টিআরসি পদে নিয়োগের ফলাফল প্রকাশ
টাঙ্গাইলে ১২০ টাকায় স্বপ্নপূরণ করল ১০৫ জন
যুগান্তর প্রতিবেদন, টাঙ্গাইল
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৬ পিএম
টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মহেড়া গ্রামের স্বপ্না আক্তার। তার বাবা কৃষিকাজ ও মা একটি স্কুলের দপ্তরির চাকরি করে কোনোরকম সংসার চালাচ্ছেন। দুই ভাই ও তিনি খুব কষ্ট করে মানুষ হচ্ছেন। পরিবারে অভাব অনটনের মাঝেও তিনি এসএসসি পাশ করেছেন।
বুধবার বিকালে টাঙ্গাইলে বাংলাদেশ পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট (টিআরসি) পদে নিয়োগ পেয়ে তার স্বপ্নপূরণ হয়েছে।
তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকে স্বপ্ন ছিল মানুষের সেবা করার; কিন্তু সেবা করার সময় থাকলেও অর্থ না থাকায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায় না। তবে পুলিশে চাকরি করলে সহজেই মানুষ ও দেশের সেবা করা যায়। তাই পুলিশ হওয়ার খুব ইচ্ছা ছিল। তবে বিনা ঘুসে ১২০ টাকায় আমার স্বপ্ন পূরণ হবে তা কখনো কল্পনা করতে পারিনি। আমি বিনা ঘুসে মানুষের সেবা করার জন্য সবার দোয়া চাই।
শুধু স্বপ্না আক্তার নয়, তার মতো টাঙ্গাইলের ১০৫ জনের ১২০ টাকায় স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন নারী রয়েছেন।
জেলা পুলিশ সূত্র জানায়, টাঙ্গাইলে বাংলাদেশ পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট (টিআরসি) পদে ছয় হাজার ৩১৯ জন আবেদন করেন। শারীরিক পরীক্ষা শেষে লিখিত পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হন ৮১১ জন। ৩৬১ জন ভাইভা পরীক্ষা দিয়ে ১০৫ জন উত্তীর্ণ হন। বুধবার বিকালে ফলাফল প্রকাশ হলে অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে জড়িয়ে ধরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
ফলাফল প্রকাশের সময় উপস্থিত ছিলেন- টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সরোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রাকিবুল হাসান রাসেল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহেল রানা, মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন সরকার, গাজীপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
সরকারি ফি দিয়ে নিয়োগ পাওয়া সদর উপজেলার করটিয়া গ্রামের জাহিদুল ইসলাম শ্রাবণ বলেন, এত দিন জানতাম ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুস ছাড়া পুলিশে চাকরি হয় না। আজকে ১২০ টাকায় চাকরি পেয়ে সেটি ভুল প্রমাণ হলো। বিনা ঘুসে চাকরি দেওয়ায় টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপারের কাছে চির কৃতজ্ঞ।
ভূঞাপুরের বাগবাড়ি গ্রামের নাজমুল ইসলাম বলেন, বাবা-মায়ের স্বপ্ন ছিল আমি পুলিশ হব। সেই ইচ্ছাশক্তি থেকেই পুলিশের আবেদন করেছিলাম। আমার চাকরি পেতে কাউকে কোনো ঘুস দিতে হয়নি। আমার মা বেঁচে থাকলে বাবার মতো তিনিও খুব খুশি হতেন। আমি দায়িত্ব পালনের সময় কারো কাছ থেকে কোনো ঘুস নেব না। পুলিশের ধর্মই হচ্ছে শান্তি শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা দেওয়া।
ভূঞাপুরের নিকলা গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিকী বলেন, সেবা দিতেই পুলিশে যোগদান করেছি। তবে উৎকোচ ছাড়া যে সরকারি চাকরি নেওয়া যায় আমি তার জীবন্ত উদাহরণ। নিয়োগ কমিটির কাছে আমরা চির কৃতজ্ঞ।
পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, নিয়োগে অনিয়ম রোধে সবাই একসঙ্গে কাজ করেছি। সব মিলিয়ে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হয়েছে। নিয়োগে কোনো অবৈধ লেনদেন বা স্বজনপ্রীতি হয়নি।