পাখিদের স্বর্গরাজ্য ‘হাজারিখিল অভয়ারণ্য’
ফটিকছড়ি (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৫ পিএম
ছবি: যুগান্তর
চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির হাজারিখিল অভয়ারণ্য দিন দিন পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠছে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। পাখিদের কিচির-মিচির শব্দে মুগ্ধ দর্শনার্থীরা। গিরিপথ, সুড়ঙ্গ ও পাহাড়ি ঝর্ণা আর চা বাগান ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ যে কোনো ভ্রমণ পিঁপাসুর জন্য বেশ আনন্দের।
হাজারিখিল গেলেই দর্শনার্থীরা পাখির রাজত্বে হারিয়ে যান। এখানে রয়েছে হাজারো নাম না জানা পাখির আনা-গোনা। এই অভয়ারণ্য আপনাকে পাখির কলকাকলি মুখর আবেশময় এক জগতে নিয়ে যাবে।
বন বিভাগের ২৯০৮ হেক্টর জায়গাজুড়ে এ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যটি গঠিত। ১৮৯৩ সালে এ জায়গাটিকে ‘রামগড়-সীতাকুন্ড সংরক্ষিত বন’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। বন্যপ্রাণীর পাশাপাশি এখানে রয়েছে নানা ধরনের জীবজন্তু।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-ভাল্লুক, বনবিড়াল, মেছোবাঘ, শিয়াল, মায়া হরিণ, সাম্বার, বন কুকুর, বনছাগল, বানর ও হনুমান। কখনো কখনো চিতাবাঘেরও দেখা মিলে এই অভয়ারণ্যে।
বাংলাদেশ বন গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে এক গবেষণায় এই অরণ্যে এমন কিছু পাখির সন্ধান পাওয়া গেছে, যা অন্য কোনো বনে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না।
এর মধ্যে সেই তালিকায় আছে হুদহুদ, নীলকান্ত, বেঘবৌ, আবাবিলসহ আরও অনেক আকার-আকৃতি, বর্ণ ও স্বভাবের বৈচিত্র্যময় পাখি।
আরও উল্লেখযোগ্য পাখির তালিকায় আছে হট্টিটি, বেশরা, ওয়াক, আলতাপরী, লেজ নাচনি, বাদামি কসাই, সাত ভায়লা, ম্যাকারিন, ইত্যাদি। এসব পাখির আকার-আকৃতি, বর্ণ ও স্বভাবে বৈচিত্র্যময়। এছাড়া বিভিন্ন ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির পরিযায়ী পাখির দল এসে এই অরণ্যকে করে তোলে পাখিদের স্বর্গরাজ্য।
মস্ত বড় ঠোঁট ও শিরস্ত্রাণের জন্য বিখ্যাত পাখি কাউ ধনেশও আছে। সেটিও বিপন্নপ্রায় পাখিদের মধ্যে একটি। হয়তো দেখা পাওয়া যেতে পারে পানির কাছাকাছি কোনো বড় অন্ধকার গাছে ডালপালার মধ্যে আত্মগোপন করা হুতুম পেঁচারও।
মোট আট প্রজাতির উভচর এবং ২৫ প্রজাতির সরীসৃপ আছে এ বনে। তবে পাখির অভয়ারণ্য খ্যাত এ বনে রয়েছে প্রায় ১২৩ প্রজাতিরও বেশি পাখি! সে হিসেবে হাজারিখিল অভয়ারণ্যকে পাখি প্রেমীদের স্বর্গ বললেও ভুল হবে না। বিশেষ করে বিপন্নপ্রায় কাঠময়ূর আর মথুরার দেখা পাওয়া যায় এ বনে। বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের সমারোহ থাকার কারণে চিরসবুজ এটি।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, অভয়ারণ্যের ভেতর ঢুকতেই দেখবেন, হাতের বামপাশে বিশাল চা বাগান আর ডান পাশে সিঁড়ি বেয়ে উঠেই বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য। এখানে আপনি হারিয়ে যাবেন চা বাগানের দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্যে। কিছু সময়ের জন্য আপনার মনে হবে পাহাড়ি অঞ্চলে বসবাস করতে পারলেই ভালো হতো। এ ছাড়া হাজারিখিলে নানা ধরনের বৃক্ষের সমাহারও উপভোগ করার মতো।
উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদের তালিকায় আছে সেগুন, গর্জন, চাপালিশ, গামারি, ছাতিয়ান, চুন্দুল, গুটগুটিয়া ইত্যাদি। বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু বিরল প্রজাতির বৃক্ষ বৈলামও আছে সেখানে। যার উচ্চতা প্রায় ১০০ মিটার। যা হাজারিখিল ছাড়া বাংলাদেশের আর কোথাও প্রায় নেই বললেই চলে। এছাড়া সেখানে আছে বিখ্যাত রাঙাপানি চা বাগান, চা তৈরির কারখানা, রাবার বাগান, পাহাড়, অরণ্য, ঝরনা, ট্রেইলসহ আরও অনেক কিছু।
বিখ্যাত রাঙাপানি চা বাগান এ অভয়ারণ্যের পাশেই অবস্থিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় এ হাজারিখিল অভয়ারণ্যটি দর্শনার্থীদের ভ্রমণের প্রাণকেন্দ্র হয়ে ওঠেছে। অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়দের জন্য রয়েছে এনা ধরনের ক্লাইম্বিংয়ের সুযোগ।
ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ভ্রমণ পিপাসুদের আকর্ষণীয় করে তুলে হাজারিখিল অভয়ারণ্যে, আমরা প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রেখে আরও পর্যটক মুখর করতে কাজ করছি।
চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম কায়সার বলেন, পর্যটক আসুক,পরিবেশ ধ্বংস করে আমরা কোন পর্যটক উৎসাহিত করবোনা, নিয়ম মেনে পর্যটকরা হাজারিখিলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবে।
হাজারিখিলের অবস্থান-
◻️ চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি সদর থেকে ১৩ কিমি পশ্চিমে হাজারিখিল অভয়ারণ্যটি অবস্থিত। চট্টগ্রাম শহর থেকে ফটিকছড়ির বাসে ১০০ টাকা ভাড়া, আর ট্রেনে চট্টগ্রাম শহর থেকে নাজিরহাট ১১ টাকা। আবার নাজিরহাট সিএনজি চালিত অটোরিক্সাযোগে যাওয়া সহজ। ভাড়া নেয় ২৫০-৩০০ টাকা।
◻️ ঢাকা থেকে যে কোনো বাসে চট্টগ্রাম শহর এবং চট্টগ্রামের অক্সিজেন থেকে এসি বাসে ফটিকছড়ি সদর। ভাড়া ১০০ টাকা। ওখান থেকে সরাসরি হাজারিখিল।