো হয়েছে রাজ্জাক কলোনি, পাহাড়তলী বারকোয়ার্টার। এজাহারে তার যে মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে সেখানে একটি ডিজিট কম। ধারণা করা হচ্ছে বাদীকে যাতে কেউ খুঁজে না পায় সে জন্য এই চালাকির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে।

এয়াকুব অভিযোগ করেন, অফিসের কোনো প্রতিপক্ষ, যারা তাকে ঘায়েল করতে চান তারাই হয়তো তাকে মিথ্যা মামলায় আসামি করেছেন। এ বিষয়ে ডবলমুরিং থানার ওসি কাজী রফিক আহম্মেদ যুগান্তরকে বলেন, মামলা নিয়ে তারা বিপাকে রয়েছেন। থানায় মামলা না নিলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করা হয় ওসির বিরুদ্ধে। আবার মামলা নিতে বিভিন্ন মহল থেকে দেওয়া হয় চাপ। এ কারণে সত্য বা মিথ্যা মামলা যাচাই করার সুযোগ তাদের থাকে না। তবে তিনি মিথ্যা মামলায় কাউকে হয়রানি করা হবে না এবং সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আসামি চিহ্নিত করা হবে বলে জানান।

কোতোয়ালি থানার একটি মামলায় আসামি হয়েছেন ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী নাসিরুল আলম। কাজী মোহাম্মদ সোহেল নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ২৯ আগস্ট এ মামলা করেন। ৪ আগস্ট নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন রিয়াজউদ্দিন বাজার পাখি গলির মুখে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে এ মামলা করা হয়। মামলায় সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ২৮৬ জনকে সুনির্দিষ্ট আসামি এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০-৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় নাসিরুল আলমকে ১৪৩ নম্বর আসামি করা হয়। তার বাড়ি বন্দর থানাধীন উত্তর মধশ্য হালিশহর ওয়াসি চৌধুরীপাড়া।

নাসিরুল আলম যুগান্তরকে বলেন, তিনি ১৯৮৯ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করেন। ম্যানচেস্টারে ৩০ বছর ধরে ব্যবসা করছেন। গত বছরের জুন মাসে দেশে ফিরেছেন। তিনি কোনো রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। তার বাড়ি বন্দর এলাকায়। তিনি অভিযোগ করেন, এলাকায় জায়গাজমি নিয়ে একটি পক্ষের সঙ্গে তার বিরোধ রয়েছে। হয়তো তারাই হয়রানির জন্য তাকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার মতো একটি স্পর্শকাতর মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে। মামলার এজাহারে বাদীর যে নম্বর দেওয়া হয়েছে তাতে কল করে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

এ মামলা প্রসঙ্গে কোতোয়ালি থানার ওসি ফজলুল কাদের চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, মিথ্যা মামলা হচ্ছে এটা অস্বীকার করার জো নেই। নানাজন-নানাভাবে এসব মামলা করছে। তবে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে না পারলেও তদন্তে একজন নিরীহ লোকও যাতে হয়রানির শিকার না হয় সে বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে চট্টগ্রামে হামলা, হামলার পরিকল্পনা ও নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ এনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৮৭ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন কফিল উদ্দিন নামে এক যুবলীগ কর্মী। গত সোমবার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল দেবের আদালতে মামলাটি দায়ের হওয়ার পর বাদীর পরিচয় জেনে বিস্মিত হন সংশ্লিষ্টরা। এই মামলার পর চট্টগ্রামে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। কফিল উদ্দিন এবং একজন আইনজীবীর মধ্যে কথোপকথনের ৫ মিনিট ১২ সেকেন্ডের একটি রেকর্ডও ভাইরাল হয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকা কফিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে নগরীর কোতোয়ালি থানায় অস্ত্র ও মাদকসহ তিনটি মামলা এবং আনোয়ারা থানায় একটি জিডি রয়েছে।

গ্রেফতার হয়ে একাধিকবার কারাগারেও গেছেন তিনি। এজাহারের বর্ণনা অনুসারে, কফিল নগরীর নন্দনকানন এলাকার বাসিন্দা। গত ৪ আগস্ট নিউমার্কেট গোলচত্বর এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তিনি অংশ নেন। ওই দিন আসামিদের কয়েকজনের নির্দেশে ও পরিকল্পনায় বাকি আসামিরা গুলি করেন এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। এতে বাদী (কফিল) হাতে আঘাত পান। মামলায় ২৬ পুলিশ সদস্যকে আসামি করা হলেও তাদের অনেকেই চট্টগ্রাম থেকে কয়েক বছর আগেই বদলি হয়ে গেছেন।

প্রসঙ্গত, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম সফরকালে মিথ্যা মামলা দায়ের নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বলেন, আগে পুলিশ ভুয়া মামলা করত, এখন ভুয়া মামলা করছে পাবলিক।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম