শত কোটি টাকার সম্পদের মালিক ইউপি সচিব বশিরুল বহিষ্কার
অমিতাভ অপু, ভোলা
প্রকাশ: ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৫ পিএম
ভোলার চরফ্যাশনে টানা ২৮ বছর জিন্নাগর ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (সচিব) থেকে নামে বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক ও কোটিপতি হওয়া আলোচিত বশিরুল ইসলামকে তার নিয়োগকৃত পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকালে জেলা প্রশাসক মো. আজাদ জাহান এই বহিষ্কার আদেশ দেন। শুক্রবার ওই আদেশ কপি পেয়ে চাকরি বাঁচাতে দেনদরবার শুরু করেন ওই সচিব।
জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়, বশিরুল ইসলাম দায়িত্বে থাকা অবস্থায় তদারকি কর্মকর্তাকে অবহিত না করে ভিডব্লিউবি কর্মসূচির চাল বিতরণ করেন, তাকে ৩০ অক্টোবর ওই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বদলি করে লালমোহন উপজেলার চরউমেদ ইউনিয়ন পরিষদে বদলি করা হয়। ৩ নভেম্বরের মধ্যে তাকে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। ওই কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে বশিরুল ইসলাম জিন্নাগড় ইউনিয়ন পরিষদে বহাল তবিয়তে চাল বিতরণসহ নানা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, গেল বছর তাকে বদলি করা হলে তিনি ওই ইউনিয়নে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের জন্য তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবকে দিয়ে সুপারিশ করান জেলা প্রশাসককে। শেখ হাসিনা সরকারের আমলে তিনি নিজেকে আওয়ামী লীগ নেতা দাবি করতেন। সরকার পতনের পর বোল পাল্টে নিজেকে বিএনপি সমর্থিত ও নেতাদের আত্মীয় স্বজন দাবি করতে থাকেন। তার বাধার মুখে ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. হোসেন পরিষদে যেতে পারছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ভোলা জেলা সদরের কাচিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বশিরুল ইসলাম টানা ২৮ বছর চরফ্যাশনের ওই ইউনিয়ন পরিষদেও দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি অনিয়ম দুর্নীতির মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা আয় করে থাকেন। অভিযোগ রয়েছে, চরফ্যাশন পৌর এলাকার ৭নং ওয়ার্ডে প্রায় দেড় একর জমিতে তার তিনটি পাকা ভবন রয়েছে। এর একটি তিনতলা বিশিষ্ট, অপরটি দুই তলা ও একটি একতলা ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার হাসিনার চর, দক্ষিণ আইচা, কুকরিমুকরি ও মজিব নগর ইউনিয়নের চরে নামে বেনামে ৪০ একর খাস জমি নিয়ে নিয়েছেন। বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক বনে যাওয়া এই ইউপি সচিবের কাছে ইউপি চেয়ারম্যানরাও জিম্মি ছিলেন।
এ সব ব্যাপারে বশিরুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে চরফ্যাশনে চাকরি করছেন। তিনি পৌর এলাকার মধ্যে জলাভূমি কিনে তা ভরাট করে বাড়ি বানাচ্ছেন বলে জানান। বিভিন্ন চরে ৪০ একর জমি তার নামে নেই। ওই সব জমি খালাতো ভাই কামাল, মামাত ভাই নিরব, কৃষক রিপনের নামে নেওয়া হয়েছে। জেলা সদরের কাচিয়া এলাকায় বাড়ি ছিল। নদী ভাঙনের পর চরফ্যাশনে পরিবার নিয়ে স্থায়ী হন বলেও জানান। জিন্নাগড় ইউনিয়ন পরিষদে কেউ কাজ করতে চান না। তাই তিনি ওই পরিষদেই দীর্ঘ দিন রয়ে গেছেন বলেও জানান।