১৬ বছর শিকলে বাঁধা রতনের জীবন, চিকিৎসার আকুতি পরিবারের
আগৈলঝাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৮ পিএম
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় রতন বাড়ৈর শৈশব কেটেছে দুরন্তপনায়। পরিবারসহ বাড়ির সবাইকে মাতিয়ে রাখতেন। এই দুরান্তপনাই কাল হলো তার জীবনে। আট বছর বয়সে খেলতে গিয়ে গাছের শিকড়ের সঙ্গে লেগে পরে গিয়ে মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পান। সে সময় চিকিৎসা করালে সুস্থ হয়ে ওঠেন। এরপর মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়ে পরতেন। এক সময় রতন মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন বলে জানান স্থানীয়রা।
১৬ বছর ধরে শিকলে বাঁধা অবস্থায় জীবন যাপন করছেন রতন বাড়ৈ। এখন তিনি ২৪ বছরের তরুণ। অসহায় দরিদ্র পরিবার অর্থের অভাবে তার চিকিৎসা করাতে পারছেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের পশ্চিম মোল্লাপাড়া গ্রামের চিত্তরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে রতন বাড়ৈ। দরিদ্র বাবা পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ফেরি করে আইসক্রিম বিক্রেতা চিত্ররঞ্জন বাড়ৈর মৃত্যু হলে অসহায় হয়ে পড়ে ৫ সদস্যের ওই পরিবার।
আর্থিক সংকটের কারণে থেমে যায় মানসিক ভারসাম্যহীন রতনের চিকিৎসা। নিয়মিত সেবা না পেয়ে দিনে দিনে তার পাগলামি বেড়ে যায়। বাড়িঘর ভাঙচুর, আসবাবপত্র তছনছ, মানুষজন দেখলেই তাদের ওপর হামলা করেন, দেন কামড়।
এসব কারণে রতনের মা ও বোনেরা বসতঘরের পেছনে টিনের চালাঘরে তাকে ১৬ বছর ধরে কোমড়ে শিকল বেঁধে তালা দিয়ে রেখেছেন।
কখনো নিজের হাতে খাবার খান, আবার পাগলামি বেড়ে গেলে খাবার ছুড়ে ফেলে দেন। পরিবারের লোকজন মাঝে মধ্যে তাকে গোসল করিয়ে দেন। হামলার ভয়ে বাড়ির লোকজন তার কাছে যেতে ভয় পান। এলাকার লোকজন রতনকে দেখতে এলেও ভয়ে কাছে যান না। এভাবেই ১৬ বছর ধরে শিকলে বাঁধা তার জীবন।
মেজো বোন সীমা বাড়ৈ বলেন, ছোট বেলায় আমার ভাই রতন সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ছিল। আট বছর বয়সে একটি দুর্ঘটনায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। সুচিকিৎসা দিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
প্রতিবেশী কমল বাড়ৈ বলেন, রতনের মা মনিকা বাড়ৈ বর্তমানে অপারেশন হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। আর্থিক সংকটের কারণে রতনের সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। অন্যদিকে তাদের পরিবারের ব্যয়ভার বহন করার মতো কেউ না থাকায় সরকার ও ধনী ব্যক্তিদের সহযোগিতার প্রয়োজন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা
ফারিহা তানজিন সাংবাদিকদের বলেন, জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে রতন বাড়ৈর চিকিৎসার
ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া চিকিৎসার জন্য অর্থের প্রয়োজন হলে তাও দেওয়া হবে।