এবার ‘খাস’ কালেকশনের দায়িত্বে বিএনপি নেতারা
রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৯ পিএম
যে হাটের ইজারা মূল্য ছিল অর্ধকোটি টাকার মতো, সেই হাট এই দুই বছরে ইজারাই হয়নি। সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে আয়ের ক্ষুদ্র অংশ রাজস্ব হিসাবে সরকারি কোষাগারে জমা হলেও বড় অংশই চলে যাচ্ছে সিন্ডিকেটের পেটে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভূমি কর্মকর্তার খাস কালেকশন করার কথা থাকলেও হাটে ‘খাস’ কালেকশন করেছিলেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পটপরিবর্তনের পর স্থানীয় বিএনপি নেতারা কালেকশান করছেন। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই খাস কালেকশনের সময় ভূমি অফিসের কেউ থাকে না। আর কত টাকা জমা হয় তা কেউ জানতে পারে না।
অপরদিকে হাট বাজারের খাস কালেকশান করা ব্যক্তিদের পরিচয়পত্র নাই এবং রশিদ ছাড়াই ইচ্ছেমত কালেকশান করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে চর আবাবিলের ইউনিয়ন তহশিলদার ইকবাল আহাম্মদ বলেন, আপনারা (সাংবাদিক) ইউএনওর কাছে এবং রাজস্ব দপ্তরে খোঁজ নিলেই সব জানতে পারবেন।
বিএনপির কর্মী সুলতান তালুকদার নামের এক কর্মীকে দিয়ে বাজারের ঢুকলেই প্রতি ট্রাক থেকে ৩০-৫০ টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে।
বিশাল হাট বাজার থেকে আয়ের কিছু অংশ নায়েবকে দিয়ে বাকি অংশ তাদের মাঝে ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যায়। এ চিত্র লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের উত্তর চরআবাবিল ইউপির সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী হায়দরগঞ্জ বাজারের।
রায়পুর উপজেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, হায়দরগঞ্জ বাজারসহ অন্য ২৩টি বাজারের সর্বশেষ বাংলা ১৪২৯ সনে (২০২২) ইজারা হয়। সব বাজার থেকে হায়দরগঞ্জ বাজারটি ৩৯ লাখ ৪৬ হাজার ৭৮ টাকা ইজারা মূল্যের বাজারটি ছিল উপজেলার সর্বোচ্চ ইজারার। কিন্তু ২০২২ ও ২০২৩ সালের মতো এ বছরও (২০২৪ সালে) বৃহৎ বাজারটি ইজারা হয়নি। গত ১৩ এপ্রিল (১৪৩০ সনের ৩০ চৈত্র) বাজারগুলোর দরপত্র গ্রহণের শেষ তারিখ ছিল।
ইজারাবিহীন বাজারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নামমাত্র খাস কালেকশন করা হচ্ছিল। যে বাজারের ইজারা মূল্য ছিল অর্ধকোটি টাকা, সেই বাজার ইজারা না হওয়ার পেছনের কারণ অনুসন্ধান করেছেন প্রতিবেদক। কোনো হাট ইজারা না হলে সরকারিভাবে ‘খাস’ কালেকশন করার জন্য খাস আদায় কমিটি করা হয়। সেই কমিটির মাধ্যমেই খাস কালেকশন করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তার মাধ্যমে স্থানীয়দের দিয়ে খাস কালেকশন করে থাকেন।
কিন্তু হায়দরগঞ্জ খাস কালেকশন করছেন বিএনপি নেতা মালেক মো. ইসমাইল, কৃষক দল নেতা জয়নালসহ স্থানীয় বিএনপির আরও ৩০-৩৫ নেতা।
উপজেলা নির্বাহী কার্যালয় সূত্র বলছে, খাস আদায় হওয়ায় অর্ধকোটি টাকার হাটটিতে সরকারের রাজস্ব বছরে গড়ে ১৫ লাখ টাকা ছাড়ায় না। প্রতি রোব ও বুধবার বাংলাবাজার গো-হাট, পুলিশ ফাঁড়ির সামনে পানহাটা ও পরিষদের সামনে পশুপাখির হাট বসে।
মালেক মো. ইসমাইল বলেন, প্রতি হাটবারে তহসিলদারসহ ভূমি অফিসের দু-একজন আসেন। তাদের প্রতি বাজারে জনপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ করে টাকা দেওয়া হয়। আমরা বা স্থানীয় কোনো বিএনপি নেতারা হায়দরগঞ্জের হাট নিয়ে সিন্ডিকেট করছি না।
উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাফর উল্লাহ দুলাল হাওলাদার বলেন, ইউএনও তার নায়েব (চরআবাবিল ইউপি তহসিলদার) স্থানীয় বিএনপির কয়েকজনের সহযোগিতায় হায়দরগঞ্জ বাজারে খাস কালেকশন করছেন। তাদেরকে পরিচয়পত্রও দেওয়া হয়নি। অফিশিয়াল লোকজন (৫০ জন) মেলানো না যাওয়ায় স্থানীয় কয়েকজন সাপোর্ট দিচ্ছেন।
কিন্তু দলীয় নেতাকর্মী কালেকশন করছেন কীভাবে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, নায়েবকে তারা সহযোগিতা দেন।
এ প্রসঙ্গে সমাজ সেবক ও হায়দরগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী তাহসীন হাওলাদার বলেন, বাজারে নামে মাত্র খাস কালেকশন হয়; কিন্তু প্রকৃত অবস্থা পূর্বের মতোই। আমার জিজ্ঞাসা সাব ইজারা থেকে যে অর্ধ কোটি টাকার বেশি উত্তোলিত হয়- তা আসলে কোথায় যায় বা কি কাজে ব্যয় হয়? সরকারি কোষাগারে কত টাকা জমা হয়। তা জানতে পারলেই বুঝবেন।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা (নায়েব) ইকবাল আহাম্মদ চৌধুরী বলেন, ইউএনও স্থানীয় কয়েকজনকে দিয়ে বাজারের খাস কালেকশন করেন। রশিদের মাধ্যমে টাকা আদায় না করা ও যারা কালেকশান করছেন তাদের পরিচয়পত্র না থাকার বিষয়ে ইউএনও সবকিছু বলতে পারবেন।
রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরান খান বলেন, হায়দরগঞ্জ বাজারটিতে খাস কালেকশন হয়। গরুর ও পান বাজারে ৩০-৩৫ জনের সিন্ডিকেটের বিষয়টিও তার জানা ছিল না। কেউ অভিযোগও করেনি। তবে বাজারটি যেন ইজারা হয় এবার সব পক্ষকে নিয়ে বসে সেই ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলাম। খাস কালেকশনে যা রাজস্ব আদায় হয়, তার পুরোটাই সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে।