শঙ্কার মাঝেও বাণিজ্য মেলার অনুমতি, প্রধান সমন্বয়ক আ.লীগ নেতা!
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৫ পিএম
ডিসেম্বরে কোথাও বাণিজ্য মেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি। তবে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবারও শিল্প ও বাণিজ্য মেলার অনুমতি দিয়েছে। পর্যটনের নিরাপত্তা সংকট নেই- এটি প্রমাণ করতেই এ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
মেলার অনুমতি পাওয়া কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা জানান, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কক্সবাজারেও ভয়াবহ। সময়মতো পুলিশ কল করেও পাওয়া যায় না। এরপরও পূর্ব ধারাবাহিকতায় মেলার আয়োজনের জন্য আবেদন করেছি। তবে আবেদন আমরা করলেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাইফুল ইসলাম লিটনকে।
মেলার প্রধান সমন্বয়ক আওয়ামী লীগ নেতা
এবারের বাণিজ্য মেলার প্রধান সমন্বয়ক করা হয়েছে কক্সবাজার পৌর শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি অংশের আশঙ্কা, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে কেউ কেউ মেলা ঘিরে নাশকতার পরিকল্পনা করতে পারে।
এ বিষয়ে চেম্বারের সভাপতি আবু মোরশেদ বলেন, আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে প্রধান সমন্বয়ক করা হয়েছে- এটা আমার জানা নেই। বিষয়টি তদন্ত করা হবে এবং প্রয়োজনে চুক্তি বাতিল করা হবে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. ইয়ামিন হোসেন স্বাক্ষরিত ৩১ অক্টোবরের জেলা প্রশাসনের সাধারণ শাখার এক আদেশে কলাতলীর লোভানা ইসলাম আরোহী এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলামের নামে ১ ডিসেম্বর হতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্য মেলার অনুমতি দেওয়া হয়। ২৮ অক্টোবর পুলিশ সুপার বিশেষ শাখার দেওয়া অনাপত্তিপত্র মূলেই এ অনুমতি দেওয়া হয় বলে উল্লেখ রয়েছে। নিজস্ব নিরাপত্তাসহ নানা বিষয়ে ২৯টি নির্দেশনা দেওয়া হয় অনুমতি পত্রে।
কক্সবাজারের দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও যুবদল নেতা আমিনুল ইসলাম মুকুল বলেন, দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক নয়। কক্সবাজারও একই অবস্থায় রয়েছে। এমন সময়ে বাণিজ্য মেলা লাভের চেয়ে ক্ষতি বয়ে আনবে। আমরা জেলা শহরে যারা ব্যাংক ঋণ, দেনায় ব্যবসা করি- তারা শুরু হতেই বাণিজ্য মেলার বিরোধী। প্রতি ঈদের আগে বাণিজ্য মেলায় মানহীন অনেক পণ্য সস্তায় পেয়ে মার্কেট বিমুখ হন স্থানীয়রা। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েন কোটি টাকা বিনিয়োগে সারাবছর ব্যবসার আশায় থাকা ব্যবসায়ীরা।
তিনি বলেন, আমাদের দাবিকে উপেক্ষা করে গত ১৬ বছর আওয়ামী সরকারে ভর করে চলা লোকজন প্রতি বছর মেলার দায়িত্ব পেয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার না থাকলেও সেই সময় সুবিধাভোগীরা এবারো মেলার অনুমতি আদায় করে নিয়েছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।
ট্যুরস অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, অতীতের বাণিজ্য মেলা কক্সবাজারের পর্যটন উন্নয়নে কোনো ভূমিকা রাখেনি। পণ্যের গুণগত মান নিয়ে বার বার প্রশ্ন উঠা বাণিজ্য মেলা এবারো কোনো বাড়তি সুবিধা আনবে না, বরং উল্টো বদনাম ও আতঙ্ক বয়ে আনতে পারে। গত ৫ আগস্টের পর পুলিশের মনোবল ভেঙে পড়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কক্সবাজার শহরে ছিনতাই ও অপরাধ বেড়েছে। ডিসেম্বরে ভরা পর্যটন মৌসুমে শুরু হতে যাওয়া বাণিজ্য মেলায় আসা-যাওয়া লোকজনকে লক্ষ্য করে ছিনতাইয়ের আশঙ্কা রয়েছে। মেলা চালাতে হলে, পুরো শহরে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা জোরদার দরকার।
এদিকে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, মেলার দায়িত্ব আওয়ামী লীগের নেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। দলটির অনেকেই মনে করেন, মেলার নামে পরিকল্পিতভাবে কোনো বড় ধরনের ঘটনা ঘটানো হতে পারে।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট অনেক উদ্যোক্তা ও হোটেল ব্যবসায়ী জানান, মেলার কারণে পর্যটকদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হতে পারে। তাদের মতে, এই সময়ে বাণিজ্য মেলা পর্যটন খাতে কোনো ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।
তবে মেলা আয়োজকদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাণিজ্য মেলা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্দেশনা মেনে চলব। কোনো সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, অতীত ইতিহাসে মেলাকেন্দ্রিক কোনো অঘটনের উদাহরণ নেই। তাই পর্যটন এলাকা স্বাভাবিক সেটা বুঝাতে এবারও মেলা আয়োজনে কোন সমস্যা দেখছি না।
গত তিন মাসে অসংখ্য ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে স্বীকার করে এসপি বলেন, সমস্যা থাকবে আমাদের অভিযানও অব্যাহত থাকবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর টিম টহলে আনার ব্যবস্থা করা হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ সালাউদ্দিন বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতামতের ভিত্তিতেই কক্সবাজারে মেলা আয়োজনের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে পুনরায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মতামত চাওয়া হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।