Logo
Logo
×

সারাদেশ

এসআই রাজ্জাকের বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ

Icon

রাজশাহী ব্যুরো

প্রকাশ: ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৮ পিএম

এসআই রাজ্জাকের বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ

প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে একই কর্মস্থলে (থানায়) কর্মরত রয়েছেন রাজশাহীর দুর্গাপুর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রাজ্জাক। তার বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে অবৈধপন্থায় মোটা টাকা উপার্জনের অভিযোগ রয়েছে। নিজ এলাকায় গড়েছেন সম্পদের পাহাড়।

একই কর্মস্থলে দুই বছরের অধিক সময় থাকার নিয়ম না থাকলেও একাধিকবার বদলির আদেশ হলেও অদৃশ্য শক্তিতে বদলির আদেশ ঠেকিয়ে রয়েছেন বহাল তবিয়তে।

তিনি ২০২১ সালের মাঝামাঝি দুর্গাপুর থানায় যোগদান করে অদ্যাবধি একই থানায় দাপটের সঙ্গে চাকরি করে যাচ্ছেন। তিনি পদবিতে এসআই হলেও নিজেকে ওসির সমতুল্য ভেবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চষে বেড়ান উপজেলাজুড়ে।

দুর্গাপুর থানা এলাকায় বিভিন্ন খাত থেকে বেপরোয়া ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। একই স্থানে দীর্ঘদিন চাকরি করায় এমনটা হচ্ছে বলে অভিযোগ একাধিক ভুক্তভোগীর। তার অবৈধ রোজগারের পেছনে রয়েছে উপজেলার কথিত কিছু ভূঁইফোঁড় সাংবাদিক, দালাল শ্রেণির রাজনৈতিক নেতা। পৌরসভাসহ প্রতিটি ইউনিয়নে তার নিজের তৈরি করা বিশ্বস্ত কিছু সোর্স রয়েছে।

দুর্গাপুর থানার সেকেন্ড অফিসার হিসেবে পরিচিত এসআই আব্দুর রাজ্জাক দীর্ঘ সাড়ে তিন বছরে দুর্গাপুর উপজেলা ও তার পূর্ব কর্মস্থল সীমান্তঘেঁষা বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ থাকা অবস্থায় বেশ কয়েকজন পুকুর খননকারী ও ভেকু দালাল সিন্ডিকেটের মাধ্যমে উপজেলাব্যাপী তিন ফসলি জমিতে অবৈধ পুকুর খননে সহযোগিতা করে কোটি কোটি টাকা আয় করে নিজ এলাকায় বিপুল সম্পদের পাহাড় গড়েছেন তিনি।

এমনকি তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন খাত থেকে বেপরোয়া ঘুস বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। একই স্থানে দীর্ঘদিন চাকরি করায় এমনটা হচ্ছে বলে অভিযোগ একাধিক ভুক্তভোগীর। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ- নিরপরাধীকে অপরাধী সাজানো, ভুল তথ্যে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের হয়রানি, মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলা ইত্যাদি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাদের মাধ্যমে মাদক বেচাকেনা ও সহায়তায় করেন তিনি। টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন পাতানো মাদক উদ্ধারসহ বিস্তর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সহায়তায় এই অপরাধের স্বর্গরাজ্য গড়ে তোলেন এসআই আব্দুর রাজ্জাক।

দুর্গাপুর থানায় কর্মরত নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক এসআই অভিযোগ করে বলেন, আদালত ও দুর্গাপুর থানায় দায়েরকৃত খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর মামলাগুলো তিনি তদন্তের জন্য নিজে নেন। এই মামলাগুলো ঘটনাস্থল পরিদর্শন না করে মোটা অংকের ঘুস নিয়ে ওসি ও পুঠিয়া সার্কেল এএসপিকে বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে সুজিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে রিপোর্ট দিয়ে দিয়ে থাকেন। তার এই অপরাধের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুললে বা অভিযোগ করলে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয় এসআই আব্দুর রাজ্জাক।

দুর্গাপুর থানায় কর্মরত অবস্থায় সাড়ে তিন বছরে তিনবার বদলির আদেশ এলেও বদলি ঠেকাতে শারীরিক অসুস্থতা দেখিয়ে সিনিয়র কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে থেকে যান একই কর্মস্থলে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুর্গাপুর থানায় দাপ্তরিক কাজ করা এক কনস্টেবল বলেন, দুর্গাপুর থানায় আমার যোগদানের প্রায় দুই বছর হতে চলল, আমি যোগদানের পর আব্দুর রাজ্জাক স্যারের দুইবার বদলির আদেশ এসেছিল কিন্তু তিনি জেলা পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের কাছে অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বদলি স্থগিত করে এই থানাতেই আছেন। শুনলাম সম্প্রতি আবারো এসআই আব্দুর রাজ্জাকের বদলির আদেশ হয়েছে; কিন্তু তিনি এবারো বদলি স্থগিতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন।

বর্তমান কর্মস্থলে একই সঙ্গে চাকরিরত একাধিক সহকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এসআই আব্দুর রাজ্জাক দিনে যা আয় করেন বিকাশের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন পরিবার ও নিকটস্থ আত্মীয়স্বজনের কাছে।

সম্প্রতি এসআই আব্দুর রাজ্জাকের বদলির আদেশ এসেছে- এমন খবর শোনা গেলেও বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে দুর্গাপুর থানার ওসি দূরুল হোদা বলেন, বদলি প্রক্রিয়াটা পুলিশের একটা রুটিন কাজ। এটা রুটিন মাফিক হয়ে থাকে। তবে এসআই রাজ্জাকের বদলির বিষয়ে আমার কাছে এ পর্যন্ত কোনো বার্তা আসেনি। পূর্বে বদলি হয়েছে কিনা এ বিষয়টিও আমার জানা নেই।

Jamuna Electronics

Logo

সম্পাদক : সাইফুল আলম

প্রকাশক : সালমা ইসলাম