কিশোরগঞ্জের ৫টি আসনে বিএনপি-জামায়াত থেকে মনোনয়ন চান যারা
কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৫ পিএম
জাতীয় সংসদ নির্বাচন কবে এ ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এরই মধ্যে কিশোরগঞ্জে বইতে শুরু করেছে নির্বাচনের হাওয়া। ভোটাধিকার থেকে দীর্ঘদিন বঞ্চিত এ এলাকার মানুষ এখন অপেক্ষায় রয়েছেন নিজের মতপ্রকাশের। সেটি কবে কীভাবে হবে, আলোচনায় সে প্রসঙ্গও। এতে রসদ জোগাচ্ছে রাজনৈতিক দলের নেতাদের নানা কর্মসূচি। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাদের তৎপরতা ব্যাপক। আওয়ামী শাসনামলে দেশ ও এলাকাছাড়া কয়েকজন ফিরেছেন, নেমেছেন মাঠে। জামায়াত এক আসনে প্রার্থী চূড়ান্তই করে ফেলেছে। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এবং নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য মিলেছে।
কিশোরগঞ্জ-০১ (কিশোরগঞ্জ-হোসেনপুর) আসনে গণসংযোগ, মতবিনিময় ও সাংগঠনিক নানা কর্মকাণ্ডে দেখা মিলছে সাবেক ঢাকা বিভাগীয় স্পেশাল জজ ও জাজেজ অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. রেজাউল করিম খান চুন্নু, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, প্রথম যুগ্মসাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল ও সাংগঠনিক সম্পাদক হাজি ইসরাইল মিয়াকে। দল ও কর্মীদের সমর্থন পেলে আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান তারা। কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-হোসেনপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নের প্রত্যাশায় রয়েছেন কিশোরগঞ্জ জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দীন, আশফাক আহমেদ জুন, রুহুল হোসাইন আখিল ও শহীদুজ্জামান কাকন। তাদের মধ্যে জালাল উদ্দীন, আসফাক আহমেদ ও রুহুল আমিন আখিল মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
দীর্ঘদিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) নির্বাচনি এলাকার সাবেক সংসদ-সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ড. এম ওসমান ফারুক। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে দেশে ফিরেছেন তিনি। রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। তার গণসংবর্ধনা, মতবিনিময় ও গণসংযোগ এলাকায় আলোচনার শীর্ষে। এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন অ্যাডভোকেট জালাল মোহাম্মদ গাউস ও জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা। তবে মাঠে তাদেরও ওসমান ফারুকের পক্ষে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে।
অপরদিকে এ আসনের সদ্য সাবেক সংসদ-সদস্য ও মন্ত্রী জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার মিছিলে সহিংসতার ঘটনায় মামলা রয়েছে। এলাকায় তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। মাঠে নামতে পারছেন না তিনি।
আওয়ামী শাসনামলে নিজ এলাকা কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনে এসে কোনো দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট মো. ফজলুর রহমান। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে তিনি এবার বাধাহীন পরিবেশে গণসংবর্ধনা, মতবিনিময় ও গণসংযোগ কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন।
কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল এবং সাবেক পৌর মেয়র এহসান কুফিয়া গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে মনোনয়নের প্রত্যাশায় রয়েছেন তারা। তবে আসনটিতে ১২ দলীয় জোটের সমন্বয়ক জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদাকে সহযোগিতা করার জন্য কেন্দ্রীয় বিএনপি চিঠি দিয়েছে। তাকেও সহযোগিতা করছেন বিএনপি নেতারা। অন্যদিকে মজলিশে শূরার সদস্য জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির অধ্যাপক রমজান আলীকে প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে দল গোছানোর কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি গণসংযোগ, মতবিনিময় ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম। নিজ নির্বাচনি এলাকা ছাড়াও পুরো জেলায়ই সক্রিয় তিনি।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ের কমিটিগুলোর সম্মেলন চলছে। তারপর পৌরসভা ও উপজেলা পর্যায়ের সম্মেলন শেষে ডিসেম্বরের মধ্যে জেলা বিএনপির সম্মেলনের প্রস্তুতি চলছে। আর এ কারণে সব সাংগঠনিক ইউনিটের নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দল। বর্তমান বিএনপি যে কোনো সময়ের চেয়ে গোছানো এবং শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করার সঙ্গে আমাদের নির্বাচনি প্রচারণার কাজও শুরু হয়ে গেছে ধরে নিতে পারেন। কিশোরগঞ্জের ছয়টি আসনের প্রত্যেকটিতেই বিজয়ী হওয়ার মতো একাধিক যোগ্য প্রার্থীও রয়েছে আমাদের।
জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য অধ্যাপক রমজান আলী যুগান্তরকে বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে সম্মেলনের মাধ্যমে আমাদের ১৩ উপজেলায় আমির নির্বাচিত হয়েছে। তারা নিয়মিত মতবিনিময় ও গণসংযোগের মতো গণসম্পৃক্ত নানা কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছেন। তিনি দাবি করেন, জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটি কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে তাকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে।
সূত্রমতে, ১৯৯১ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতটি আসনের মধ্যে বিএনপির প্রার্থীরা পাঁচটিতে বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করেন। ১৯৯৬-এর নির্বাচনে দুটি আসনে এবং ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দুটি আসনে জয় পান তারা। এখন পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের কোনো আসন থেকে জামায়াতে ইসলামীর জয়ের ইতিহাস নেই।